বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিরাপত্তা সরঞ্জাম শুধু ওয়েবসাইটেই!

  •    
  • ৭ জুন, ২০২১ ১৩:২১

ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বিদ্যুৎশ্রমিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ পানিতে ডুবে মরলেও তাদের পরিবার টাকা পায়। কিন্তু আমরা কারেন্টের তারে ঝুলে মরলেও কেউ খোঁজ নেয় না। নিউজে দেখায়, কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎশ্রমিক মারা গেছেন। ওই পর্যন্তই শেষ। কিন্তু কেন মরল, এটা আর কেউ দেখে না। আমরা মরার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিবারের লোকও না খেয়ে মরতে থাকে।’

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যেকোনো এলাকায় গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে দিন-রাত কাজ করতে হয় লাইনম্যানদের। জীবন হাতে নিয়ে পিলারে পিলারে উঠে বিদ্যুৎ-সংযোগ ঠিক রাখতে হয় তাদের। তারপরও কোনো কারণে সংযোগ ঠিক না থাকলে শুনতে হয় গ্রাহকদের নানা কথা, চোখ রাঙানিও সহ্য করতে হয় নিয়োগকর্তাদের।

অভিযোগ উঠেছে, দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) হয়ে যারা এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের নিরাপত্তা সরঞ্জামই দিচ্ছে না নিয়োগদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা, প্রাণও হারাচ্ছেন কেউ কেউ। এভাবে কেউ মারা যাওয়ার পর তার পরিবারেরও খোঁজ নেয় না কেউ, যেখানে সড়ক বা নৌ বা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় মারা গেলেও তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়।

এই বিদ্যুৎযোদ্ধাদের অভিযোগ, ডিপিডিসির নির্দেশনায় শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যাবশ্যকীয় থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমনকি নিরাপত্তা সরঞ্জামের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও আত্মসাৎ করছে তাদের নিয়োগদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেডএফ এন্টারপ্রাইজ।

লাইনম্যানদের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, শ্রমিকদের সব নিরাপত্তা সরঞ্জামই দেয়া হয় এবং সেগুলোর ছবিও আছে তাদের ওয়েবসাইটে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধান বলছে, ১২ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জামের ছবি ওয়েবসাইটে থাকলেও শ্রমিকদের কাছে থাকে না। শুধু বিশেষ এলাকার ক্ষেত্রেই তারা পান হেলমেট আর বুট।

ডিপিডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, লাইনম্যানদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়া বাধ্যতামূলক। এই সরঞ্জামের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তারা সেটা সরবরাহ না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিপিডিসির বেশ কয়েকজন লাইনম্যান নিউজবাংলাকে তাদের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তাদের একজন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের কাজের মতো জীবনের রিস্ক আছে- এমন কাজ বোধহয় আর নেই। চাকরির সময় বলে- আমাদের এটা দেবে, ওটা দেবে। তবে লাইনের কাজে যাওয়ার সময় কচুও দেয় না। খালি হাত-পা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়।’

আরেকজন শ্রমিক বলেন, ‘আগে এলাকায় দেখতাম লাইনম্যানদের পিলারে ওঠার জন্য বুট দিত, হেলমেট দিত। এখন নিজে চাকরিতে এসে সেগুলোও দেখি না। বুঝলাম যে, আমরা মই বেয়ে উঠে কাজ করি। তারপরও কি আমাদের নিরাপত্তার দরকার হয় না? আমাদের দরকার ঠিকই আছে। কিন্তু অফিস বুঝতে চায় না। বুঝলে তো আর টাকা মেরে খেতে পারবে না।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় কাজ করতে গেলে লোক দেখানোর জন্য আমাদের একটা হেলমেট, এক জোড়া বুট দেয়। বেশির ভাগ সময়ই কিন্তু আমরা খালি শরীরে কাজ করি।

‘এ কারণে কতজন যে মরেছে, তার কোনো হিসাব নেই। আবার কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ হিসেবেও কোনো টাকা পায় না, যেখানে সড়ক, নৌ বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার শিকার সাধারণ মানুষের পরিবারও নানা ধরনের ক্ষতিপূরণ পায়।’

একই রকম ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘মানুষ পানিতে ডুবে মরলেও তাদের পরিবার টাকা পায়। কিন্তু আমরা কারেন্টের তারে ঝুলে মরলেও কেউ খোঁজ নেয় না। নিউজে দেখায়, কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎশ্রমিক মারা গেছেন। ওই পর্যন্তই শেষ। কিন্তু কেন মরল, এটা আর কেউ দেখে না। আমরা মরার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিবারের লোকও না খেয়ে মরতে থাকে।’

শ্রমিকদের এই অভিযোগ ও ক্ষোভের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেডএফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোকলেসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখেন ছবি আছে। দেখেন সেখানে শ্রমিকরা নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরে আছে।’

সেগুলো মাঠপর্যায়ে লাইনম্যানদের সরবরাহ করা হয় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানাব।’

ডিপিডিসির উপমহাব্যবস্থাপক নিহার রঞ্জন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লাইনম্যানদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়া বাধ্যতামূলক। কারণ তারা তাদের লাইফ রিস্ক নিয়ে কাজ করেন। সে জন্য শু, সেফটি ড্রেস, হেলমেট, বিশেষ বেল্টসহ ১২টি নিরাপত্তা সরঞ্জামের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তারা সেটা সরবরাহ না করে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

‘হিসাবধারীরা যেভাবে চাইবে সেভাবেই বেতনের টাকা’

নিউজবাংলার এর আগের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই বিদ্যুৎযোদ্ধাদের ব্যাংক থেকে এসএমএস দিয়ে যে টাকা ঢোকার কথা জানানো হয়, আসলে তারা তার অর্ধেকটা পান। সে টাকাও তাদের নিতে হয় কয়েক দিন পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাতে হাতে। রক্ত পানি করা পরিশ্রমের টাকার অর্ধেকটা পেলেও চাকরি হারানোর ভয়ে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলার সাহস পান না এসব লাইনম্যান। তবে তাদের এ অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোকলেসুর রহমান।

ব্যাংক থেকে হিসাবধারীর পরিবর্তে অন্যদের কেন টাকা দেয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের তোপখানা শাখার ব্যবস্থাপক মো. ইকবালের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘এ রকম হলে সেটা জঘন্য কাজ। এতে আমাদের ব্যাংকেরও ক্ষতি। হিসাবধারীরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা যেভাবে চাইবে সেভাবেই বেতনের টাকা দেয়া হবে।’

ঘটনাটি কীভাবে ঘটতে পারে, তার ব্যাখ্যায় এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘ধরেন, আপনার ভাইয়ের অ্যাকাউন্টের চেকবই আপনি নিয়ে এসেছেন। আপনার ভাই সই দিয়ে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। আপনাকে টাকা দিতেই হয়।

‘ডিপিডিসির লাইনম্যানদেরও এমনটা হতে পারে। তাদের সই ছাড়া কোনো টাকা কাউকে দেয়া হয়নি। এখন তারা যদি চান, নিজে না আসলে তাদের অ্যাকাউন্টের টাকা অন্য কেউ তুলতে পারবেন না, আমরা সেই ব্যবস্থা করে দেব।’

এ বিভাগের আরো খবর