বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরীমনি-পিয়াসাদের বিরুদ্ধে ‘যৌন চাঁদাবাজির’ অভিযোগ

  •    
  • ৭ আগস্ট, ২০২১ ২২:৩৪

পুলিশ কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে জানান, সেক্সটরশনের মাধ্যমে একজনের আপত্তিকর ছবি দেখিয়ে টাকা বা অনৈতিক সুবিধা দাবি করা হয়। টাকা দিতে রাজি না হলে সেই ছবি ইন্টারনেট বা অন্য মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই সেক্সটরশনের শিকার হলেও সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নারী অভিনয়শিল্পীদের কাছে অনেক ভিআইপি পুরুষের এই চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

নায়িকা পরীমনি, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ এবং মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ গ্রেপ্তার হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে পর্নোগ্রাফি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল ডিভাইসে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির নাম ও ছবি পাওয়া গেছে। তাদের অনেকেই এসব মডেল ও অভিনেত্রীর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন। বিষয়টিকে সেক্সটরশন বা যৌন চাঁদাবাজি বলছেন সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করা পুলিশ কর্মকর্তারা।

নিউজবাংলাকে তারা জানিয়েছেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এখন সাইবার বুলিংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পর্নোগ্রাফি-সংক্রান্ত অপরাধ। বাড়ছে সেক্সটরশনের মতো হয়রানি। প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের অভিযোগ জমা পড়ছে।

পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালে দেশের বিভিন্ন থানায় সাইবার ক্রাইম-সংক্রান্ত ২ হাজার ১৯২টি মামলা হয়। এর মধ্যে সেক্সটরশনের অভিযোগ করেন ৫৫ জন পুরুষ ও ১১৮ জন নারী। সেক্সটরশনের শিকারদের বেশির ভাগই নারী। তাদের বয়স ১৯ থেকে ৩৫ বছর। ২০২০ সালে এই নারীদের মধ্যে ১০১ জন সেক্সটরশনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। পুরুষদের মধ্যে এ অভিযোগ করেছেন ৪৩ জন।

সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করা পুলিশ কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে জানান, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এ ধরনের অভিযোগ আরও বেড়েছে। নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও সেক্সটরশনের শিকার হচ্ছেন। তবে মানসম্মানের ভয়ে অধিকাংশই মামলা না করে প্রতিকার চাইছেন।

তারা জানান, সেক্সটরশনের মাধ্যমে একজনের আপত্তিকর ছবি দেখিয়ে টাকা বা অনৈতিক সুবিধা দাবি করা হয়। টাকা দিতে রাজি না হলে সেই ছবি ইন্টারনেট বা অন্য কোনো মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই সেক্সটরশনের শিকার হলেও সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নারী অভিনয়শিল্পীদের কাছে অনেক ভিআইপি পুরুষের এই চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পরীমনি, পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেক্সটরশনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের মোবাইল ও ডিজিটাল ডিভাইসে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির নাম ও ছবি মিলেছে। তাদের অনেককেই অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছেন তারা। সম্মানহানির আশঙ্কায় হয়রানির শিকার এসব পুরুষ নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চান না।

গ্রেপ্তারের পর পরীমনিকে মাদক মামলায় চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা

কর্মকর্তারা বলছেন, সেক্সটরশনের মতো অভিযোগের ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে তদন্ত ও বিচার করার সুযোগ রয়েছে।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এ বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তি-মর্যাদাহানি করিলে বা ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোনো সুবিধা আদায় বা কোনো ব্যক্তির জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ধারণকৃত কোনো পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিকে মানসিক নির্যাতন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

আইনে ‘পর্নোগ্রাফি’ বলতে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য, যা চলচ্চিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থিরচিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যেগুলোর কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই, সেসব কন্টেন্টকে বোঝানো হয়েছে। যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা লিফলেটও পর্নোগ্রাফির আওতায় পড়ে।

প্রযোজক-পরিচালক নজরুল ইসলাম রাজের সঙ্গে পরীমনি। ছবি: সংগৃহীত

অভিযোগ আছে, যৌন হয়রানি-সম্পর্কিত অনেক অপরাধ ইন্টারনেট-সম্পর্কিত হওয়ার পরও সেগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ফেলা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের উপকমিশনার (ডিসি) আ ফ ম আল কিবরিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংঘটিত অপরাধের ইনগ্রেডিয়েন্ট বিশ্লেষণ করেই নির্দিষ্ট ধারায় অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত করা হয়। কোনো কোনো অভিযোগের বেলায় ডিজিটাল সিকিউরিটি এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ- দুই আইনের ধারায়ই অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

‘কাজেই ইন্টারনেট-সম্পর্কিত হলেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করতে হবে- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বরং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত সেক্সটরশনের মতো অপরাধসমূহ অ্যাড্রেস করার জন্য পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের নির্দিষ্ট ধারায় সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।’

তিনটি মামলায় রিমান্ডে আছেন কথিত মডেল পিয়াসা। ছবি: নিউজবাংলা

সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ধ্রুব জ্যোর্তিময় গোপ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে সাইবার জগতে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পর্নোগ্রাফি ও সাইবার বুলিং-সংক্রান্ত অপরাধ। বাড়ছে সেক্সটরশনের মতো ঘটনা।’

এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘করোনায় বেশির ভাগ মানুষ ঘরবন্দি। এই সময়ে সাইবার স্পেসে নারীঘটিত মানহানি, রাজনৈতিক মানহানি ও ব্যক্তিগত আক্রমণ বাড়ছে। প্রাইভেট মেসেঞ্জার বা এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও শেয়ার করার প্রবণতা বেড়েছে। আর এসব কনটেন্ট যখন কোনো অসাধু ব্যক্তির দখলে চলে যায়, তখনই ঘটে ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা। এভাবে করোনাকালে ব্ল্যাকমেইলের সংখ্যাও বাড়ছে।’

পুলিশ কর্মকর্তা ধ্রুব জ্যোর্তিময় গোপ জানান, করোনা পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে কিছু অপরাধী নিয়মিত অন্যের রূপ ধারণ করে সাইবার স্পেসে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিচ্ছে। এমনকি অনলাইনে কেনাবেচা করতে গিয়েও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে।

কথিত মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ। গত ১ আগস্ট মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মৌয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের সেন্ট্রাল ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) তথ্য বলছে, ২০২০ সালে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় সাইবার ক্রাইম-সংক্রান্ত ২ হাজার ১৯২টি মামলা হয়। এর মধ্যে ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগ করেন ৩৬৭ জন পুরুষ ও ৩৫৮ জন নারী। ই-মেইল আইডি হ্যাকের অভিযোগ করেন ৩৫ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী। ফেক আইডি খোলার অভিযোগ করেন ১৬৩ জন পুরুষ ও ২৩১ জন নারী। সেক্সটরশনের অভিযোগ করেন ৫৫ জন পুরুষ ও ১১৮ জন নারী। মোবাইল ব্যাংকিং-সংক্রান্ত অভিযোগ করেন ৩১০ জন পুরুষ ও ১০২ জন নারী। অন্যান্য ‘হ্যারেজমেন্টের’ অভিযোগ করেন ২৪৭ জন পুরুষ ও ১৯৩ জন নারী।

ডিএমপির সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের তথ্য বলছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ২০১৯ সালে ৮৭১টি, ২০২০ সালে ১৩৩৬ ও ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ৬০৫টি মামলা হয়। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ২০১৯ সালে ৫৬৩, ২০২০ সালে ৬৮৩ ও ২১ সালের ছয় মাসে ৪৪২ মামলা হয়। ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে সাইবার অপরাধীদের শিকার ৮২৭ জন ভিকটিমকে সেবা দেয়া হয়। এ সময়ে অনলাইনে সাহায্য করা হয় ৮ হাজার ৭৭০ জনকে।

এ বিভাগের আরো খবর