বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোথায় গেল সেই ‘ম্যাঙ্গো ট্রেন’

  •    
  • ২৮ জুলাই, ২০২১ ১২:২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘শেষের দিকে ৫০ ক্যারেট, ২০ ক্যারেট, ৩০ ক্যারেট আম বুকিং হচ্ছিল। ১৬ জুলাই সর্বশেষ আম গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে। এর আগের সাত দিনের সব বুকিং এক করলে দেখা যায় ১৭ হাজার ২৪০ কেজি আম গেছে। বুকিং কম হওয়ার কারণেই আমাদের জানানো হয় ম্যাঙ্গো ট্রেন বন্ধের কথা।’

পরিবহন সহজের পাশাপাশি কম খরচে ঢাকায় আম পাঠাতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে চালু করে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। কিন্তু দেড় মাসের বেশি সময় চালানোর পর বন্ধ করে দেয়া হয় ট্রেনটি। অথচ এখনও গাছে রয়েছে ফজলি ও আশ্বিনা আম।

২৭ মে চালু হওয়ার পর ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলে ট্রেনটি। ১৬ জুলাই এটি বন্ধ হয়ে যায়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, আমের বুকিং একেবারেই কমে যাওয়ায় এটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ট্রেনটি চালুর আগে-পরে এ নিয়ে বড় ধরনের প্রচার-প্রচারণা ছিল না। এ কারণে এর প্রতি সবার আগ্রহ তৈরি হয়নি। তবে এমন একটি ট্রেন বছরজুড়েই চালু রাখা যেতে পারে। শুধু আম নয়, অন্য সবজিও ঢাকায় পাঠানো গেলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের উৎপাদিত আমের একটি বড় অংশ চলে যায় ঢাকায়। বেশির ভাগ আমই যায় কুরিয়ার সার্ভিসে। এ ছাড়া আম পরিবহনের জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকেন ট্রাক। কুরিয়ারে আম পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই তা নষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা।

উল্লিখিত বিষয়গুলো মাথায় রেখে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়ে আসে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। গত বছর এ সেবা চালু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও এই ট্রেন সেবা চালু ছিল।

সাধারণ মানুষ ও অনলাইনে আম ব্যবসায় যুক্তদের অনেকেই কুরিয়ারের বদলে ট্রেনে আম পাঠাতে শুরু করেন। ভালোই সাড়া ফেলছিল ট্রেনটি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বাণিজ্যিক শাখা সূত্রে জানা যায়, ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল ৪টার দিকে ছেড়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে এ অঞ্চলের ১০টি স্টেশন থেকে আম ছাড়াও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য নিয়ে ঢাকায় যেত।

রেলের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, শুরুতে আমের ভালো চাপ থাকলেও শেষের দিকে কমে যায়। ১৫ জুলাই পর্যন্ত ২২ লাখ কেজি আম নিয়ে ঢাকা আসে ট্রেনটি। এতে ২৬ লাখ টাকা ভাড়া আদায় হয়েছে।

এ বিষয়ে শাহনেওয়াজ দুলাল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার ট্রেনের মাধ্যমে আম পাঠিয়েছি ঢাকায়। সার্ভিস ভালো। আম তো এখনও শেষ হয়নি।

‘এখনও ম্যাঙ্গো ট্রেন চালু রাখতে হতো। কম হলেও তো মানুষজন আম পাঠাচ্ছিল।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘শেষের দিকে ৫০ ক্যারেট, ২০ ক্যারেট, ৩০ ক্যারেট আম বুকিং হচ্ছিল। ১৬ জুলাই সর্বশেষ আম গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে। এর আগের সাত দিনের সব বুকিং এক করলে দেখা যায় ১৭ হাজার ২৪০ কেজি আম গেছে।

‘বুকিং কম হওয়ার কারণেই আমাদের জানানো হয় ম্যাঙ্গো ট্রেন বন্ধের কথা।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে প্রতিদিনই আম গেছে। আম তো শেষ। যা আম আছে তা একেবারেই সামান্য। এই কারণেই আমরা আর ট্রেন চালু রাখিনি।’

রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুডস প্রডিউসার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ট্রেনটি চালু রাখার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। বিশেষ করে মানুষের মাঝে এই ট্রেন সম্পর্কে তথ্য প্রচার করার বিষয়ে। কিন্তু তারা এসব কিছু করেনি।

‘এ নিয়ে প্রচার থাকলে মানুষ জানত ও ট্রেনের প্রতি অনেকেই আগ্রহী হতো। শুধু আমের বিষয় না; এখানকার সবজিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ঢাকায় পাঠানোর জন্য এই ট্রেনটি সারা বছরই চালু রাখা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু স্টেশন থেকে স্টেশন পর্যন্ত পরিবহন না করে ডাক বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে তারা হোম ডেলিভারির কাজটিও করতে পারে। এতে মানুষ উপকৃত হবে; সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আমরা তেমন বুকিং না পেয়েই বন্ধ করে দিয়েছি। আপনারা দেখেন খরচ কত, আয় কত।

‘প্রথমে ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিক টন আম হতো। এটি কমে ৮ মেট্রিক টনে চলে এসেছিল। ৯ টন দিয়ে একটি ২০০ টনের গাড়ি চালাব না। সরকার মনে করেছে, এটি ভরা মৌসুমে চালাবে।

‘আর যারা রাষ্ট্র চালায়, তারা চিন্তা করেন বাজার স্থিতিশীল থাকবে। লকডাউনের ভেতরে আমের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য এটি চালু করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সারা বছর এই ট্রেন চালানোর বিষয়ে ভেবেছি। আপাতত তা সম্ভব হচ্ছে না। এগুলো আস্তে আস্তে হবে।

‘আমরা এসি ভ্যান নিয়ে আসছি। এটি সবজি, ফল, মাছ, মাংস পরিবহনে ব্যবহার করব। ২০২২ সাল নাগাদ আসবে।’

এ বিভাগের আরো খবর