নামি নামি করেও জাতীয় দলের হয়ে সাদা পোশাকে মাঠে নামা হচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। পারিবারিক কারণে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট না খেলেই ফিরে এসেছিলেন দেশে। তবে কথা ছিল ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে খেলবেন সাকিব।
সবকিছু এগোচ্ছিলও সেই মোতাবেক। কিন্তু সিরিজ শুরুর পাঁচ দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হন জাতীয় দলের তারকা এই অলরাউন্ডার। যার কারণে সিরিজের প্রথম টেস্টে এক প্রকার অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সাকিবের থাকাটা।
তবে আশার আলো জ্বলে উঠেছে টেস্টের দুদিন আগে। করোনা নেগেটিভ হয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে নামতে প্রস্তুত সাকিব আল হাসান। এখন শুধু ফিটনেস টেস্টে উতরে গেলেই তার আর বাধা থাকছে না সিরিজের প্রথম টেস্টে মাঠে নামায়।
সাকিব নিজেও বেশ মরিয়া চট্টগ্রাম টেস্টে খেলার জন্য। যে কারণে নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ামাত্রই বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনকে জানিয়েছেন খবরটি। বার্তা দিয়েছেন চট্টগ্রাম টেস্টে মাঠে নামতে উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি।
সাকিব মাঠে নামতে এতটাই মরিয়া যে রাত দেড়টায় বোর্ড সভাপতিকে মেসেজ দিয়ে নিজের নেগেটিভ হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। জানিয়েছেন লঙ্কানদের মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত তিনি।
ইতোমধ্যেই বোর্ডের মেডিক্যাল ইউনিট থেকে খেলার সবুজ সংকেত পেয়ে গিয়েছেন সাকিব। কিন্তু তার পরও প্রায় এক মাসের বেশি সময় খেলার বাইরে থাকায় সাকিবকে চট্টগ্রাম টেস্টে জায়গা করে নিতে দিতে হবে ফিটনেস টেস্ট। সেখানে উতরে গেলেই মিলবে একাদশের টিকিট।
তবে বোর্ড সভাপতি ও হেড কোচ ইতোমধ্যে ধরেই রেখেছেন চট্টগ্রাম টেস্টে থাকছেন না সাকিব। তাকে বাদ দিয়েই সাজানো হচ্ছে লঙ্কান বধের পরিকল্পনা।
যেহেতু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকায় একটি টেস্ট রয়েছে এবং এই সিরিজের পরই তিন ফরম্যাটের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছে বাংলাদেশ, সেই সঙ্গে আছে এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সে কারণে সাকিবকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না বোর্ড সেটি স্পষ্ট। সাকিবকে নিয়ে আবেগকে দূরে রেখে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড, এমনটাই জানিয়েছেন খোদ বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
শুক্রবার জাতীয় দলের অনুশীলন দেখতে চট্টগ্রামে গিয়ে সাংবাদিকদের এমনটাই জানান বিসিবি বস।
পাপন বলেন, ‘ও (সাকিব) কালকে রাতে আমাকে জানিয়েছে যে ও কোভিড নেগেটিভ। ও অ্যান্টিজেন টেস্ট করেছিল, অ্যান্টিজেন টেস্ট করে ও নেগেটিভ আসছে। তখন সে পিসিআর টেস্ট করতে দিয়েছে, তখনও যদিও রেজাল্টটা আসেনি, প্রথম যখন কথা হয়। তারপর রাত ১টা দেড়টার দিকে সে আমাকে মেসেজ করে যে পিসিআরও নেগেটিভ। তারপর আমরা বলেছি আমাদের প্রটোকল অনুযায়ী আবার করতে হবে, ও তো করেছে প্রাইভেট একটা জায়গায়। আজকে আবার করা হয়েছে, এটা আমি এখানে আসার পর শুনলাম নেগেটিভ।’
‘ওর সঙ্গে যে কথাটা হয়েছে, ও নেগেটিভ হলে এখানে আসবে এবং এখানে ব্যাপারটা হচ্ছে ও কিন্তু অনুশীলনে নাই, খেলার মধ্যে নাই। প্লাস ওর ফিজিক্যাল কন্ডিশন ও বলেছে ও সুস্থ বোধ করছে। কিন্তু এটা পুরোটাই হচ্ছে মেডিকেল ইস্যু। এখানে মেডিকেল টিমের যারা আছে, ফিটনেস ট্রেনার যারা আছে তারাই ওকে বিচার করবে। সে শুধু কালকে একদিন অনুশীলন করার সুযোগ পাবে। আজকে যদি এখনো আসতে পারতো আজকে অনুশীলনে জয়েন করতে পারতো। আমি শুনেছি সন্ধ্যা ৭টায় আসবে, সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা ও যে কোভিড নেগেটিভ হয়েছে তাতে আমরা খুশি’, তিনি যোগ করেন।
করোনা পরবর্তী শারীরিক দুর্বলতার কথা মাথায় রেখে সাকিবকে চট্টগ্রাম টেস্টে রাখতে চাইছে না টিম ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ড। এই মুহূর্তে দলের সাকিবকে বেশ প্রয়োজন। কিন্তু তারপরও সাকিবের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শারীরিক স্থিতিশীলতা আসার পর তাকে মাঠে নামাতে চায় বোর্ড।
পাপন বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি দলের সঙ্গে ঢুকতে পারবে খেলতে পারবে আমরা সেটাই আশা করছি। হয়তো সে খেলতে পারে আবার নাও খেলতে পারে, মানে এটা আসলে বলাটা মুশকিল। ওর উপর নির্ভর করছে, টিমের উপর নির্ভর করছে এবং মেডিকেল টিমের উপর নির্ভর করছে। এখানে আবেগী হওয়ার কিছু নেই।
টেস্ট না হয়ে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি সিরিজ হলে বিনা বাধায় সাকিবকে খেলার অনুমতি দিত বোর্ড। কিন্তু অধিক পরিশ্রমের দিকটা চিন্তা করে চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিবকে রাখতে চান না পাপন।
বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘করোনা নেগেটিভ হয়ে খেলা এটা যদি ওডিআই হতো আমরা বলতাম খেলো। কিন্তু এটা পাঁচ দিনের খেলা, আমরা চাইব না ওর জন্য বাড়তি চাপ হোক বা ক্ষতির ইস্যু হয়। সে জন্য আমরা সাবধানে যাবো এবং ওর ওপর পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া আছে। ও যদি খেলতে চায়, তাহলে ও খেলবে, ওকে তো না করার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে সাকিবের চট্টগ্রাম টেস্টে খেলা না খেলা পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে শনিবার তার ফিটনেস টেস্টের ফলাফলের পর। ফিটনেস টেস্টের বাধা পেরোলেই সাকিবের আর বাধা থাকবে না চট্টগ্রাম টেস্টে খেলার বিষয়ে।
১৫ মে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গড়াবে সিরিজের প্রথম টেস্টটি। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি হবে ২৩ মে শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।