ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নামে মধ্যরাতে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বাসা থেকে আধা বোতল মদ ও গাঁজা উদ্ধার এবং তাকে সাজা দেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি সাজানো ছিল বলে উঠে এসেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে।
২০২০ সালের মার্চ মাসের আলোচিত ওই ঘটনায় কুড়িগ্রামের তৎকালীন সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে করা বিভাগীয় মামলার তদন্তে ক্ষমতার অপব্যবহার করার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে করা বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবদেনটি ২২ পৃষ্ঠার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১৩ মার্চ রাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বাসা থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের অভিযোগে শাস্তি দেয়া হলেও তার বাসায় কোনো মাদকই পাওয়া যায়নি। বাসায় কোনো তল্লাশিই চালানো হয়নি, এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বলা হলেও সেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তাই ছিলেন না।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা বলে সাংবাদিক আরিফুলকে তার বাসা থেকে বের করে নিয়ে আসেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সরকারী কমিশনার ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন।
ওই ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে সাংবাদিক আরিফুলকে মুক্তি দেয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। বিভাগীয় মামলার তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় দুই বছরের জন্য তার ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়েছে। সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিনকে পদাবনতি দেয়া হয়।
আর রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও রিন্টু বিকাশ চাকমার বিষয়টির এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তবে অন্যদের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে এনডিসি এস এম রাহাতুল ইসলামকে বরিশাল ডিসি অফিসে পোস্টিং দেয়া হয়েছে।
রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার তদন্তে গঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের কমিটির প্রধান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আমেনা বেগম। অপর দুই সদস্য হলেন উপসচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও উপসচিব পি কে এম এনামুল করিম।
এই কমিটি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগে।
প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়েছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ, আইনকানুন ও বিধিবিধান পর্যালোচনায় তদন্ত বোর্ড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে কুড়িগ্রামের সাবেক সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা-২০১৮-এর-৩ (খ) বিধি মোতাবেক আনীত অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি মামলায় সরকারপক্ষের ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। মামলায় একমাত্র বেসরকারি সাক্ষী সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান।
তদন্ত বোর্ডের জিজ্ঞাসায় রিন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, ২০২০ সালের ১৩ মার্চ শুক্রবার রাত আনুমানিক ১২টায় তিনি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী ও আরডিসি নাজিম উদ্দিনের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের সরকারী কমিশনার ও এনডিসি এস এম রাহাতুল ইসলাম, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বের হন।
রিন্টু বলেন, অভিযানে বের হওয়ার আগে আরডিসি নাজিমের নির্দেশেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের পেশকার সাইফুল ইসলামকে দিয়ে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের পেশকার জাহিদুল ইসলামকে ফোন করা হয়। তখন জাহিদুল জানান তিনি রংপুরে আছেন। অভিযানে আরিফুলের বাসায় তল্লাশি হতে দেখেননি বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছেন রিন্টু।
তিনি জানান, অভিযানের সময় সাংবাদিক আরিফুলের বাসায় প্রবেশ করেন আরডিসি নাজিম উদ্দিন। ওই সময় তিনি (রিন্টু) বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। নাজিম উদ্দিনের নির্দেশে সাংবাদিক আরিফুলকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ডিসি অফিসে নেয়া হয়। রাত ১টা ২০ মিনিটে আরডিসি নাজিম তাকে (রিন্টু) ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা পরোয়ানায় সই করতে বলেন।
রিন্টু বলেছেন, তিনি শুধু একজন প্রত্যক্ষকারী হিসেবে উপস্থিত থাকায় এবং প্রসিকিউশন কর্তৃপক্ষ অনুপস্থিত ছিল বিধায় আরডিসি নাজিমকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনুরোধ করেন। কিন্তু আরডিসি নাজিমের প্রচণ্ড চাপাচাপিতে মানসিকভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে একপর্যায়ে সাজা পরোয়ানায় সই করতে বাধ্য হন। রাত ১টা ৩০ মিনিটে নাজিম উদ্দিন জোরপূর্বক মোবাইল কোর্টের সাজা পরোয়ানায় তার (রিন্টু) সই করিয়ে নেন। এর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জানতেন না যে, মোবাইল কোর্টের নথিপত্রে তাকেই সই করতে হবে।
কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন ও তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
তদন্ত বোর্ডকে রিন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উদ্দেশ্যে গেলে অবশ্যই বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে যেতেন। মোবাইল কোর্টের রিকুইজিশন ফরমে তিনি সই করলেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় ও ফোর্সের সংখ্যা নির্ধারণ করেন আরডিসি নাজিম উদ্দিন। ফলে সব ঘটনাপ্রবাহে তার কোনো হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টুর দাবি, নাজিম উদ্দিন তৎকালীন জেলা প্রশাসন ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েছিলেন ভেবে তিনি তার নির্দেশ পালন করেন। মোবাইল কোর্টের নথিতে উল্লিখিত দুজন সাক্ষীকে তিনি চেনেন না, এমনকি দেখেননি।
রিন্টু বলেন, অভিযানের ১৮ ঘণ্টা পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম প্রসিকিউশন রিপোর্টে সই করেন। এর দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও অভিযানটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এ ঘটনায় সরকারপক্ষের আরেক সাক্ষী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বেঞ্চ সহকারী সাইফুল ইসলাম।
সাইফুল ইসলাম তদন্ত বোর্ডকে বলেন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন তাকে ডেকে বলেন, রাতে মোবাইল কোর্ট করা হবে। এ জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার স্বাক্ষরে পুলিশ ও আনসার চেয়ে পত্র দিতে নির্দেশ দেন নাজিম উদ্দিন। এ সময় আরডিসি নাজিমের সঙ্গে সহকারী কমিশনার রাহাতুল ইসলাম ও রিন্টু বিকাশ চাকমাও বসা ছিলেন।
সাইফুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তাদের আরও বলেন, অভিযানের সময় নাজিম উদ্দিন সাংবাদিকের ঘরে প্রবেশ করেন এবং রিন্টু বিকাশ চাকমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। অল্পক্ষণের মধ্যে নাজিম উদ্দিন আরিফুলকে নিয়ে বের হয়ে আসেন। কিন্তু ওখানে কোনো তল্লাশি হয়নি এবং কোনো জব্দ তালিকাও করা হয়নি।
সাইফুল ইসলাম জবানবন্দিতে বলেন, সাংবাদিক আরিফুলকে নিয়ে আরডিসি নাজিম ডিসি অফিসের দোতলায় চলে যান। তিনি নিচতলার কোর্ট রুম খুলে বাকি লোকদের নিয়ে বসেন। কিছুক্ষণ পর আরডিসি নাজিম তাকে একটি প্লাস্টিকের বোতল ও কাগজে প্যাঁচানো কিছু জিনিস দিয়ে সাংবাদিক আরিফুলের কাছ থেকে মদ ও গাঁজা উদ্ধার হয়েছে মর্মে জব্দ তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দেন।
নাজিম উদ্দিনের নির্দেশে তিনি জব্দ তালিকা ও সাজা পরোয়ানা প্রস্তুত করেন। এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা সাজা পরোয়ানায় সই করেন। রাতে নাজিম উদ্দিনের নির্দেশে তিনি আসামিকে জেলখানায় নিয়ে যান। পরদিন ২০২০ সালের ১৪ মার্চ নাজিম উদ্দিন দুজন লোককে তার কাছে পাঠান জব্দ তালিকায় সই নেয়ার জন্য। একই দিনে আরডিসি নাজিম উদ্দিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শককে ডেকে এনে প্রসিকিউশন রিপোর্টে সই নেন।
বিভাগী মামলার আরেক সাক্ষী কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলার জবানবন্দিও নিয়েছে তদন্তকারী দল।
সুজাউদ্দৌলা তার জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার রাতে এনডিসি রাহাতুল ইসলাম মোবাইল ফোনে তাকে জানান, রাতেই মাদকবিরোধী একটি বিশেষ টাস্কফোর্স পরিচালিত হবে এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বিষয়ে অবগত আছেন। পরবর্তী সময়ে রাহাতুল ইসলামের মোবাইল ফোন থেকে আসা এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একজনকে এক বছরের সাজা দেয়া হয়েছে।
সুজাউদ্দৌলা বলেন, ‘রাহাতুল ইসলামের ফোন ও এসএমএস দেখে মনে হয়, এনডিসি রাহাতুল ইসলামই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। কিন্তু পরদিন অফিসে এসে জানতে পারি, রিন্টু বিকাশ চাকমা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছিলেন।’
তখন তিনি নথিটি দেখছিলেন এবং তখন পর্যন্ত সাজা পরোয়ানা ছাড়া নথিতে আর কিছু ছিল না বলে দাবি করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজাউদ্দৌলা।
কুড়িগ্রাম জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সাবেক পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম তদন্ত কমিটির কাছে তার জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ২০২০ সালের ১৩ মার্চ রাতের অভিযানটি তার দপ্তরের রিকুইজিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হয়নি। ১৪ মার্চ সকাল ১০টা ৪৯ মিনিটে পেশকার সাইফুল ইসলাম ও দুপুর ২টা ৫৩ মিনিটে এনডিসি রাহাতুল ইসলাম তাকে বারবার আসতে বললে বিকেল ৪টা ১১ মিনিটে তিনি কুড়িগ্রাম ডিসি অফিসে আসেন। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন ও এনডিসি রাহাতুল ইসলাম তাকে জানান যে, গত রাতে একটি মোবাইল কোর্ট হয়েছে এবং আসামিকে রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তাদের প্রস্তুতকৃত জব্দ তালিকায় সই করতে বললে তিনিসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো স্টাফ অংশগ্রহণ করেননি বলে প্রসিকিউশন রিপোর্টে সই করতে অপারগতা জানান। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজাউদ্দৌলা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন তাকে ধমক দিয়ে প্রসিকিউশন রিপোর্ট ও জব্দ তালিকায় সই করতে বলেন। তাদের দ্বারা বাধ্য হয়ে তিনি একপর্যায়ে জব্দ তালিকায় সই করেন এবং প্রসিকিউশন রিপোর্ট দাখিল করেন।
