বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অতিকায় সেসব গরু এখন গলার কাঁটা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২০ জুলাই, ২০২১ ২০:৩৮

নিউজবাংলায় যেসব গরুর বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল, তার মধ্যে ৯টির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিক্রি হয়েছে ৩টি। প্রথমে ক্রেতারা যে দাম বলেছিলেন, এখন সেই দামও বলছেন না কেউ। তবে এক বিক্রেতা তুলনামূলক কম দাম চাওয়ার পর বিক্রি করতে পেরেছেন তার তিনটি গরুই।

কোরবানির মৌসুমে বেশ কিছু গরু বিশাল আকারের কারণে সংবাদে জায়গা করে নিয়েছে। ২৭ থেকে ৩৫ মণ ওজনের এসব গরু ১২ থেকে ৩০ লাখ টাকায় বিক্রির আশায় ছিলেন মালিকরা।

তবে সেসব গরুর বেশিরভাগই বিক্রি হয়নি। সেগুলো বিক্রি হয়েছে তার দামও পড়েছে হাঁকানো দামের অনেক কমে। কারণ, মালিকরা যে দাম বলছেন, তার ধারে কাছেও বলছেন না ক্রেতারা।

গত দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে অতিকায় বিভিন্ন গরুর তথ্য। নিউজবাংলাও বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশ করেছিল। এর মধ্যে নয়টি গরুর বিক্রির তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, বিক্রি হয়েছে তিনটি। বাকিগুলো এখন অনেক কমে বেচতে চান মালিকরা। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না।

আবার যে তিনটি বিক্রি হয়েছে, সেগুলো মালিকরা তুলনামূলক কম দাম চেয়েছিলেন। তবে যে দাম তারা প্রত্যাশা করেছিলেন, বিক্রি হয়েছে তারও বেশ কমে।

এসব গরু দেখতে আকর্ষণীয় হলেও মালিকরা যে দাম চাইছিলেন প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই তা অস্বাভাবিক। ওজন হিসাব করলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাংসের কেজি তিন হাজার টাকার বেশি হয়ে যায়।

যেমন ময়মনসিংহের ৩৬ মণের একটি গরুর দাম মালিক চাইছিলেন ২৫ লাখ টাকা। গরুর ওজনের অর্ধেক যদি মাংস পাওয়া যায়, তাহলে প্রতি কেজির দাম পড়ে তিন হাজার টাকার বেশি।

স্বাভাবিক বাজার দরের চেয়ে কোরবানির বড় পশুর মাংসের দাম কিছুটা বেশি হওয়া স্বাভাবিক। তবে এতটা বেশি দাম পড়া ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। কারণ বাজারে গরুর মাংসের দাম এখন ৬০০ টাকার আশেপাশে।

‘বাহাদুর’ ও ‘কালো’ মানিকের দামে হতাশ মালিক

ময়মনসিংহে ফ্রিজিয়ান জাতের দুই ষাঁড় ‘বাহাদুর’ ও ‘কালো মানিক’কে নিয়ে ছিল তুমুল আলোচনা। তবে পর পর দুই বছর হতাশ হতে হয়েছে মালিককে। কারণ, তার প্রত্যাশিত দাম কেউ বলেনি আর প্রথমে যে দাম একজন প্রস্তাব করেছিলেন, এখন সেই দামেও কাউকে গছাতে পারছেন না।

হালুয়াঘাট উপজেলার ১১ নম্বর আমতৈল ইউনিয়নের নাগলা বাজার এলাকার এবাদুল ইসলামের ষাঁড় ‘বাহাদুর’। গত বছর ১৫ লাখ টাকা দাম ওঠায় বিক্রি করেননি। এক বছরে আরও বড় ও আকর্ষণীয় হওয়ায় এবার জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দাম ওঠেছিল ১৭ লাখ টাকা।

ময়মনসিংহে ফ্রিজিয়ান জাতের দুই ষাঁড় ‘বাহাদুর’ ও ‘কালো মানিক’। ছবি: নিউজবাংলা

এবাদুল দর হাঁকেন ২৫ লাখ টাকা। ভেবেছিলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে ১৭ লাখের চেয়ে দাম বেশি বলবে কেউ। তবে তার আশা পূরণ হয়নি। এখন ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি করতে রাজি হলেও সাড়া দিচ্ছেন না ক্রেতারা।

এবাদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরম যত্নে ষাঁড়টি এত বড় করেছি। ষাঁড়টির উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট, লম্বায় সাত ফুট ও দাঁত আটটি। ওজন প্রায় ৩৬ মণ।

‘অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম এবার ন্যায্য দাম পাব। তাই প্রথমে ১৭ লাখ টাকা দাম হলেও বিক্রি করিনি। এখন শেষ মুহূর্তে একটু পর পর ক্রেতারা দামাদামি করছেন। তবে এখন সবাই দাম কম বলতেছে৷’

তিনি বলেন, ‘বড় ষাঁড়ের চাইতে মাঝারি আকারের ষাঁড় বিক্রি হচ্ছে বেশি। রাত পর্যন্ত দেখব দাম কত ওঠে। যদি ১৭ লাখ টাকাও কেউ বলে তবে বিক্রি করে দেব। নয়ত আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব।’

এবাদুল জানান, প্রতিদিন বাহাদুরকে খড়, কলা, ভুসি, খুদ ও ভুট্টা খাওয়াতে ৫০০ টাকার। এভাবে মাসে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। আর বছরে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কোরবানিতে বিক্রি না হলে বছরের বাকি সময়ে এই ষাঁড় কেউ কিনবে কি না আর কিনলেও এই দাম পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে তিনি।

ত্রিশাল উপজেলার ১ নম্বর ধানীখোলা ইউনিয়নের জাকির হোসেন সুমন বিপাকে ‘কালো মানিক’কে নিয়ে। চার বছর ধরে ষাঁড়টি পালছেন। এর উচ্চতা ছয় ফুট ও লম্বায় ১০ ফুটের বেশি। ওজনও ৩৭ মণের বেশি।

সারা শরীর কালো রঙের ষাঁড়টি দেখতেও আকর্ষণীয়। গত বছর সুমন এর দাম চেয়েছিলেন ২০ লাখ টাকা। তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি। এবার দাম চাচ্ছেন ৩০ লাখ। এখনও চলছে দামাদামি। তবে এখন পর্যন্ত দাম উঠেছে ১২ লাখ।

ষাঁড়টির মালিক সুমন বলেন, ‘হাটে গরুর অভাব নেই। একেকজন একেক দাম করে চলে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে বিক্রি করলেও মন মতো দাম পেতাম। এখন ক্রেতার চেয়ে গরু বেশি।

‘হাটে থাকা ষাঁড়ের মধ্যে আমারটার ওজন ও রঙ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এরপরও কম দামে ছোট গরুর দিকেই সবার দৃষ্টি। রাত পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম যিনি দেবেন, তার কাছেই বিক্রি করে দেব। তবে দাম একেবারেই কম হলে বিক্রি করব না।’

ত্রিশাল উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৭৫০টি গরুর খামার রয়েছে। গরুর কোনো কমতি নেই। এজন্য অনেকে গরুর হাটে না গিয়ে খামার থেকে গরু কিনছেন।

‘সবাই আশপাশ থেকেই গরু কিনতে পারছেন। আর তাই এই উপজেলায় বাড়তি দামে কেউ গরু কিনছেন না।’

‘সাকিব’ ও ‘ডিপজল’ এ আগ্রহ নেই

টাঙ্গাইলের ‘সাকিব’ ও ‘ডিপজলকে’ বাছুর অবস্থা থেকেই পালছেন বাসাইল উপজেলার জোবায়ের ইসলাম জিসান। দাম কম উঠায় ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ষাঁড় দুটিকে বিক্রি করেননি তিনি।

