বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে বুধবার উৎসবমুখর পরিবেশের পাশাপাশি ছিল বেশ কিছু অসংগতি। দৃষ্টিকটু কয়েকটি বিষয় ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট সংস্থার অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার।
বিসিবির ইতিহাসে এবারই প্রথম প্যানেল ছাড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে এই নির্বাচন। নির্বাচনের এক দিন আগে এর ফল চলে আসে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের হাতে। নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে রিটার্নিং অফিসারের দেয়া বেসরকারি ফল মিলে যায় আগের দিন ফাঁস হওয়া ফলের সঙ্গে।
আগের দিন ফাঁস হওয়া ফলে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাটি ছিল না। ভোট গণনা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে যেটি জানানো হয় সেখানে ছিল সবার পাওয়া ভোটের সংখ্যা।
নিউজবাংলার কাছে এমনও অভিযোগ এসেছে যে প্রার্থীদের চাপে পোস্টাল ব্যালটে সিল না দিয়ে, শুধু স্বাক্ষর করে ভোট জমা দেন কাউন্সিলররা, যা কিনা পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর ভোটে পরিণত হয়েছে।
বিষয়টি শুধু অভিযোগের কাতারে আছে। প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় নাজমুল হাসান পাপন জানান, বিসিবিতে এমন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তিনি আগে কখনও দেখেননি।
আরেকটি দৃষ্টিকটু বিষয় ছিল অতি উৎসাহী সমর্থকদের ভিড়। বুধবার সকাল থেকেই সমর্থকদের স্লোগান ও প্রচারণায় উত্তপ্ত ছিল বিসিবি প্রাঙ্গণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যা উঠতে শুরু করে তুঙ্গে। এটি অতি স্বাভাবিক দৃশ্য।
তবে একটা সময় শুরু হয় কয়েকজন প্রার্থীর সমর্থকদের বিজয়োল্লাস। ফল প্রকাশে তখনও ঢের দেরি। নির্বাচনের ভোটগ্রহণও শেষ হয়নি।
ফল প্রকাশের আগেই জয়োল্লাস করাটা চোখে পড়ার মতোই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমর্থক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাই টাকা কার না দরকার হয় বলেন? যারা এখানে আসছে তার অধিকাংশই চুক্তিভিত্তিক। তাদের সঙ্গে চুক্তিটা হয়েছে এভাবে- সারা দিন থাকা লাগবে বিনিময়ে ৫০০-১০০০ টাকা পাবে।’
সমর্থকদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করার পরও তারা বলতে পারেননি কোন প্রার্থীকে তারা সমর্থন জানাতে এসেছেন। অনেকে বলেছেন ভুল নাম। কেউ সঠিক নাম বললেও কোন পদে নির্বাচন করছেন প্রার্থী, সেটি সম্পর্কে তারা অবগত নন।
নির্বাচনের আগেই শেখ জামাল ক্রিকেটার্স ও সূর্য তরুণসহ আরও কয়েকটি ক্লাবের পক্ষ থেকে নাজমুল হাসান পাপনকে সভাপতি পদে বিজয়ী উল্লেখ করে অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়।
ফল ঘোষণার আগেই নাজমুল হাসান পাপনের জয়ে শুভেচ্ছা জানায় শেখ জামাল ক্রিকেটার্স ও সূর্য তরুণ ক্লাব। ছবি: নিউজবাংলা
বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার যখন দুই ঘণ্টা বাকি, সে সময় সাংবাদিকদের কাছে নিজের পরাজয়ের খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন রাজশাহী বিভাগ থেকে নির্বাচন করা খালেদ মাসুদ পাইলট।সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান, তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুল আলম স্বপন জয়ী হয়েছেন। আর পাইলট পেয়েছেন নিজের ভোটসহ দুটি মাত্র ভোট।
গত মেয়াদে ক্রিকেটের আম্পায়ার ও আম্পায়ারিং নিয়ে কাজ করার দায়িত্বভার ছিল স্বপনের ওপর। তার সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পারিং বিতর্ক পিছু হটেনি।
ক্যাটাগরি-৩-এ নির্বাচন করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও খালেদ মাহমুদ সুজন। ফাহিমকে ৩৭-৩ ব্যবধানে হারিয়ে পরিচালকের আসনে বসতে যাচ্ছেন সুজন৷
গত মেয়াদে দেশের ক্রিকেটে সুজনের অবদান ছিল চোখে পড়ার মতো। জাতীয় দলের পাইপলাইনে খেলোয়াড় আসা, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়, ওয়ানডে ক্রিকেটে উন্নতির সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে ছিল সিরিজ জয়।তবে তার আমলে ঘরোয়া ক্রিকেট ও টেস্টে বাংলাদেশ জাতীয় দলের দশা রয়ে গেছে আগের মতোই। লম্বা সময় পেলেও উন্নতির ছাপ পড়েনি এই দুটি বিভাগে।
সুজন ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে যেমন হয়েছেন প্রশংসিত, মাঠের বাইরে তার পারফরম্যান্স তেমনই সমালোচিত।
দেশের বাইরে ক্যাসিনো খেলা, ফেসবুক লাইভে এসে ধূমপান করা, ঘরোয়া লিগে প্রতিপক্ষের ক্রিকেটারের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ। তারপরও কোনো এক অজানা কারণে কাউন্সিলরদের কাছে আস্থার আরেক নাম বনে গেছেন সুজন।
নিজেরটি সহ মাত্র তিনটি ভোট জুটেছে সুজনের প্রতিদ্বন্দ্বী ফাহিমের কপালে। সাকিব-তামিম-মুশফিকদের মতো তারকা ক্রিকেটারদের বানানোর যিনি কারিগর, তার ওপরই যেন ভরসা ছিল না কাউন্সিলরদের৷