কিরগিজস্তান সফরে জাতীয় ফুটবল দলের জন্য যত আয়োজন সবই সাফের প্রস্তুতি হিসেবে। ফিলিস্তিন-কিরগিজস্তানদের মতো কঠিন প্রতিপক্ষ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত টুর্নামেন্টের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা ছিল বাংলাদেশের হেড কোচ জেমি ডের লক্ষ্য।আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে নিজেদের কৌশল পরীক্ষা ও জামালদের ঝালাই করে নেয়া ছিল উদ্দেশ্য। সফরে উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে জেমির?
প্রস্তুতিমূলক সফরের প্রস্তুতি হিসেবে পছন্দের ‘সেরা স্কোয়াড’ নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর বিশকেকে পৌঁছান জেমি ডে। পরদিন থেকে অনুশীলন শুরু করে বাংলাদেশ। অন্তত ৬-৭ দিনের প্রস্তুতির চাহিদা ছিল কোচের। সেটা পূর্ণ হয়েছে।
ঢাকঢোল পিটিয়ে ফিলিস্তিন ম্যাচে নতুন কৌশলের জানান দেন বাংলাদেশ হেড কোচ। সাধারণত ৪-২-৩-১ ফরমেশনে দলকে সাজান জেমি। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ৩-২-৪-১ ফরমেশনে জামাল ভূঁইয়াদের খেলান এই ইংলিশ কোচ।
প্রস্তুতি সফরে কৌশল নিয়ে কোচ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে, তার কৌশলে মন ভরল না ফুটবল সমর্থকদের। ফিলিস্তিনের কাছে নিজেদের নয়া কৌশলে পরাস্ত হয়ে ম্যাচ ২-০ গোলে হেরে বসে বাংলাদেশ।
এর থেকেও ভয়ংকর যেটা ছিল তা হলো এই নয়া কৌশলে গোলে একটা শটও নিতে পারেনি জেমির আক্রমণভাগ।
ম্যাচে অবশ্য সুযোগ পান নতুন প্রবাসী রাহবার খান। মাত্র ১৩ মিনিটেই ম্যাচে নিজের প্রতিভা দেখান রাহবার। প্রমাণ করেন জেমির পছন্দে ভুল ছিল না।
পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক কিরগিজস্তান। কঠিন প্রতিপক্ষ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ থেকে ৮৭ ধাপ উপরে থাকা দলটার বিপক্ষে আরেকটা বাজি খেললেন জেমি। এবার রক্ষণে অদল-বদল করলেন। তারিক কাজি ও বিশ্বনাথ ঘোষের পজিশন বদল করে ব্যর্থ হতেও খুব একটা সময় নেয়নি দল।
এবার জুটল ৪-১ গোলের হার। এই ম্যাচে মাত্র একটি শট নিতে পারে বাংলাদেশ দল। ওই শটেই সান্ত্বনাসূচক গোলটি আসে।
ব্যবধানটা কি কমানো যেত? জেমির জবাব, ‘আমরা আগে থেকেই জানতাম দুটি দল অনেক শক্তিশালী। আমাদের খেলোয়াড়রাও খুব ভালো ডিফেন্ড করেছে। এখান থেকে আমরা অনেক অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা নিয়েছি।’
দুই ম্যাচের শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সঙ্গেও হেরে বসে বাংলাদেশ। এবার টান টান উত্তেজনা।৩-২ ব্যবধানের হারে যদি কোনো ইতিবাচক দিক ঘটে সেটা ছিল সুমন রেজার জোড়া গোল। যে ফুটবলারকে সফরের চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা দেননি জেমি, সেই সুমন রেজা বাজিমাত করেন শেষ মুহূর্তে দলে ডাক পেয়ে।
টানা তিন দিনে দুই ম্যাচ হেরে এবার যুব দলটার বিপক্ষে নিয়মিত একাদশকে বিশ্রামে রেখে বেঞ্চের শক্তি পরখ করেন জেমি। এই জায়গায় তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ কম। প্রস্তুতি সফরে সবাইকে ঝালিয়ে নেয়াটাই মূলত কোচের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
শেষ ম্যাচে হারের পর হতাশা ঝড়েছে জেমির কণ্ঠে। বলেন, ‘শেষ ম্যাচের খেলাটা অনেক টাফ ছিল। খেলোয়াড়দের কাছ আরও ভালো পারফরম্যান্স আশা করেছি। যদিও আগের দুইটা ম্যাচে অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল ও আমরা আগে থেকেই সেটা জানতাম। তবে শেষ ম্যাচের খেলায় আমি অনেক হতাশ।’
কোচের পাশাপাশি পুরো সিরিজ জুড়ে যে ভুলত্রুটি হয়েছে তা সংশোধন করে দেশে ফেরার অঙ্গীকার জানান ফুটবলাররাও।
প্রস্তুতি সফর বলেই হয়তো ‘সাত খুন মাফ’। কোচের দিকে আঙুলও তুলছেন না কেউ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপই আসল পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে জেমি ডের সামনে।সেই পরীক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে হয়তো বাংলাদেশ থেকে বিদায়ও নিতে হতে পারে এই ইংলিশ ট্যাকটিশিয়ানকে।
তার এই অগ্নি পরীক্ষাটা শুরু হবে অক্টোবরের এক তারিখ থাকে। মালদ্বীপে শুরু হচ্ছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর।কিরগিজস্তান সফরের ‘শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা’ বিবেচনায় সাফে সাফল্য এনে দিতে পারবেন কিনা জেমি সেটার জবাব পাওয়া যাবে মাঠেই।