করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্রিকেট ফেরাতে নতুন এক পরিবেশের সঙ্গে ক্রিকেট বিশ্ব পরিচিত হয়। নতুন সেই পরিবেশের নাম জৈব সুরক্ষা বলয় বা বায়ো বাবল।
কোনো সিরিজ শুরুর আগে ক্রিকেটার এবং সিরিজ-সংশ্লিষ্ট সবার করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ এলে সিরিজ চলার সময় তাদের সবাইকে জনসাধারণের সংস্পর্শ থেকে দূরে নিরাপদ পরিবেশে রাখার জন্য তৈরি হয় বায়ো বাবল।
এতে শুধু যারা নেগেটিভ ও নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন শেষ করেছেন, তাদের থাকার সুযোগ দেয়া হয়।
করোনা বিরতি কাটিয়ে বায়ো বাবলে অনুষ্ঠিত হয়েছে সব কয়টি আন্তর্জাতিক সিরিজ। একই পরিবেশে হয়েছে বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টও।
করোনার ভেতর ঘরের মাঠে ও বিদেশে বেশ কিছু সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সব সিরিজে ম্যাচসংশ্লিষ্ট সবাইকে থাকতে হয়েছে বায়ো বাবলে।
গত অস্ট্রেলিয়া সিরিজে কঠোরভাবে মানা হয়েছে এই নিয়ম। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে যেন ভোল পালটে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজকে সামনে রেখে গত ২৪ আগস্ট বায়ো বাবলে প্রবেশ করেছে দুই দল। অনুশীলনও চলছে বায়ো বাবলের ভেতরে থেকে। তার ভেতরও প্রচুর ফাঁকফোকর বের হচ্ছে নিয়মিত।
বায়ো বাবলে থাকার কারণে স্বভাবতই খেলোয়াড়দের আশপাশে যারা থাকবেন, তাদের থাকতে হয় বলয়ের ভেতর। বাংলাদেশের অনুশীলন চলার সময় বেশ কিছু অসংগতি খুঁজে পাওয়া গেছে।
যেহেতু বায়ো বাবলে রয়েছেন সবাই, সেই হিসেবে অনুশীলনের সময় বন্ধ থাকার কথা স্টেডিয়ামের সব দোকান। কেননা দোকানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ বায়ো বাবলে নেই।অনুশীলনের সময় দেখা গেছে, খোলা রয়েছে স্টেডিয়ামের দোকানপাট। খেলোয়াড়রা সেই দোকানের মাঝের রাস্তা দিয়েই মূল মাঠ থেকে যাচ্ছেন ইনডোরে অনুশীলন করতে।
একই সঙ্গে তারা যখন যাতায়াত করেন তখন আশপাশে থাকে বিভিন্ন মানুষের উপস্থিতি। যাদের থেকে সম্ভাবনা থাকে করোনা ছড়ানোর। শুধু ক্রিকেটারদের যাতায়াতের সময় বাধা দেয়া হয় সাধারণ মানুষকে। এ ছাড়া বাকি সময় সেখানটা সরব থাকে মানুষের উপস্থিতিতে।
ক্রিকেটারদের যাওয়া-আসার পথে উপস্থিত সাধারণ দর্শক। ছবি: সাইফুল ইসলাম
বায়ো বাবলের শর্ত অনুযায়ী সেখানে বাইরের কোনো মানুষের থাকার কথা নয়। এমনটা জানানো হয়েছে বোর্ডের পক্ষ থেকে।
শুধু তা-ই নয়, রোববার বাংলাদেশের অনুশীলনের সময় বায়ো বাবলের অন্তর্ভুক্ত জোনে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিসিবির অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান।
এত কিছুর পরও বায়ো বাবলের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করছে বিসিবি। বিসিবি চিকিৎসক মানজুর হোসেইনের দাবি বায়ো বাবল নষ্ট হবে, এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই।নিউজবাংলাকে মানজুর বলেন, ‘খেলোয়াড়রা যখন জায়গাটা অতিক্রম করে তখন পুরো জায়গাটা আইসোলেটেড থাকে। তখন সেখানে কেউ আসতে পারবে না। খেলোয়াড়রা যখন থাকে তখন সেই জায়গাটা বায়ো বাবলের অন্তর্গত, তারা না থাকলে আর সেটি বায়ো বাবলের অন্তর্গত হবে না।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মাঝে মধ্যে হয়ে পড়েন অসতর্ক। ছবি: সাইফুল ইসলাম
খেলোয়াড়দের প্রটোকল দেয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও ক্রিকেটারদের আশপাশেই থাকেন এবং প্রায়ই তাদের মুখে থাকে না মাস্ক। এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মানজুর সেটিও উড়িয়ে দেন। খেলোয়াড়দের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা যান না বলে দাবি করেন বিসিবির এই চিকিৎসক।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা) বায়ো বাবলের অন্তর্গত না। আপনি কি তাদের দেখেছেন খেলোয়াড়দের কাছে যেতে? তারা তো যায় না কখনোই।’
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক নিউজিল্যান্ডের বায়ো বাবল নিয়ে গ্রিন লাইট দেয়ার পরই সিরিজ মাঠে গড়াচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে বোর্ডের এমন নির্বিকার ভূমিকা চোখে লাগাটা অস্বাভাবিক নয়।