বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লিজার ‘মেহমানখানা’র খাবারে বিষ মেশানোর হুমকি!

  •    
  • ১৮ আগস্ট, ২০২১ ২১:০৪

অভিযোগ উঠেছে, আলোচিত ‘মেহমানখানা’ লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ৪ নম্বর রোড থেকে সরাতে ওই সড়কেরই একটি বহুতল ভবনের বাসিন্দা মির্জা শাহরিয়ার আলম মিঠু খাবারে বিষ মেশানোর প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে চারটি সিসি ক্যামেরা বসিয়ে রান্নাবান্না সারছেন উদ্যোক্তারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিঠু।

করোনা মহামারিতে হতদরিদ্র মানুষকে একবেলা খাবার বিতরণ করে আলোচনায় এসেছে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকার ‘মেহমানখানা’।

অভিযোগ উঠেছে, আলোচিত এই মেহমানখানা লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ৪ নম্বর রোড থেকে সরিয়ে নিতে ওই রোডেরই এক বহুতল ভবনের বাসিন্দা মির্জা শাহরিয়ার আলম মিঠু খাবারে বিষ মেশানোর প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে চারটি সিসি ক্যামেরা বসিয়ে রান্নাবান্না সারছেন উদ্যোক্তারা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মির্জা শাহরিয়ার আলম মিঠু। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টন বলছেন, এই মিঠু তার অফিসে গিয়েও মেহমানখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে তিনি সে অভিযোগকে গুরুত্ব দেননি হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের একাবেলা খাবারের কথা চিন্তা করে।

১১ তরুণ-তরুণীর উদ্যোগে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ৪ নম্বর রোডে যাত্রা শুরু করে এই মেহমানখানা। তারপর ভালোভাবেই চলছিল রিকশাচালক, পথশিশুসহ হতদরিদ্রদের এই আপ্যায়ন কার্যক্রম। তা দেখে তাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেন আরও অনেকে।

উদ্যোক্তারা জানান, মেহমানখানা থেকে তিন মাস ধরে প্রতিদিন বিকেলে তিন হাজার মানুষকে খাবার দেয়া হয়। ২০২০ সালে যাত্রার শুরুর দিকে সপ্তাহে এক দিন (শুক্রবার) খাবার দেয়া হতো ৭০০-৮০০ লোককে। পরে সপ্তাহে দুই দিন- শুক্র ও শনিবার খাবার দেয়া হতো প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষকে। তবে তিন মাস ধরে প্রতিদিনই একবেলা করে খাবার দেয় মেহমানখানা। এখন প্রতিদিন পাঁচ ডেক খাবার রান্না করা হয়।

মেহমানখানার প্রধান উদ্যোক্তা আসমা আক্তার লিজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল লকডাউনে হতদরিদ্র মানুষ যাতে একবেলা খেয়ে বাঁচতে পারে তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু লকডাউন শেষেও আমরা মেহমানখানা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমাদের গোডাউনে এখনও কিছু চাল, ডালসহ অন্যান্য জিনিস রয়ে গেছে। আর যারা আমাদের অর্থ ও রান্নার সমগ্রী দিয়ে সাহায্য করছেন, তারা বলছেন চালিয়ে যেতে। কারণ লকডাউন উঠে গেলেও মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।’

মেহমানখানার খাবার পান হতদরিদ্র্যরা। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি বলেন, ‘আমি এই এলাকার সবার কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ সবাই এই কাজকে সমর্থন করছেন। কিন্তু আমার পাশের ৪/৭ ভবনের বাসিন্দা মির্জা শাহরিয়ার আলম মিঠু এটার বিরোধিতা করছেন। আমি জানি না তিনি কেন এমনটা করছেন। তিনি একদিন এখানে এসে বললেন, লাথি মেরে পাতিল ফেলে দেব।

‘আমি বললাম কেন লাথি মারবেন? তখন তিনি বললেন, গরিব বাঁচিয়ে কী হবে? বড়লোক বাঁচাও। তুমি তো ব্যবসা খুলে বসছো। এরপর তিনি তার দল ভারী করার জন্য দু-একজনকে সঙ্গে নেয়ার চেষ্টা করেন।’

লিজা আরও বলেন, ‘মিঠু বিভিন্নভাবে যখন চেষ্টা করেও মেহমানখান বন্ধ করতে পারছিলেন না, তখন আমাদের স্বেচ্ছাসেবক মোতাহার হোসেনকে হুমকি দিয়ে বলেন, কেউ যদি তোমাদের খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়, তখন কী হবে ভেবে দেখেছ? তখন মানুষ মারা যাবে, তারপর মামলা হবে, তখন কী এই মেহমানখানা থাকবে? থাকবে না। মিঠুর এ কথার মানে হলো মেহমানখানা বন্ধ করা।’

মেহমানখানার প্রধান উদ্যোক্তা লিজা বলেন, ‘রান্না করার এবং খাবার বিতরণের সময় এই রাস্তায় একটু ভিড় হয়- এটাই তার কাছে সমস্যা। তাই আমাদের কাজ বন্ধ করতে এ ধরনের হুমকি দিচ্ছেন। অথচ এই রাস্তায় একটি কোচিং সেন্টার আছে, পাশেই একটি স্কুল আছে, এগুলো খোলা থাকলেও এই রাস্তা অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়।

মেহমানখানা থেকে অসহায়-হতদরিদ্র্যদের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

‘তখন তো তাদের কোনো সমস্যা হয় না। আসলে এই মেহমানখানার নামডাক হয়ে গেছে। তাই তারা ঈর্ষা করতে শুরু করেছেন। আর এই ঈর্ষার কারণেই তিনি এসব কথা বলছেন।’

লিজা বলছেন, তিনি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা নন। থাকেন এই রোডেরই পূর্বপরিচিত একজনের বাসায়। কিন্তু কে বা কারা বাড়িওয়ালার কান ভারী করেছেন। তাই বাড়িওয়ালা তাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘এখানে আমি যে বাসায় থেকে এই মেহমানখানা চালাচ্ছি, ইতোমধ্যে সেই বাসার মালিক আমাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন। আমিও বাসা ছেড়ে দিয়েছি। আগামী মাসে রায়েরবাজার চলে যাব। অথচ দেখেন আমার বাসার মালিক লন্ডনে থাকে। তার তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। এরাই ফোন করে তার কান ভারী করছেন বলে আমার মনে হয়।’

লালমাটিয়ার এই রোডের বাসা ছেড়ে গেলেও মেহমানখানা চালিয়ে যেতে চান লিজা। কারণ হিসেবে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার দরিদ্র রিকশাচালক বিকেল হলেই এখানে খেতে আসে। এ জায়গা তাদের কাছে খুবই পরিচিত হয়ে গেছে।

‘এখন যদি মেহমানখান এখান থেকে চলে যায়, তাহলে নতুন জায়গা তাদের চিনতেই তো কয়েক মাস চলে যাবে। তারা না খেয়ে থাকবে। তাই তারা যতই হুমকি দিক, আমি এখানেই মেহমানখানা চালিয়ে যাব।’

লিজার অভিযোগ মেহমানখানার স্বেচ্ছাসেবক মোতাহার হোসেনকে ওই হুমকি দিয়েছিলেন মিঠু।

নিউজবাংলা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোতাহার বলেন, ‘ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে মিনা বাজারের পাশেই তারা ফুড নামে আমার একটি দোকান আছে। ১০-১২ দিন আগে আমার দোকানে এসে মিঠু নামের একজন বললেন, মেহমানখানা অন্য কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। তখন আমি বললাম, এটা অন্য কোথায় নিয়ে যাব? এটা তো খারাপ কিছু না।

‘একসময় তো আপনারা এটাকে সমর্থন দিয়েছেন। এখন কেন এটা বলছেন? তখন তিনি বললেন, একসময় সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু এখন সম্ভব না। তার পরই বললেন, এখন যদি কেউ এ খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়, তখন মানুষ মারা যাবে, তারপর মামলা হবে, তখন কী এই মেহমানখানা থাকবে? থাকবে না।’

মোতাহার আরও বলেন, ‘আমি যেহেতু এই মেহমানখানার একজন উদ্যোক্তা, তাই এটার খারাপ কিছু চাই না। তাই ওনার এমন হুমকির পরপরই আমি লিজা আপুকে বিষয়টা জানিয়ে দিই।’

মেহমানখানার বিনামূল্যের খাবার খাচ্ছেন অনেকেই। ছবি: নিউজবাংলা

তাদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মিঠু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো হুমকি দিইনি। যারা অভিযোগ করছে তাদের কাছে কি আমার হুমকির কোনো প্রমাণ আছে। হুমকির কোনো লিখিত কাগজ, কোনো অডিও, ভিডিও আছে তাদের কাছে? যদি এ রকম কোনো ডকুমেন্ট না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে?’

মোতাহার নামের এক স্বেচ্ছাসেবককে আপনি খাবারে বিষ মেশানোর প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন জানালে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় খোলা আকাশে নিচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তারা রান্না করে। তাই আমি বলেছিলাম ফুড পয়জনিং হতে পারে। আমি বলেছি ফুড পয়জনিংয়ের কথা, সে হয়তো ভেবেছে আমি খাবারে পয়জন মেশাব। এরা তো ইংরেজিও ভালোভাবে বোঝে না।’

মিঠু বলেন, ‘প্রতিবেশীরা আমার কাছে এই মেহমানখানা নিয়ে অভিযোগ করেছে। তাই আমি চাই তারা এই রাস্তা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাক।

‘তাদের কারণে এই রাস্তায় জ্যাম লেগে যায়। আমরা গাড়ি বের করতে পারি না। ঠিকমতো চলাচল করতে পারি না। তা ছাড়া তারা রাস্তার ওপরে গ্যাসের সিলিন্ডার দিয়ে রান্নাবান্না করে, যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়, তার দায় কে নেবে?’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু তারা আমার বিরুদ্ধে আপনাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে, তাই এখন আমিও তাদের বিরুদ্ধে থানা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস ও সিটি করপোরেশনে লিখিত অভিযোগ দেব।’

মেহমানখানার উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ আছে দাবি করে মিঠু বলেন, ‘সেগুলো নিয়ে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাষ্টন ওদের পেছনে নিজস্ব গোয়েন্দা লাগিয়েছেন। তিনিও চান না মেহমানখানা এখানে থাকুক। কিছুদিন পর দেখবেন, ওদের নামে অনেক কিছুই বের হবে।’

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি কেন মেহমানখানার পেছনে গোয়েন্দা লাগাতে যাব? আর আমার নিজস্ব গোয়েন্দাইবা এলো কোত্থেকে! এগুলো সবই মিথ্যা কথা। বরং আমি নিজেও মেহমানখানার সঙ্গে আছি।

‘যেভাবেই হোক আমি মেহমানখানায় সাহায্য করি। আর মেহমানখানার যেসব স্বেচ্ছাসেবক আছে, তার বেশির ভাগই তো আমাদের ছাত্রলীগের ছেলে, আমিই তাদের মেহমানখানার কাজে যুক্ত থাকতে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘মিঠুই আমাকে একবার ফোন করেছিল। একবার আমার অফিসে এসেও মেহমানখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে গেছে। আরও দু-একজনও কিছুটা সমস্যা হওয়ার কথা বলেছে, কিন্তু আমি গুরুত্ব দিইনি।

‘কারণ যখন তারা খাবার বিতরণ করে, তখন হয়তো রাস্তায় কিছুটা জ্যাম থাকে। তাতে কিছু মানুষের গাড়ি নিয়ে চলাচলে সমস্যা হয়। কিন্তু এই মেহমানখানার খাবারে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ একবেলা খেয়ে বেঁচে আছে। আমার কাছে এটাই বড় কথা। তাই আমি যতদিন এখানে আছি, মেহমানখানার সঙ্গেই আছি।’

এ বিভাগের আরো খবর