এবার ষাঁড় দুটি যথাক্রমে ৩০ ও ৩১ মণ ওজনের। তাই প্রতিদিন হাটে নিয়ে যাওয়াটা অনেক কষ্টের। ভেবেছিলেন অনলাইনের মাধ্যমেই বিক্রি করাটা সহজ হবে। এ ছাড়া একাধিক হাট ঘুরে দেখেন, এবার গরুর দামও অনেক কম। তাই হাটে তোলেননি তিনি।

তিনি বলেন, ‘অনলাইনের মাধ্যমে যে ওদের দাম বলেনি তাও কিন্তু না। দাম উঠেছিল ৭ লাখ টাকা। তবে আমাদের খরচের সাথে দামের মিল হয়নি দেখে আর বিক্রি করিনি।’

জিসান আরও বলেন, ‘যেহেতু আমি ওদের ক্ষতিকারক কোনো খাবার খাওয়াইনি, তাই আল্লাহর রহমতে আমার অতটা ভয় নেই যে, গরুগুলো স্ট্রোক করতে পারে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শে সব প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াইছি।

টাঙ্গাইলের ‘সাকিব’ ও ‘ডিপজল’

‘আর ওরা এখনও অনেক ছোট, মাত্র আড়াই বছরের দুই দাঁতের ষাড়। এবার যদি বিক্রি না হয়, তাহলে আগামী বছরও বিক্রি করতে পারব। তবে কিছু সময় যেহেতু আছে, খরচের মূল্যে যদি উঠে যায় তাহলে বিক্রি করে দিব।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রৌশনী আকতার বলেন, “আমরা আমাদের অনলাইন ‘গরুর হাট’ পেজে দিয়েছিলাম গরু দুটোকে বিক্রি করতে। দামও করেছিল অনেকেই। কিন্তু ওদের না পোষানোয় বিক্রি করেনি।

‘গরুগুলোর বয়সও কম হওয়ায় আগামীতে বিক্রি করতে পারবে। যেহেতু ষাঁড় দুটোকে ওরা বাজে কিছু খাওয়ায়নি তাই ভয়েরও কিছু নেই। আগামী ঈদে দেখা যাবে, আরও ভালো দামে বিক্রি করতে পারবে।’

গাবতলীর হাটে ‘কালো পাহাড়’ নিয়ে বিপাকে শাহজাহান

কোরবানির ঈদে পশু বেচা-কেনা শুরুর আগ থেকেই রাজধানীর ধামরাইয়ের ‘কালো পাহাড়’ ছিল আলোচনায় ছিল। ৩৫ মণের ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিন ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা ইউনিয়নে মালিক শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে ভিড় করত মানুষ।

মানুষের আগ্রহ থাকলেও ১২ লাখ টাকা দাম হাঁকানো ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারেননি শাহজাহান। গত বছর গরুটি সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হলেও বন্যার কারণে ক্রেতারা নিয়ে যেতে পারেননি। আরও এক বছর পালার পর এবার দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা।

শাহজাহান জানান, ‘বাইত্তে কালা পাহাড়রে বেচবার পারি নাই। পরে ৮-১০ জন মিইল্লা গাবতলী হাটে নওয়া আইছি গত শুক্কুরবার। ৪ হাজার ৫০০ ট্যাকা খালি ট্রাক ভাড়াই লাগছে। অ্যার আগে একজন ছয় লাখ ট্যাকা দাম কইছিল। আমি দেই নাই। পরে আর কেউই পাঁচ লাখ ট্যাকাও দাম কয় না।’

শাহজাহান আরও বলেন, ‘হাটে বড় গরুর চাহিদা একবারেই নাই। এহন সাড়ে ৫ লাখ হইলে ছাইড়া দিমু। চার দিন ধইরা হাটে আমরা তিনজন আইছি। ডেইলি আমগোই খাওন আছে এক হাজার ট্যাকার। আর বেচা না হইলে বাইত্তে নেয়া লাগব আর কী করার?’

উত্তরাঞ্চলের সেরা ‘নয়া দামান’ নিয়ে খুব চিন্তিত খামারি

গাইবান্ধায় ৩০ মণের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় ‘নয়া দামান’-এর মালিক সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মাদরাসা শিক্ষক আবুল কাশেম মাস্টার। তিনি এর দাম চেয়েছিলেন ১৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৮ লাখ টাকা।

করোনা মহামারিতে নিজ এলাকায় পশুর হাট না হওয়ায় ‘নয়া দামান’-কে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কাশেম। জানান, প্রতিদিন পশুটির খাবারের জন্য ব্যয় হয় দুই হাজার টাকার বেশি।

তিনি বলেন, ‘খুব চিন্তিত আচি। তবে এটা যাতে অনলাইনে বিক্রি করা যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করতিচি। এর আগে ক্রেতা ৮ লক্ষ টাকা দাম বলচি। আমি দেই নাই।’

যৌক্তিক মূল্য চেয়ে বেচা গেল ‘প্রেমকুমার’ ‘মাস্তান’দের

সিলেট নগরের উপকণ্ঠের খাদিম এলাকায় ‘আল্লার দান ডেইরি এগ্রো ফার্ম’-এ ছিল বিশাল আকৃতির ‘প্রেমকুমার’ এবং ‘কালো মাস্তান’ ও ‘সাদা মাস্তান’। খামারের মালিক আব্দুছ ছাত্তার লাভলু এই তিনটি ষাঁড়সহ বিক্রি করছেন ২৫টি পশু।

এরমধ্যে তামাটে রঙয়ের মধ্যে সাদা ছোপের ‘প্রেমকুমার’ বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকায়। ‘সাদা মাস্তান’ ও ‘কালো মাস্তান’ বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ৫ লাখে।

লাভলু জানান, এই তিন ষাঁড়ের প্রতিটির ওজন সাড়ে ৭০০ থেকে সাড়ে ৮০০ কেজি। এর মধ্যে প্রেমকুমার দেশি সাওয়াল জাতের। দুই মাস্তান ফিজিয়ান জাতের। ‘প্রেমকুমারের’ দাম চেয়েছিলেন সাড়ে পাঁচ লাখ আর দুই মাস্তানের প্রতিটির জন্য ছয় লাখ টাকা।

তিনি বলেন, ‘করোনার সময়ে অন্য ব্যবসা নিয়ে সংকটে আছি। তবে গরুর ব্যবসা ভালোই হয়েছে। এখন তো সকলেই সংকটে আছে। মানুষের হাতে তেমন টাকা পয়সা নেই। তারপরও আমি ভালোই ব্যবসা করেছি। লাভও হয়েছে।’

যৌক্তিক মূল্য চাওয়ায় সহজেই বিক্রি হয়েছে সিলেটের ‘প্রেমকুমার’ ও ‘মাস্তানরা’। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি জানান, তার গরুগুলো হাটে নিতে হয়নি। খামারে এসেই ক্রেতারা গরু নিয়ে গেছেন। কয়েকদিন আগেই সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে গেছে।লাভলু খামারটি শুরু করেন ২০১৮ সালে। তিন বছর আগের বাছুরগুলোই এখন এখন বিরাট ষাঁড়ে পরিণত হয়েছে। ব্যতিক্রমী নামের তার ষাঁড়গুলোর নিয়ে গত ৮ জুলাই নিউজবাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর কয়েকদিনের মধ্যেই তার খামারের সব গরু বিক্রি হয়ে যায়।

লাভলু বলেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে এগুলো লালন-পালন করছি। সম্পূর্ণ দেশীয় জাতের খাবার খাইয়েছি। সাদা মাস্তান ও কালো মাস্তানের দাম চেয়েছিলাম ৬ লাখ টাকা। আর প্রেমকুমারের দাম সাড়ে ৫ লাখ টাকা।

‘তবে দরদামের পর ও বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় কিছুটা কমেই বিক্রি করতে হয়েছে। তবে আমার কোনো লোকসান হয়নি। বরং কিছুটা লাভই হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর