কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা করা হলেও এখনও সেখানে কুপির আলোয় কাটছে অনেকের রাত। বিদ্যুতের খুঁটি বসার প্রায় দুই বছর পার হলেও বিদ্যুতের সংযোগ মেলেনি।
সীমান্ত ঘেঁষা ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমণ্ডল আবাসন বা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয় ২০১০ সালে। এটি উপজেলার দুস্থ অসহায় ৬০টি ভূমিহীন পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গুচ্ছগ্রামে আশ্রিত দুই শতাধিক মানুষের মাথার ওপর ছাদের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের সুফল জোটেনি তাদের কপালে। কেরোসিনের কুপিবাতি, হারিকেনের আলোতেই জীবন কাটছে তাদের।
বিদ্যুতের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও লাভ হচ্ছে না গুচ্ছগ্রামবাসীর। অন্ধকারেই লেখাপড়া করতে হচ্ছে স্কুলশিক্ষার্থীদের।
বিদ্যুৎ ছাড়া গরমের দিনগুলোয় গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে গেছে ২০টি পরিবার। ঠাঁই নিয়েছে অন্যত্র।
দুই বছর আগে বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিদ্যুতের লাইন স্থাপিত হলেও এখনও সংযোগ দেয়া হয়নি গুচ্ছগ্রামে। ফলে সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ-সুবিধার সুফল থেকে বঞ্চিত এখানকার দরিদ্র পরিবারগুলো।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মালেকা বেগম বলেন, ‘হামার জমিজমা না থাকায় গুচ্ছগ্রামে হইছে থাকি এটে আছি। সাখানে কারেন দিলেও হামার গুচ্ছগ্রামত নাই আইসে। সে জন্য এলাও হামরাগুলা রাত হইলে অন্ধকারতে থাকি। আইতোত ন্যাম্পো (কুপিবাতি) নাগে আন্দন করি। সেই আলোতে খাই। আর গরমোত থাকায় না যায়।’
শিক্ষার্থী আম্বিয়া খাতুন জানায়, বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচণ্ড গরমে পড়াশোনা ঠিকমতো হয় না। কুপির আলোয় বেশিক্ষণ লেখাপড়া করা যায় না। চোখ জ্বালাপোড়া করে।
গুচ্ছগ্রামের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও সরকারের বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছি না। গুচ্ছগ্রামে রাত হলেই বিপদ বাড়ে। নারী-পুরুষ-শিশু সবাই কষ্ট করে চলছি। বিদ্যুতের পোল বসাবার প্রায় দুই বছর পার হইল। এলাও লাইন দেয়নি। বহুবার বিদ্যুৎ অফিস গেছি লাইনের জন্য, তা-ও পাইনি।’
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুসাব্বের আলী মুসা বলেন, ‘শুধু গুচ্ছগ্রাম নয়, আমার এলাকার খোকারচরে এখনও পাঁচটি গরিব পরিবার বিদ্যুৎ-সংযোগ পায়নি। তাদের জন্য বারবার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।’
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফুলবাড়ী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল বলেন, চর গোরকমণ্ডল গুচ্ছগ্রাম এবং খোকার চরের পাঁচ পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। কিন্তু গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ওই পাঁচটি পরিবার এখনও জামানত, সদস্য ফি না দেওয়ায় এবং ওয়্যারিং না থাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ পায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস জানান, এ বিষয়ে খোঁজখরব নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।