রাস্তার ধারে খোলা জায়গায় সাজানো আছে টিনের ঘর। কোনোটা একতলা, কোনোটা দোতলা, কোনোটা আবার চৌচালা।
এই ঘরগুলো তৈরি বিক্রির জন্য। ক্রেতারা এসে দেখেশুনে পছন্দ করে কিনে আস্ত ঘর তুলে নিয়ে যাবেন নিজের জায়গায়। তারপর সেখানে গিয়ে বসাবেন সেই ঘর, তৈরি হয়ে যাবে বাড়ি।
মুন্সিগঞ্জে এভাবেই বিক্রি হচ্ছে তৈরি টিনের ঘর।
এই জেলায় বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ঘর বিক্রির এই উদ্যোগ বেশি দিনের নয়। অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান এভাবে ঘর তৈরি করে বিক্রি করছে।
প্রতিটি ঘর তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১০ থেকে ৩০ জন কর্মচারী। এতে একদিকে যেমন অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি সহজেই মানুষ পাচ্ছে নতুন ঘর।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার জাকির বেপারী নিউজবাংলাকে জানান, এই জেলার বেশির ভাগ বাড়ি টিন-কাঠের তৈরি। নদীভাঙনকবলিত এলাকা হওয়ায় এখানে এ ধরনের বাড়ির কদর বেশি। স্থানান্তরযোগ্য হওয়ায় নদীতে ভাঙন দেখা দিলে সহজেই সরিয়ে নেয়া যায় বাড়ি।
এ ছাড়া চাইলে বিক্রিও করা যায়। যারা নতুন বাড়ি কিনতে পারেন না, তারা কম দামে পুরোনো বাড়ি কেনেন।
নাহিদ শেখ বলেন, ‘আগে বাড়িত গিয়া ঘর বানাইত। অনেক সময় নষ্ট হতো। এখন ইচ্ছা হলেই যখন-তখন ঘর কিনতে পারা যায়। যারা ঘর বানাতে ইচ্ছুক তাদেরও অনেক সুবিধা এখন।’
যারা ঘর তৈরি করেন তারা জানান, নাইজেরিয়ান লোহা ও বিভিন্ন কাঠ দিয়ে আকৃতি ভেদে একেকটি ঘর তৈরি করতে সময় লাগে ৭ থেকে ১৫ দিন। নকশা ও কারুকাজ বেশি হলে এক মাস সময়ও লাগে। সুযোগ রয়েছে ঘরে পছন্দমতো রং করে নেয়ার ও নকশা জুড়ে দেয়ারও।
গতানুগতিক পদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করায় ঘর তৈরিতে সময় কমে এসেছে।
আকৃতি অনুযায়ী ২০০ থেকে ৪০০ কেজি কাঠ প্রয়োজন হয় একেকটি ঘর তৈরিতে। ঢেউটিন ও প্লেইন শিট দিয়ে করা হয় বিভিন্ন নকশা। ঘরগুলো টেকসই হয় ৩০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত।
শুধু যে স্থানীয় লোকজনই এসব ঘর কেনেন তা নয়। আশপাশের জেলা থেকেও অনেকে এসে ঘর কিনে নিয়ে যান। আবার অনেকে আসেন শুধুই কৌতূহল মেটাতে; কেমন হয় এসব বাড়ি তা একবার দেখতে।
আলী আহমেদ নামের এক বিক্রেতা জানান, আকৃতি ও নকশা অনুযায়ী ঘরপ্রতি দাম পড়ে আড়াই লাখ থেকে শুরু করে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে যদি মিস্ত্রি নিয়ে নিজ জমিতে একই বাড়ি বানানো হয় তাহলে খরচ পড়ে প্রায় দ্বিগুণ।
আরেক বিক্রেতা দ্বীন ইসলাম জানান, ঘরগুলো খুব সুন্দর। বানাতেও ভালো লাগে, ক্রেতাদের কিনতেও ভালো লাগে। যত দিন যাচ্ছে তৈরি বাড়ির চাহিদা তত বাড়ছে। অনেকেই এই ঘর তৈরির পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।
জেলার বজ্রযোগিনীর মো. সাকিলের আছে ঘর তৈরির এমন প্রতিষ্ঠান। তার এখানে কাজ করেন প্রায় ৭০ জন। তাদের মধ্যে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের শ্রমিকই বেশি। তারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন।
সাকিল জানান, মহামারির আগে প্রতি মাসে ২০ থেকে ৪০টি ঘর বিক্রি করেছেন। এখন তা কমে হয়েছে সর্বোচ্চ ১০-এ। প্রতিটি ঘর থেকে লাভ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
ঘর তৈরির শ্রমিক মাদারীপুরের শিবচরের কাশেম বেপারী জানান, ঘর বিক্রি হয়ে গেলে বালু টানার বড় ট্রলি দিয়ে সেটি বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ক্রেতার জমিতে। সঙ্গে যায় ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক। বসতভিটায় নিয়ে দুই থেকে তিন দিন ধরে কাজ করে স্থাপন করা হয় ঘরটি। বসতভিটার দূরত্ব অনুযায়ী শ্রমিকরা মজুরি পান।