২০০৫ সালে গ্রেপ্তার হন। ঝুলছিল ১৭ মামলা।
ছয় বছর জেল খেটে ছাড়া পান। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সন্ত্রাস জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করেন ডেমরা এলাকার এক যুবক।
দেশ ছেড়ে চলে যান আলজেরিয়ায়। সেখানে তিন বছর থাকার পর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরেন।
দুই বছর কোনো কাজ না পেয়ে ফুডপান্ডার ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানেও ভাল আয় রোজগার করতে না পেয়ে স্বাধীন জীবিকার জন্য শুরু করেন পাঠাও, উবারের মোটর সাইকেল চালানোর পেশা।
কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সেই রোজগারের পথও বন্ধ।
ঢাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে কাজ করা এই যুবক নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
তিনি জানান, গত ১ জুলাই শুরু হওয়া শাটডাউনে রাইড শেয়ারিং করতে না পেরে সংসার চালাতে এখন তাকে হাত পাততে হচ্ছে।
যখন সন্ত্রাস ছিল ‘পেশা’, তখন টাকা পয়সার অভাব ছিল না। গ্রেপ্তারের পর ছাড়া পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রচুর টাকা ঢালতে হয়েছে। জেল থেকে বের হওয়ার পর হাত শূন্য। সামর্থ্যবান স্বজনেরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
শাটডাউনে রাইড শেয়ারিং পেশাজীবীরা কেমন আছেন, জানতে গিয়ে পরিচয় হয় এই যুবকের সঙ্গে। কথা কথায় নিউজবাংলাকে তিনি জানান, অতীত ও বর্তমান জীবনের কথা।
জানান অন্ধকার জগত থেকে ফিরে আসার পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রামের কথা।
নিউজবাংলাকে এই যুবক বলেন, ‘আমি আগে খারাপ জগতে ছিলাম। ঢাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে কাজ করতাম। ওনার কথায় এমন কিছু নাই, আমি করি নাই।
‘২০০৫ সালে মহাখালী থেকে অ্যারেস্ট হই। মামলা ছিল ১৭টি। ছয় বছর জেল খাটি। একটা কথা আছে, ভালো হয়ে গেলে কেউ কারো খোঁজ নেয় না। আমি ঢাকার স্থানীয় পোলা। জেল খাটার সময় থেকে আমার পরিবার আর আমার সাথে সম্পর্ক রাখে নাই। আমার নিজের টাকা খরচ করে জেল থেকে বের হইছি।
‘জেল থেকে বের হওয়ার পর তারা আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে নাই। আমার ভাইদের কারো টাকার অভাব নাই। আমারও টাকা ছিল, কিন্তু জেল থেকে বের হতে সব শেষ হয়ে গেছে।’
এই যুবক বলেন, ‘লকডাউনে আমার পরিবারের কেউ আমারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে না যে, তুই খাইছিস নাকি না খেয়ে আছিস। করোনায় সরকার লকডাউন দিছে, কিন্তু আমাদের পেট চলবে কীভাবে?
‘এর আগে এক ভাইয়ের রাইড শেয়ার করছিলাম। ওই ভাইয়া বলছিলেন, করোনায় কোনো সমস্যা হলে আমারে ফোন দিস। পরে লাজ লজ্জা ফেলে সকালে ভাইয়াকে ফোন দিছিলাম। বলছিলাম, ভাই আমার খুব খারাপ অবস্থা। আপনি যদি কিছু সাহায্য করতেন, আমার উপকার হইত। ভাই বললেন, মোহাম্মদপুর যাইতে। একজনের কাছ থেকে ফুডপান্ডার একটা গেঞ্জি পরে মোহাম্মদপুর গেছি। ওই ভাই পাঁচ কেজি চাল, তেল আর ডাল দিছেন। এটা নিয়েই বাসায় আসছি।’
শাটডাউনে রাইড শেয়ারিং বন্ধ থাকায় মামলার ভয়ে রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে বের হতে পারছেন না এই যুবক। আবার ঘরেও থাকতে পারছেন না। কারণ হাতে কোনো সঞ্চয় নেই।
সংসার চালানোর তাগিদে শাটডাউনের মধ্যেই যাত্রী পরিবহনের জন্য একদিন বের হয়েছিল। যথারীতি ধরা পড়েন ট্রাফিকের চেকপোস্টে। মামলা দেয়া হয় ৩ হাজার টাকার। শাটডাউনে আয় তো দূরের কথা, উল্টো মামলায় জরিমানার বোঝা মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরতে হয়েছে। জরিমানার সেই টাকাও পরিশোধ করতে পারছেন না যুবক।
বাড়ি ভাড়াও বকেয়া পড়েছে। তিনি বলেন, ‘গত মাসের ঘর ভাড়া এখনও দিতে পারি নাই। আর আর্থিক অবস্থা যে কতটা খারাপ, আপনারে বুঝায় বলার ক্ষমতা আমার নাই।’
শাটডাউনে রাইড শেয়ারিং বন্ধ হওয়ায় এই যুবকের মতো করুণ অবস্থা বেশিরভাগ চালকের। সবার সংসারে তীব্র অনটন। হাত পাততে পারছে না না কারো কাছে, নেই সরকারের কোনো অনুদান।