এই তদন্ত কমিটির কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন ডিসি সুলতানা পারভীনও। এতে তিনি দাবি করেন, সেই রাতের মোবাইল কোর্টটি নির্ধারিত শিডিউলবহির্ভূত ছিল। এই কোর্ট পরিচালনার আগে তার অনুমতি নেয়া হয়নি। কুড়িগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এই মোবাইল পরিচালনা করেন। অপর দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন ও এস এম রাহাতুল ইসলাম এই মোবাইল কোর্টে উপস্থিতি ছিলেন মর্মে মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ মারফত জানতে পারেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী তিন কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব আমেনা বেগম, উপসচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও উপসচিব পি কে এম এনামুল করিম তাদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করেছেন।
এতে তারা বলেছেন, ‘মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর ৭(১) ও ৭(২) ধারার বিধানমতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার সময় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গৃহীত হওয়ার পরপরই মোবাইল কোর্ট পরিচালনকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট লিখিত অভিযোগ গঠন করে আসামিকে পড়ে শোনাবেন এবং অভিযোগ স্বীকার করেন কি না, তা জানতে চাইবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি তার অভিযোগ স্বীকার করলে তার স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করে তাতে তার স্বাক্ষর নিয়ে দুজন উপস্থিত সাক্ষীর স্বাক্ষর গ্রহণপূর্বক যথোপযুক্ত দণ্ড প্রদান করবেন ও উক্ত আদেশে সই করবেন।
‘কিন্তু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা পরিচালিত মোবাইল কোর্টে আসামির অপরাধ তাৎক্ষণিক আমলে গ্রহণ না করে তাকে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে লিখিত কোনো অভিযোগ গঠন না করে, আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে এবং উপস্থিত কোনো সাক্ষীর স্বাক্ষর না নিয়ে আসামিকে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে, যা মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর ৬(১), ৭(১) ও ৭(২) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তা ছাড়া প্রসিকিউশন পক্ষের অনুপস্থিতিতে আসামির বাসায় কোনোরূপ তল্লাশি পরিচালনা কিংবা জব্দ তালিকা প্রস্তুত না করে আসামির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ গঠন ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কিসের ভিত্তিতে রিন্টু বিকাশ চাকমা সাজা পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেছেন, তদন্ত বোর্ডের এ প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।’
সাক্ষ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা রিন্টু বিকাশ চাকমা সঙ্গীয় অপর দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ধৃত ও দণ্ডিত আসামি আরিফুল ইসলামকে ঘটনার রাতে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে স্থানান্তর করতে যান এবং জেল সুপারের অফিস কক্ষে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারী ও মামলার সাক্ষী সাইফুল ইসলাম, সাফিয়ার রহমান ও মোবাইল কার্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার সাক্ষ্য দ্বারা বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত।
‘কারাগার একটি নিরাপত্তাবেষ্টিত সংরক্ষিত এলাকা এবং অনুমোদিত ব্যতীত মধ্যরাতে এখানে অন্য কারো প্রবেশের সুযোগ নেই। অভিযুক্ত কর্মকর্তার সঙ্গীয় নাজিম উদ্দিন জেল সুপারের দায়িত্বে ছিলেন বিধায় তার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মধ্যরাতে লোকজনসহ কারাগারে প্রবেশ করেছেন এবং অবস্থান করেছেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উপরিউক্ত সাক্ষ্য পর্যালোচনা ও সরকারপক্ষের দাখিলকৃত দালিলিক প্রমাণ বিশ্লেষণে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা রিন্টু বিকাশ চাকমা কর্তৃক পরিচালিত মোবাইল কোর্টে তিনি ছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের আরও দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন ও এস এম রাহাতুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
‘আসামির বাসায় কোনো তল্লাশি না হওয়া সত্ত্বেও এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো প্রতিনিধি (প্রসিকিউশন পক্ষ) উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও আধা বোতল মদ ও দেড় শ গ্রাম গাঁজা উদ্ধারের দাবি করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু কুমার চাকমা কর্তৃক পরিচালিত মোবাইল কোর্ট।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘এতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ১০(১) চ ধারার অপরাধে আসামিকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। যা রিন্টু বিকাশ চাকমা ও তার সঙ্গীয় ম্যাজিস্ট্রেটগণের ক্ষমতার অপব্যবহার। এর ফলে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে তদন্ত বোর্ডের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে।’