মিরপুর চিড়িয়াখানায় খাঁচাবন্দি প্রাণীদের মুক্ত পরিবেশে বিচরণের সুযোগ তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য চিড়িয়াখানার ভেতরের পরিবেশ ঢেলে সাজানো হবে।
এই মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ করছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেড।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, জুনের মধ্যেই মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার কথা। এরপর সেটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অনুমোদন পেলেই শুরু হবে বাস্তবায়নের কাজ।
ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নের মহাপরিকল্পনা তৈরিতে ২০১৯ সালে বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। এরপর প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা কয়েক দফা চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করেছে।
এই মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, জাতীয় চিড়িয়াখানাকে সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানার আদলে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাণীদের বিচরণের জন্য খাঁচার বদলে থাকবে আলাদা আলাদা বন্য পরিবেশ।
ঘন গাছপালার পাশাপাশি জলজ প্রাণীর জন্য থাকবে হ্রদ। দৃষ্টিনন্দন এই পরিবেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু হতে পারে আগামী বছরই।
চিড়িয়াখানার পরিচালক আব্দুল লতিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির (বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেড) সঙ্গে মিলে মাস্টার প্ল্যান করা হচ্ছে। তারা মহাপরিকল্পনাটি ডিপিসিতে (ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানারস অ্যন্ড কনসালট্যান্ট) জমা দেবে। তারপর এটি বাস্তবায়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
‘এই প্ল্যান অনুমোদন পেলে আমরা নতুন করে চিড়িয়াখানা সাজাতে পারব। তখন এটি অনেকটা সুন্দরবনের মতো হবে।’
কী থাকছে মহাপরিকল্পনায়
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেডের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, ওয়াইল্ড লাইফ ও ইকো ট্যুরিজমবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা কাজ করছে। এ বিষয়ে বিশ্বজুড়ে কয়েক শ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশাপাশি রংপুর চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নেও পরামর্শ দিচ্ছে বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেড।
ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নের বিষয়ে আব্দুল লতিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা খোলামেলাভাবে প্রাণীদের উপস্থাপন করব। সুন্দরবনে যেমন হরিণ লেকে পানি খেয়ে আবার বনে ফিরে যায়, এখানেও তাই থাকবে।
‘চারটা বা পাঁচটা সেক্টরে ভাগ হবে চিড়িয়াখানা। একদিকে বাংলাদেশকেন্দ্রিক প্রাণীর এবং অন্যদিকে আফ্রিকান জোন থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানার মধ্যে দুইটা লেক আছে। এটি অনেক বড় বিষয়। সেখানে আমরা ভাসমান রেস্তোরাঁর কথা চিন্তা করেছি। এ ছাড়া রোপ ওয়ে ও বার্ড শোর চিন্তা করেছি। আধুনিক মাস্টার প্ল্যানে ডলফিন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অন্যান্য দেশে পানিতে ডলফিন যেভাবে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেয় সেভাবে এখানেও ব্যবস্থা থাকবে।
‘আমাদের চিড়িয়াখানার বাউন্ডারি হবে পাইলিং সিস্টেমে। এ ছাড়া বাফার জোন ও ওয়াকওয়ে থাকবে আলাদা করে। পানি বিশুদ্ধকরণ সরঞ্জাম থাকবে।’
কবে নাগাদ চিড়িয়াখানার রূপ বদলানোর কাজ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে আব্দুল লতিফ বলেন, ‘যদি আমরা এ বছরের জুনের মধ্যে এটি (মহাপরিকল্পনা) হাতে পাই, তবে ধাপে ধাপে কাজ শেষ করা হবে। আধুনিক চিড়িয়াখানা বলতে যা বোঝানো হয়, আমরা সেটাই করব। সেখানে সাফারি পার্কও থাকবে।’
উন্নত দেশের মতো জাতীয় চিড়িয়াখানায় থাকবে ডিজিটাল ম্যাপ।
এ নিয়ে আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমাদের এখানে আপাতত অ্যানালগ পদ্ধতি রয়েছে। আপনি ঢুকলেই বানরের খাঁচার পাশে একটা বোর্ডের দিক নির্দেশ দেখতে পাবেন। তবে আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। তাই ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করা হবে।’
খাঁচায় প্রাণী আটকে রাখার পদ্ধতি অনেক পুরোনো আমলের উল্লেখ করে চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, ‘এভাবে আটকে রাখার কনসেপ্ট কিন্তু অন্য কোথাও নেই। আধুনিক সময়ের চিন্তা হচ্ছে, প্রাণীদের খোলামেলা পরিবেশে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনে যেভাবে হরিণ দেখি এখানেও সেভাবে দেখার ব্যবস্থা করা হবে। একইভাবে বাঘ বা সিংহকেও আমরা উপস্থাপন করব।’