বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গরুর চারণভূমিতে ৩১ লাখ টাকার সেতু

  •    
  • ২৪ আগস্ট, ২০২১ ১৩:২৯

‘তখন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল সেতুটি জনগুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু আবাসন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট লোকজন, প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাজনীতিকদের মাধ্যমে সেতুটি অনুমোদন পায়। আবাসন প্রকল্পটি তখনই চালুর কথা ছিল।’

ময়মনসিংহ নগরীর ঢাকা-ফুলবাড়িয়া বাইপাস সড়কের শিকারিকান্দা এলাকায় ফাঁকা স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি কংক্রিটের সেতু। আবাসন প্রকল্পের সংযোগ সড়কে সেতুটি নির্মাণ দেখানো হলেও সেখানে নেই কোনো সংযোগ সড়ক।

একটি নালার ওপর নির্মিত সেতু দিয়ে নিয়মিত গরু চড়াতে নিয়ে যান স্থানীয়রা। তারা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে সেতুটি নির্মাণ করে শুধু সরকারি টাকা অপচয় করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিও তুলেছেন তারা।

এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি সদর উপজেলার বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। তবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বলছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে সদর উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট কর্মসূচির আওতায় ৩৯ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৪৮২ টাকা। অথচ সেতুটি মানুষের কাজেই আসছে না। তবে অনেকে সবুজ ঘাসের প্রান্তরে গরু-ছাগল চড়াতে নিয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শতাব্দী নামের একটি আবাসন প্রকল্পের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হলেও পরে সেই আবাসন প্রকল্পটি আর হয়নি। সেই আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা ছিল। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের মেসার্স দুর্গা এন্টারপ্রাইজ এ সেতু নির্মাণ করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির পর আর কোনো সড়ক নেই। সেতু পেরোলেই শুধু ঘাস আর ঘাস। ছোট্ট একটি নালার ওপর নির্মিত এই সেতুটির রেলিংয়ের কিছু অংশ এরই মধ্যে খসে পড়তেও শুরু করেছে।

স্থানীয় আফজাল নামের একজন বলেন, সেতুর পরই বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে ঘাস আর ঘাস। এ জন্য যাদের গরু আছে তারা খুশি। তারা নিয়মিত সেতুটি দিয়ে গরু পারাপার করেন। যে সেতু সবার উপকারে আসবে না এমন সেতু কেন নির্মাণ করা হলো? সেতুটি নির্মাণ করে সরকারি টাকা অপচয় করা হয়েছে।

গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ছামাদ মিয়া। সেতু পর্যন্ত আসতেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‌‘আমার ৮টা গরু আছে। হগল দিন (প্রতিদিন) এই সেতু দিয়া পার হই। গরুরে ঘাস খাওয়াইয়্যা এহান দিয়া লয়্যা আহি (আসি)। তয়, এমন সেতু কহনো (কখনো) দেহি নাই।‘

ষাটোর্ধ্ব হাশেম আলী ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, সেতু নির্মাণে যেই টাকাগুলো খরচ হলো, এটির দায়ভার কে নিবে? নিশ্চয় পরিকল্পনার অভাব ছিল। শুধু শুধু টাকাগুলো অপচয় করা হলো।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, জনগণের টাকা জনগণের কোনো কাজে লাগেনি। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে প্রায়ই অকাজে সরকারের লাখো কোটি টাকা অপচয় হয়। এগুলো প্রকাশ হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তাই বারবার এসব কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। যেভাবেই কাজটি হোক, তদন্ত সাপেক্ষে অপচয়কারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হোক।

জেলা নাগরিক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ এইচ এম খালেকুজ্জামান বলেন, সরকার তো ব্যবসা করছে না। উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছে। যারা এ ধরনের খামখেয়ালিপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, সবারই আইন অনুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুল হক ফারুক রেজার সময়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। এ জন্য সেতু নির্মাণ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।

তৎকালীন সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মমিনুর রহমান ছিলেন সেতুটি নির্মাণকাজের তদারকিতে। তিনি বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুটি আমার সময়েই নির্মিত হয়েছিল। তবে আমরা সেতুটির প্রস্তাব পাঠাইনি। শুধু বাস্তবায়ন করেছি।’

কাজে আসবে না জেনেও কেন এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তখন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল সেতুটি জনগুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু আবাসন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট লোকজন, প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাজনীতিকদের মাধ্যমে সেতুটি অনুমোদন পায়। আবাসন প্রকল্পটি তখনই চালুর কথা ছিল। কিন্তু পরে আবাসন প্রকল্পটি হয়নি।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন স্থানে সেতু নির্মাণের বিষয়টি এরই মধ্যে শুনেছি। আমি দূরে থাকায় বিস্তারিত এখনও জানি না। তবে দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর