পিরোজপুরে এক দশকে বেড়েছে কাঠের আসবাবপত্রের চাহিদা। এই শিল্পে কাজ করে সংসার চলছে জেলার শত শত মানুষের।
জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে কাঠের খাট, শো-কেস, ওয়্যারড্রব, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র।
চমৎকার এসব কাঠের আসবাব তৈরি করে যেমন বেকারত্ব দূর হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে কর্মসংস্থান। তবে আসবাবপত্রের দোকানমালিকরা বলছেন, চাহিদা থাকলেও ঠিকমতো মুনাফা করতে পারছেন না তারা।
শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে উকিলপাড়া বা কাঁচাবাজার। এখানে দেখা মেলে সারি সারি সেগুন কাঠের আসবাব আলমারি, সোফা, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল-চেয়ারে সাজানো দোকানগুলোর।
দোকানের পেছনেই রয়েছে আসবাস তৈরির কারখানা। বছর জুড়েই চলে আসবাব তৈরির কাজ। কারখানাগুলোতে দিনভর চলে হাতুড়ি কিংবা করাত দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ।
পদ্মা ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী প্রিন্স দেউড়ী বলেন, ‘আমাদের এই বাজারে সেগুন কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা বেশি। শতভাগ সেগুন কাঠের ফার্নিচার তৈরি হয় আমার কারখানায়।’
তিনি জানান, সেগুন কাঠের জোগান আসে সুন্দরবন ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে। জোত পারমিট ও বন বিভাগের নিলাম ডাকের মাধ্যমে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও জেলার সবচেয়ে বড় গাছ কেনাবেচার হাট স্বরুপকাঠি থেকেও বিভিন্ন জাতের গাছ সংগ্রহ করা হয়। এরপর তৈরি করা হয় ক্রেতাদের পছন্দের মতো আসবাব।
প্রিন্স দেউড়ী জানান, স্থানীয় ক্রেতাদের চেয়ে বেশি ক্রেতা ঢাকা কিংবা দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ। আসবাব তৈরির পর বিভিন্ন পরিবহনে ক্রেতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
শুধু শহরে নয়, এভাবে কাঠের তৈরি শত শত কারখানা গড়ে উঠেছে পুরো জেলায়। তবে উপজেলা পর্যায়ের আসবাবের দোকান ও জেলা শহরের আসবাবের দোকানের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো দামের।
জেলা শহরে প্রতি ঘনফুট সেগুন কাঠের দাম পড়ে মানভেদে ১৫০০-৩৫০০ টাকা। আর উপজেলা পর্যায়ে ১২০০-২৬০০ টাকায় একই মানের সেগুন কাঠ পাওয়া যায়। এ কারণে ক্রেতারা গ্রামপর্যায়ের দোকান থেকে বেশি আসবাব সংগ্রহ করেন।
কাঠমিস্ত্রি প্রিন্স দেউড়ী আরও জানান, কাঠ ও রঙের দাম বেশি হওয়ায় আসবাবপত্র বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তারা। শহরে বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নমানের আসবাবও বাজারে আসায় দাম দিয়ে কিনছেন না ক্রেতারা। তাই তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘স্বল্প সুদে সরকারি সহায়তা পেলে এই শিল্প বাঁচতে পারে।’
কাঠশিল্পের সংগঠন শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ছোট-বড় কমপক্ষে ৪৩২টি কাঠের আসবাব তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব আসবাবপত্রে দারুণ কাজ ও নকশা থাকায় দ্রুত বাড়ছে আসবাবপত্রের কদর।
কাঠ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে গঠন হয়েছে পিরোজপুর কাঠশিল্প শ্রমিক ইউনিয়ন।
সংগঠনটির সভাপতি আশিষ দাস বলেন, ‘কাঠ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আমরা সব সময় কাছ করছি। সরকারের কাছে আমাদের শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি বাইরের নিম্নমানের আসবাব যেন কেউ বিক্রি করতে না পারে। তাহলে আমরা বাঁচবো, শ্রমিক বাঁচবে।’
জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘জেলায় কাঠশিল্পের দোকানগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। স্বল্প সুদে শ্রমিকদের ব্যাংক ও এনজিওগুলো আর্থিক সহযোগিতা করবে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’