চাঁদপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মৃতিবিজড়িত স্থান বড়স্টেশন মোলহেডের স্মৃতিসৌধ ‘রক্তধারা’। স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তাক্ত স্মৃতিস্মরণে এখানে ছিল তিনটি ঝুলন্ত রক্তের ফোঁটার আকৃতি। গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কবলে এর একটি পড়ে যায়।
এরপর প্রায় এক মাস পার হলেও স্মৃতিসৌধটি সংস্কারে নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, অচিরেই স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার করা হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, স্বাধীনতাযুদ্ধে চাঁদপুরে পাকিস্তানি সেনাদের গড়া নির্যাতনকেন্দ্রের অন্যতম ছিল মোলহেডে। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর এ মোহনায় চাঁদপুরের স্বাধীনতাকামীদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী পাশবিক নির্যাতন চালাত।
অসংখ্য নারী-পুরুষকে নির্যাতনের পর হাত-পা বেঁধে জীবন্ত বা মৃত অবস্থায় মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দেয়ার সাক্ষী এই এলাকা। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তরুণ প্রজন্মের দাবির ভিত্তিতে সেই স্মৃতি রক্ষায় ২০১১ সালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রিয়তোশ সাহা ‘রক্তধারা’ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
তারা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করেন। এর স্থপতি চঞ্চল কর্মকার। স্মৃতিসৌধটিতে টেরাকোটার ম্যুরালে আঁকা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলির চিত্র।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভগুলো ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে যাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। অচিরেই তাই এটি সংস্কারের দাবি জানান তারা।
বড়স্টেশন মোলহেডের কেয়ারটেকার হোসেন আলী বলেন, ‘২৬ মে ঘূর্ণিঝড়ের সময় রক্তধারার তিনটি রক্তের ফোঁটা থেকে একটি বাতাসে নিচে পড়ে যায়। আমি তা সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছি।’
চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার যুদ্ধাহত এমএ ওয়াদুদ বলেন, ‘আসলে এটি হতাশাজনক। শুধু চাঁদপুরেই নয়, দেশের সব স্থানেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। আমাদের জীবদ্দশাতেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে মৃত্যুর পরে কী হবে, তা তো বুঝতেই পারছি।’
তিনি জানান, বড়স্টেশন মোলহেডটি ছিল চাঁদপুরের সবচেয়ে বড় বদ্ধভূমি। অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীকে রাজাকারদের সহায়তায় এখানে নির্যাতন করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ট্রেন ভর্তি মানুষ নদীতে ফেলেও হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি এই স্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
বড়স্টেশনে ঘুরতে আসা লাবণী আক্তার বলেন, রক্তধারা স্মৃতিস্তম্ভটি আমাদের জন্য অত্যন্ত মূলবান। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কথা জানতে পারে। শুধু তা-ই নয়, জেলার বাইরের মানুষ এখানে ঘুরতে এসে চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।
চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াস বলেন, ‘রক্তধারা স্মৃতিসৌধটি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা আমি জানতাম না। কেয়ারটেকারও এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানায়নি।
‘আমি আপনার কাছ থেকে জানতে পেরেছি। বিষয়টি এখনই মেয়রকে জানাব এবং দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করব।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতাম না। এ ব্যাপারে আমি খোঁজ নিচ্ছি। অচিরেই এটি সংস্কারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’