বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যমুনার ভাঙন: নিঃস্ব নদীপাড়ের মানুষ

  •    
  • ৪ জুন, ২০২১ ১৩:৩৯

বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি পেলেও হয়নি বাঁধ নির্মাণ। নদীভাঙন রোধে কার্যকর কোনো কাজ শুরুই হয়নি দীর্ঘদিনে। তবে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে ভাঙন রোধে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।

বাড়ছে যমুনা নদীর পানি, সেই সাথে বাড়ছে নদীতীরের বাসিন্দাদের ভয়। ইতিমধ্যেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, চৌহালী ও এনায়েতপুরে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তিন শতাধিক বসতভিটা, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।

ভাঙনকবলিতদের অভিযোগ, বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও নদীভাঙন রোধে কোনো কাজ শুরুই হয়নি। তবে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে ভাঙন রোধে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। পানি বৃদ্ধি শুরু হতেই জেলার এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ থেকে শাহজাদপুরের কৈজুরি পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদীতীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে ভাঙন।

গত এক সপ্তাহে শাহজাদপুরের কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল ও হাট পাচিল, জালালপুর ইউনিয়নের পাকরতোলা ও এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামে তিন শতাধিক বসতভিটা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এসব এলাকার ভাঙনকবলিতরা সহায়-সম্বল হারিয়ে রাস্তার পাশে বা অন্যের জমিতে আশ্রয় গ্রহণ করছেন। পরিবারের নারী-শিশুসহ গবাদিপশু নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া মানুষেরা।

এদিকে যমুনা নদীর পানি বাড়ার প্রভাবে চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের হাটাইল, ঘুশুরিয়া, হিজুলিয়া, কাঠালিয়া ও উমারপুর ইউনিয়নের পয়লার প্রায় তিন কিলোমিটার নদীতীরবর্তী এলাকায়ও ভাঙন শুরু হয়েছে। এই এলাকাগুলোর বিস্তীর্ণ ফসলি জমিসহ হাটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম হাটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে এই এলাকাগুলোর নদীতীরবর্তী হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম সম্ভুদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাস মধ্য শিশুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিশ্রিগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারবয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসুফ শাহি সলঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলজলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শৈলজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাটাইল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ থেকে শাহজাদপুরের কৈজুরি পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদীতীরবর্তী এলাকা বরাবরই অরক্ষিত। প্রতিবছরেই এই এলাকাগুলোতে দেখা দেয় নদীভাঙন, নিঃস্ব হয় মানুষ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যথারীতি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন প্রতিবছর। তারা নদীভাঙন বন্ধে দ্রুত কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দেন বারবার, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। ফলে বছরের পর বছর নদীভাঙনের শিকার হয়ে ফসলি জমি, বসতভিটা হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক কৃষক।

নদীভাঙনকবলিত কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল গ্রামের আব্দুল খালেক নিউজবাংলাকে বলেন, 'পৈতৃক সূত্রে ১৬ বিঘা ফসলি জমি ও তিন বিঘার একটি বসতবাড়ি পেয়েছিলাম। বাড়িতে অন্তত ১৮টি দুধেল গাভি ছিল। গত কয়েক বছরের ভাঙনে প্রায় সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, গত ২৯ মে আমার শেষ সম্বল ৩৫ কাঠার ফসলি জমি আর বসতভিটা একসাথে ভাঙতে শুরু করেছে। ঘড়বাড়ি ভেঙে সরিয়ে রাস্তার পাশে রেখেছি, এখন নিঃস্ব হয়ে পথে নেমে গেলাম। তিন বছর আগে আমার জমি যখন ভাঙা শুরু হয়, তখন থেকেই শুনছি নদীতে বাঁধ দেয়া হবে, কিন্তু আজও কোনো কাজ শুরু হলো না অথচ আমার সব শেষ হয়ে গেল।'

এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামের বৃদ্ধ মজিবর রহমান বলেন, 'কিছুদিন আগে স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রী এসে বলে গেল এক চাপ জমিও নদীতে যেতে দেয়া হবে না। অতিদ্রুত বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। অথচ গত এক সপ্তাহে তিন শতাধিক বসতভিটা ও কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেল। ভাঙন বন্ধ করতে কোনো কাজ শুরু তো দূরের কথা, কেউ খোঁজখবর নিতেও আসেনি।'

জালালপুরের পাকরতোলা গ্রামের চায়না বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল কৈজুরির পাচিলে। সেখানে ভাঙনে আমাদের বসতভিটা নদীতে চলে যাওয়ায় পাকরতোলা এসে এক আত্মীয়ের জমিতে ঘড় তুলেছি। এখন এই বাড়িও নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। দুবছর আগেও গোয়ালে গরু, গোলাভরা ধান ছিল, এখন আমরা নিঃস্ব। সরকার সহযোগিতা না করলে আমাদের আর কোনো উপায় নেই।

স্থানীয় কবির হোসেন, হাসানুজ্জামান জানান, পাচিল, হাট-পাচিলে যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে, গত এক সপ্তাহে তিন শতাধিক বসতভিটা ও প্রচুর ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো তৎপরতা নেই। দ্রুত এই ভাঙন থামাতে কাজ শুরু করা না হলে অল্প সময়েই হয়তো এই দুটি গ্রামই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, এনায়েতপুর থেকে কৈজুরি পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার অরক্ষিত নদীতীর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হবে। সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি দ্রুতই অনুমোদন হবে। অনুমোদনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে এই এলাকায় আর ভাঙন থাকবে না।

এই নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার মহোদয়ের পরামর্শক্রমে ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে চর কেটে নদীর স্রোত পরিবর্তনের জন্য ২৬ ইঞ্চি একটি ড্রেজার আনা হচ্ছে। ড্রেজারটি পৌঁছলে দ্রুত চর কেটে দেয়া হবে। তখন ভাঙন থেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর