বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খাবার চেয়ে ঘর পাওয়া লতার জীবনে এ কেমন টানাপোড়েন

  •    
  • ৭ জুলাই, ২০২১ ১৫:০৯

লতা আক্তার ঘর পেয়েছেন চরমোনাই ইউনিয়নে কীত্তনখোলা নদীর পাড়ে। নদী পার হতে হয় ট্রলারে। আশেপাশে নেই জনবসতি। ভূমিহীন ১৮২টি পরিবারকে ঘিরেই হয়ত গড়ে উঠবে নতুন গ্রাম। কিন্তু ততদিনে লতাকে তার জীবনের অভ্যস্ততার পুরোটাই পাল্টে ফেলতে হবে।

করোনায় আয় কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়া বরিশালের লতা আক্তারের জীবন পাল্টে যাচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে তার মধ্যে আনন্দ আর নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, যা তাকে ফেলেছে টানাপোড়েনে।

জীবন চালাতে কঠোর পরিশ্রম করে আসা এই নারী থাকেন বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বিল্ববাড়ি এলাকায়। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি করোনার প্রাদুর্ভাবে আয়হীন হয়ে যাওয়ায় মে মাসের শুরুতে ঘরে ছিল না খাবার।

মানুষের কাছ থেকে জেনে ৩৩৩ নম্বরে কল দেয়ার পর স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার জন্য নিয়ে আসেন খাবারের ব্যাগ। এসে দেখেন তার ভাঙা ঘরের দুঃসহ জীবন। সেদিনই তাকে বাড়ি দেয়ার কথা বলে যান।

মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারের বিনা মূল্যে ঘর দেয়ার যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে, তাতে দ্বিতীয় ধাপে গত ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয় দলিল।

সেই দিনটি লতার জীবনে ছিল স্বপ্নের মতো। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, 'ইউএনও স্যারে যহন আইছিল, তহন তো ভাবছিলাম খালি খাওন দেতে আইছে। তয় হেয়াও সত্য সত্য ভাবি নাই যে আইবে। কল দিছিলাম, আইবে কিনা সঠিক ছিলাম না। তয় হেদিন আইয়া চাউল ডাইল সহ অনেক কিছুই দেছে। পরে মোগো লগে কথা কইছে অনেক সময়। দেখছে পুরা ঘর ঘুইরা। মোরা মাইনসের জমিতে ভাঙাচুরা ঘরে থাহি, আমাগো ঘরে কোনো পুরুষ নাই, এইসব বিষয় ইউএনও স্যারেরে কইলাম। তারপর হে সব কিছু হুইনা আমারে বিনামূল্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ দিয়া একটা ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেয়।’

খাবার আসে কি না এ নিয়ে যেমন প্রশ্ন ছিল মনের ভেতর, তেমনি ইউএনও বলার পরেও আদৌ ঘর পাওয়া যাবে কি না, এ নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা।

লতা বলেন, ‘জুন মাসে হেই ঘরের চাবি আর জমির দলিল মোগো বুঝাইয়া দেয়া হইছে। মুই স্বপ্নেও ভাবি নাই এই ঘর পামু। কত লোকেই তো কত আশ্বাস দেয়। মোগো পরিবার একই জায়গায় ৬০ বছর ধইরা আছে। কোনো চেয়ারম্যান, মেম্বার এক মুডা চাউল লইয়াও দেখতে আয় নাই। তয় এই স্যারে যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ দিয়া ঘর দেবে প্রথমে বিশ্বাস করিনাই। তয় ঘরের চাবি আর দলিল পাওয়ার পর মুই অবাক ছিলাম। যা ভাবিই নাই কোনোদিন হেইয়াই সত্যি হইছে। আল্লাহর ধারে শুকরিয়া। আল্লাহয় যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ডিসি আর ইউএনও সাইবেরে ভালো রাহে।’

তবে এই ঘর একদিক থেকে যেমন তার জীবন দিতে যাচ্ছে, তেমনি আবার তৈরি করেছে নতুন দুশ্চিন্তাও।

লতা আক্তার ঘর পেয়েছেন চরমোনাই ইউনিয়নে কীত্তনখোলা নদীর পাড়ে। নদী পার হতে হয় ট্রলারে। আশেপাশে নেই জনবসতি। ভূমিহীন ১৮২টি পরিবারকে ঘিরেই হয়ত গড়ে উঠবে নতুন গ্রাম। কিন্তু ততদিনে লতাকে তার জীবনের অভ্যস্ততার পুরোটাই পাল্টে ফেলতে হবে।

লতা বলেন, 'আমার বিয়ার পর আমার স্বামী আমারে ছাইড়া দেয়। হেইরপর আমার বাপের বাড়ি থাইকা দর্জির কাম কইরা সংসার চালাই। ঘরে আমি, আমার এক বুইন আর মা আছে। এক জায়গায় অনেক বছর থাহার কারণে একটা সেট ব্যাপার আছে।

‘নদীর ওপারে গেলে অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়তে হইবে, যেমন কাম কাইজ পাওয়া অনেক কষ্টের হইবে। তয় হেই সব বিষয় চিন্তা করতেছি, কেমনে কাজ শুরু করমু হেডাও ভাবতেছি। কেননা ওডা নতুন জায়গা, এহন যেহানে থাহি হেহান দিয়া অনেক দূর।'

অবশ্য নতুন জীবনে লতা কী করবেন, তা ভাবার ও প্রস্তুতি নেয়ার আরও খানিকটা সময় পাচ্ছেন। কারণ, বরাদ্দ পেলেও এখনই ঘরে উঠা হচ্ছে না তার। কিছু কাজ এখনও বাকি আছে। দেয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগও। তবে যারা আশেপাশের এলাকায় থাকতেন, তারা এরই মধ্যে সেখানে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত লতা। জানালেন, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর যেভাবে জীবিকার সংস্থান নিজেই করেছেন, সেভাবে নতুন জীবনেও কিছু একটা করে নিবেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঘরের কিছু কাম বাকি আছে। হইয়া গেলেই তাড়াতাড়ি কইরা উইঠা যামু। কী করমু, হেইয়া পরে দেহন যাইব।’

বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘লতা আক্তারের দুর্দশা দেখে আমরা তাকে একটা ঘর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং যেটা তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘরের বিদ্যুৎ এবং পানির লাইনের কাজ চলছে, সেটা শেষ হলেই তারা ঘরে উঠতে পারবে। এছাড়া এসব ঘর পাওয়া মানুষরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এই ঘরে ওঠার সাথে সাথেই এক মাসের খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর