অভাব-অনটনের কারণে ৩০ বছর আগে ভিটেমাটি ছেড়ে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থেকে মাদারীপুরে শিবচরে আসেন এলাহী তালুকদার। জীবিকার তাগিদে ফেরি করে আচার বিক্রি শুরু করেন তিনি।
১৩ বছর আচার বিক্রির পর ২০০৪ সালে শিবচর বাজারের সিনেমা হল এলাকায় একটি শরবতের দোকান দেন এলাহী। সেখানে এক ধরনের বিশেষ লাচ্ছি বানান তিনি। ‘এলাহীর শরবত’ নামে পরিচিত এই লাচ্ছিটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে মাদারীপুরজুড়ে।
গরুর দুধ, পেঁপে, কলা, দই, চিনি আর বরফ দিয়ে লাচ্ছি বানান এলাহী তালুকদার। ক্রেতাদের কাছে দাম রাখেন ৩০ টাকা। লাচ্ছি বিক্রি করেই মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় হয় এলাহীর। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আগের দোকানের পাশেই নতুন আরেকটি দোকান করেছেন তিনি।
প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার মাদবরের চর, বন্দরখোলা, সন্যাসীর চর, চান্দের চর এবং শেখপুর বাজার থেকে দুধ, কলা, পেঁপে, বেল, দেশি হাঁস-মুরগির ডিম সংগ্রহ করেন এলাহী তালুকদার।
বিকেল ৪টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানে বসে ব্লান্ডারের সাহায্যে শরবত তৈরি করেন। শুধু শরবতই নয়, তার দুই দোকানে সিদ্ধ ডিম, পাউরুটি, দই চিড়াও বিক্রি হয়।
ব্যবসার চাপ বাড়ায় দুই দোকানে অতিরিক্ত চার কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। আগামীতে ব্যবসা আরও বাড়িয়ে সেখানে তিনি ফালুদা বিক্রি করবেন বলেও জানান এলাহী।
বিয়ে, জন্মদিন, নানা সামাজিক অনুষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় নানা অনুষ্ঠানেও ডাক পড়তে শুরু করেছে এলাহীর শরবতের। তার তৈরি দইও এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে শিবচরসহ শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুর সদর ও ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মানুষের কাছে।
এলাহী তালুকদারের দোকানে শরবত খেতে আসা মাদারীপুর সদরের কলাগাছীয়ার মনোজ তালুকদার বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি এলাহী ভাইয়ের দোকানে আসি। কোনোদিন শরবত খাই আবার কোনো দিন দই চিড়া। এখানে গ্রামের খাঁটি জিনিস পাওয়া যায়। তাই রেগুলার আসি।’
৩০ বছর আগের সেই অভাব আর নেই এলাহী তালুকদারের। শিবচর পৌরসভার ডিসি রোড এলাকায় ছয় শতাংশ জমি কিনে গড়েছেন নতুন বসতি।
এলাহী বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে তার সঙ্গেই ব্যবসায়। ছোট ছেলে স্থানীয় একটি কলেজে ডিগ্রি (পাস) কোর্সে পড়ছেন।
এলাহী তালুকদার বলেন, ‘একসময় অনেক কষ্ট করছি। দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া আচার বিক্রি করতাম।
‘কষ্ট করছি। তাই আজ ভালো আছি।’