বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জোয়ারের উচ্চতা বাড়ে, উঁচু হয় না বাঁধ

  •    
  • ১ জুন, ২০২১ ১২:০৯

পাউবোর পানি পরিমাপকদের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনার পায়রা, বলেশ্বর ও বিশখালী নদীর জোয়ারের পানির স্বাভাবিক উচ্চতা ২৮৫ সেন্টিমিটার বা ৯ ফুট। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমায় জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট বা ১২৩ সেন্টিমিটার বেশি উচ্চতা হয় পানির। অর্থাৎ বেড়িবাঁধের ১২ ও ১৩ ফুট সমান উচ্চতায় অতি জোয়ারে পানি প্রবাহিত হয়।

‘বইন্যার সংকেত দেলেই মোগো পরানডা কাইপ্পা ওডে, চিন্তায় পইড়্যা যাই। মাইয়া পোলা লইয়া পরানডা ক্যামনে বাঁচামু। জোয়ারের পানিতে মোগো ওয়াপদা তলাইয়া যায়। হেইরপর যদি বইন্যা ছোডে, এই ওয়াপদা মোগো রক্ষা হরতে পারবে?’

প্রশ্নটি বরগুনার পাথরঘাটার ইউনুস আকনের। তার বাড়ি পাথরঘাটার বিশখালী নদীর তীরঘেঁষা কালমেঘা ইউনিয়নের দক্ষিণ কুপদোন গ্রামে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত ১০ বচ্ছর ধইরা জোয়ারের পানি খালি বাড়তেই আছে। আমাবইশ্যা, পূর্ণিমার জোয়ারে আগের চাইতে অনেক বেশি পানি আসে গাঙ্গে। কিন্ত হেই তুলনায় মোগো বেড়িবাঁধ উচা অয় না।’

ইউনুসের কথাগুলো অমূলক নয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জেলায় ৮০৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ১২ ফুট বা তার কম উচ্চতায় ৩০০ কিলোমিটার ও বাকি ৫০০ কিলোমিটারের গড় উচ্চতা ১৩ ফুট বা তার বেশি।

অর্থাৎ নদীতে জোয়ারের পানি ১২ ফুটের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হলেই এসব এলাকার বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।

পাউবোর পানি পরিমাপকদের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনার পায়রা, বলেশ্বর ও বিশখালী নদীর জোয়ারের পানির স্বাভাবিক উচ্চতা ২৮৫ সেন্টিমিটার বা ৯ ফুট। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমায় জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট বা ১২৩ সেন্টিমিটার বেশি উচ্চতা হয় পানির। অর্থাৎ বেড়িবাঁধের ১২ ও ১৩ ফুট সমান উচ্চতায় অতি জোয়ারে পানি প্রবাহিত হয়।

এ নিয়ে কথা হয় পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের পানি পরিমাপক মাহতাব উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে জোয়ারের পানি পরিমাপ করেন।

মাহতাব বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় এখানে সর্বোচ্চ ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। এরপর আইলার সময় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি। ঠিক একইভাবে মহাসেন, বুলবুল, মোড়াসহ উপকূলের বয়ে যাওয়া ঝড়ের সময় উপকূলীয় বরগুনা জেলার নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৫ থকে ৬ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ঝড়ের সময়ই নয়, শীত মৌসুম ব্যতীত বছরের অন্য সময়ে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে গড়ে তিন ফুট বা তার চেয়ে বেশি উচ্চতায় নদীর পানি প্রবাহিত হয়।’

উপকূলীয় পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে গবেষণা করেন এম জসীম উদ্দীন।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে। এর কারণ হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ দেশ তুলনামূলক কম উচ্চতায় রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘১৯৭৭ থেকে ১৯৯৮ এই ২২ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর কক্সবাজারে ৭.৮৮ মিলিমিটার, হাতিয়ার চর চাঙ্গায় ৬ মিলিমিটার ও (সুন্দরবনের) হিরণ পয়েন্টের কাছে ৪ মিলিমিটার করে বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যে মাত্রাতেই বাড়ুক না কেন, এর প্রভাবে নদীগুলোতে পানির স্তর বাড়ে।

‘যেহেতু বাংলাদেশের বেশিরভাগ উপকূলীয় সমভূমির (দেশের মোট আয়তনের ১৮ শতাংশের সমান) উচ্চতাই সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতার চাইতে মাত্র ৩ থেকে ৫ মিটার বেশি। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে দেশের উপকূলের এক বিরাট এলাকা পুরোপুরিভাবেই নিমজ্জিত হয়ে যাবে।’

জসীম বলেন, ‘এ কথা মনে রাখা দরকার যে, বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মাটিতে পলি পড়া ও ব-দ্বীপ গঠনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। ফলে প্লাবন ও জলাবদ্ধতার যে সমস্যা সেটি ভবিষ্যতেও উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকবে।’

৪০ বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরেন পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা জয়নাল মাঝি।

তার ভাষ্য, ‘২০ বচ্ছর আগে যেইহানে জাল ফালাইয়া তল (গভীরতা) পাইতাম না, এহন সেইহানে মোগো ২০-৩০ ফুটের জাল ঠেইক্কা যায়।

‘মোরা সাগরের বিভিন্ন জায়গায় জাল ফালাইয়া মাছ শিকার করি। আগের চাইতে সাগরের গভীরতা অনেক কইম্মা গ্যাছে।’

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, ‘বরগুনা জেলার ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার সংষ্কার করে জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় সক্ষম করে তৈরি করা হয়েছে।

‌‘বাকি ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে ঝুঁকি বিবেচনায় ১০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ যুগোপযোগীভাবে নির্মাণ করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি সরকার বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর