বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি’ বলে সিলেট থেকে আফগানিস্তানে

  •    
  • ১৫ আগস্ট, ২০২১ ২২:৩৭

তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করতে যারা আফগানিস্তানে গেছেন, তাদের মধ্যে তিন জনের তথ্য এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পেরেছে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী শাখা সিটিটিসি। এদের মধ্যে একজন আবদুর রাজ্জাক। তার বাড়ি কুমিল্লা হলেও সিলেটে থাকতেন ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি মদন মোহন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র।

সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আফগানিস্তানে যাওয়া বাংলাদেশি যুবকের মধ্যে অন্তত তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)।

এই তিনজনের একজন আব্দুর রাজ্জাক। অন্য দুইজনের নাম এখনই প্রকাশ করতে চায় না তারা।

এই তিনজন ভারত ও পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত তথ্য মিলেছে।

এর মধ্যে সিলেটের রাজ্জাক তার ভাইয়ের কাছে ‘বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি’ বলে ঘর ছেড়েছিল মার্চের শেষে। আর ফেরেননি।

তবে এই সংখ্যাটি তিন নয়, এটাও নিশ্চিত। কারণ, আফগানিস্তান যাওয়ার পথে বেশ কিছু যুবক ভারতে আটক হয়েছেন।

আরও কয়েকটি গ্রুপ আফগানিস্তান যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গত তিন সপ্তাহের অভিযানে বাংলাদেশেই গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি ও পুলিশের অন্যান্য সংস্থা।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনজনের নাম পেয়েছি। তাদের একজন রাজ্জাক।’

আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন দেশটির মুজাহিদিনরা আশির দশকে যুদ্ধ করেছে, তখনও বাংলাদেশ থেকে কওমিপন্থিদের একটি দল সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। আর ৯০ দশকে তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার উদ্ভব।

৯০ দশকে বিএনপি শাসনামলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৯৯৬ সালে তালেবানরা কাবুল দখল করার সময়ও বাংলাদেশ থেকে একদল যোদ্ধা আফগানিস্তানে যায়।

চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই দেশটি আবার তালেবানের দখলে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা করছিল ৯০ দিনের মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটবে। তবে তার আগেই পতন হলো কাবুলের। শুরুর দিকে লড়াই হলেও গত কয়েক দিনে বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করেছে সরকারি বাহিনী।

প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পালাতেই রোববার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্যালেসের দখল নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা।

তালেবানের অগ্রগতির মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে আবার দেশটিতে উগ্রপন্থিরা যোগ দেয় কি না, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য অলরেডি কিছু মানুষ হিজরত করেছে। আমরা ধারণা করছি, কিছু মানুষ ইন্ডিয়ায় ধরা পড়েছে। আর কিছু মানুষ হেঁটে বা অন্য উপায়ে আফগানিস্তানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।’

যারা যাচ্ছে তালিকা হচ্ছে

যারা বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানে গিয়েছেন, তাদের তালিকা করছে সিটিটিসিসহ একাধিক সংস্থা।

কর্মকর্তারা বলছেন, আফগানিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত হবেন তারা। এই আইনের ধারা অনুযায়ী, দেশের ভেতরে ও বাইরে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কেউ যুক্ত হলে তার বিচার হবে।

রাজ্জাক যেভাবে আফগানিস্তানে

সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকায় ভাইয়ের বাসায় থাকতেন ২০ বছর বয়সী আব্দুর রাজ্জাক। ওই এলাকারই মদন মোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। স্বভাবে নম্র-ভদ্র, ধর্মপরায়ণ ছিলেন। কারও সঙ্গেই কোনো বিরোধ নেই। সেই রাজ্জাক হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান গত ২৫ মার্চ।

‘বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছি, দুদিন পর ফিরে আসব’- ভাইকে এমনটি বলে সেদিন বাসা থেকে বের হয়েছিলেন রাজ্জাক। এরপর আর ফেরেননি।

গত ১ এপ্রিল সিলেট কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়রি করেন রাজ্জাকের বড় ভাই সালমান খান।

রাজ্জাকদের মূল বাড়ি কুমিল্লার বঙ্গুরা থানায়। তবে ছোটবেলা থেকেই সিলেটে ভাইয়ের বাসায় থেকে পড়ালেখা করতেন তিনি। নগরের দ্য এইডেড হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেছেন।

সালমান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক লকডাউনে চাকরি হারিয়েছি। তাই মাস দুয়েক আগে সিলেট থেকে পরিবার নিয়ে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে চলে আসছি।’

ভাই কোথায় আছে জানেন না জানিয়ে সালমান বলেন, ‘পুলিশও কোনো খোঁজ দিতে পারছে না। তবে শনিবার থেকে কয়েকজন সাংবাদিক ফোন দিয়ে তার তথ্য নিয়েছে।’

তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘তার (রাজ্জাকের) কোনো সমস্যা হয়েছে কি? তাকে কীভাবে পাব? এক পুলিশ বলেছে, সে দেশ ছেড়ে চলে গেছে।’

সালমানের ভাষ্যমতে, ছোটবেলা থেকেই নামাজ পড়তেন রাজ্জাক। বন্ধুদের সঙ্গে তাবলিগে যেতেন। পরিবারের অন্যদেরও নামাজ পড়তে বলতেন। ইসলামি রীতি অনুসারে জীবন যাপন করতে বলতেন।

তিনি বলেন, ‘রাজ্জাকের বন্ধুরাও খুব ভালো। তাদের সকলকেই আমরা চিনি। একটাও খারাপ ছেলে নেই। এলাকার সকলে রাজ্জাককে ভালো ছেলে হিসেবেই চেনে।’

ভাই নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে সালমান বলেন, ‘২৫ মার্চ সে আমাকে জানায় তার এক বন্ধুর বাড়িতে যাবে। দুদিন পর ফিরে আসবে।’

সেই বন্ধু কে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বন্ধুর বাড়ি সিলেটের লামাবাজারে। একটা মাদ্রাসায় পড়ে। নামটা এখন ভুলে গেছি। কিন্তু দুই দিন পেরিয়ে গেলেও সে ফিরে আসেনি। ওই বন্ধুর বাসায়ও সে নেই। এমনকি ওই বন্ধুও নিখোঁজ রয়েছে। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ১ এপ্রিল থানায় জিডি করি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেই।’

-কোনো সন্দেহ করেননি?

সালমান বলেন, ‘রাজ্জাক মাঝে মাঝেই বন্ধুদের বাড়ি যেত। থাকতও অনেক সময়। এরপর আবার ফিরে আসত। তবে এবার আসেনি। তার সেই বন্ধুটিরও খোঁজ মিলছে না।’

রাজ্জাকের নিখোঁজের ব্যাপারে থানার ভাইয়ের করা সাধারণ ডায়রি তদন্ত করছেন নগরের লামাবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমিন।

তিনি বলেন, ‘রাজ্জাকের মোবাইল নম্বর ট্রেস করে আমরা তার সর্বশেষ অবস্থান দেখতে পেয়েছি নগরের কোতোয়ালি ও জালালাবাদ থানার মধ্যবর্তী খালপাড় নামক একটা স্থানে। ওই জায়গায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর আর তাকে ট্রেস করা যাচ্ছে না। এখন বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি, সে তালেবানের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিতে আফগানিস্তান চলে গেছে।

রাজ্জাক যে বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, তার বাড়ি লামাবাজারে বলে রাজ্জাকের ভাই সালমান জানিয়েছিলেন।

তবে এসআই আল আমিন বলেন, ‘ওই ছেলের বাড়ি মৌলভীবাজারে। তার নাম ফরিদ উদ্দিন। তাকে কিছুদিন আগে ঢাকার একটি মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন কাশিমপুর কারাগারে আছে।’

এসআই আল আমিনের ধারণা, ফরিদ উদ্দিনের দেওয়া তথ্য থেকেই রাজ্জাকের আফগানিস্তান যাওয়ার তথ্য জেনে থাকতে পারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো দল।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘একটি ছেলে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগে বেশ আগে একটা জিডি হয়েছিল। তবে তার সন্ধান আমরা পাইনি। সে কোথায় আছে তাও বলতে পারব না।’

রাজ্জাকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মদন মোহন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সর্ব্বানী অর্জুন বলেন, ‘কলেজ তো প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ। যারা একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে, তাদের সবার সঙ্গে আমাদের পরিচয়ই তো ভালো করে হয়নি। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমেও তো কোনো ছাত্রের আচার আচরণ স্বভাব সম্পর্কে জানা যায় না।’

রাজ্জাকের ব্যাপারেও কোনো কিছু জানেন না বলে জানান সর্ব্বানী অর্জুন।

এ বিভাগের আরো খবর