বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অপরাধে জড়াচ্ছে দিনাজপুরের কিশোর-যুবকরা

  •    
  • ৩০ মে, ২০২১ ০৮:৪১

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত দিনাজপুরে মাদক, ছিনতাই, ডাকাতির বেশ কয়েকটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার অধিকাংশই কিশোর ও যুবক।

করোনাভাইরাস মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিষণ্নতায় ভুগছে দিনাজপুরের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। বিভিন্ন অপরাধ চক্রের তৎপরতায় তারা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ কার্যক্রমে। অপরদিকে যুবক ও কিশোররা নিজেরাই গড়ে তুলছে কিশোর গ্যাং। তাদের হাতে ঘটছে নানা ধরনের সহিংস ঘটনা।

দিনাজপুর জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত দিনাজপুরে মাদক, ছিনতাই, ডাকাতির বেশ কয়েকটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার অধিকাংশই কিশোর ও যুবক। এসব মামলায় আসামির তালিকায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নাম উঠে আসছে।

গত ১৯ মার্চ দিনাজপুর শহরের জিলা স্কুলের পেছনে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২০ কিশোর ও যুবককে আটক করে। এদের ১৩ জনই শিক্ষার্থী। এর মধ্যে দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাঁচজন, বিরল সরকারি কলেজের চারজন, দিনাজপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের দুইজন, সরকারি সিটি কলেজের একজন ও মাউন্ট এভারেস্ট কলেজের একজন ছাত্র রয়েছে।

আটক অন্য সাত কিশোর ও যুবক হলেন দিনাজপুর শহরের স্টেশন রোডের ভাঙারি দোকানের কর্মচারী রতন হোসেন, শহরের বাহাদুর বাজারের মাছবিক্রেতা আবু বক্কর সিদ্দিক, বাহাদুর বাজারের কাপড় দোকানের কর্মচারী মনি হোসেন, বিশাল আহমেদ এবং শরিফ, কাচারী এলাকার কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী রকি ইসলাম ও পাটোয়ারী বিজনেস হাউজের কর্মচারী শান্ত।

এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোমিনুল ইসলাম।

তিনি জানান, কিশোর ও যুবকরা নিয়মিত সেখানে বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করত। পাশাপাশি মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলত। পরে মানবিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

আটক অপর সাত কিশোর ও যুবকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, লকডাউনের কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যুবকেরা নেশাগ্রস্ত হয়ে নানান ধরনের অপরাধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

সবশেষ ২২ মে মধ্যরাতে ঘোড়াঘাটে ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে দেশীয় অস্ত্র ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামসহ চার যুবককে আটক করে পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ডাকাতির চেষ্টায় জড়িত মোট ১০ ব্যক্তির নামে পুলিশ মামলা করে।

ওই মামলায় ১০ আসামির ৮ জনের বয়স ২৫ বছরের নিচে। আবার ওই ৮ জনের ৩ জনই দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আর ২ জন করোনাভাইরাস আসার আগে রাজধানীর বিভিন্ন কলকারখানায় কাজ করত।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোমিনুল আরও তথ্য জানান, ছয় যুবকের নামে আগে কোনো অপরাধ সংগঠনের তথ্য নেই। তারা এই প্রথম ডাকাতির মতো বিপজ্জনক অপরাধে জড়িয়েছে। মামলার অপর চার আসামির বিরুদ্ধে বিগত সময়ে অপরাধ সংঘটনের একাধিক মামলা রয়েছে।

মামলা ও গ্রেপ্তারের বাইরে গত পাঁচ মাসে জেলাজুড়ে বেশ কয়েকটি কিশোর সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় রক্তাক্ত হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। ইভটিজিং ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোর এবং স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করছে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার নুরজাহানপুর অব. সামরিক কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দুটি গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে শিফাত ও আবির নামে নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।

দিনাজপুর শহরের পুলহাট এলাকার বাসিন্দা সাবের হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার করোনা মোকাবিলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই লকডাউনের সময় আমাদের সন্তানদের বাড়িতে রাখাই যায় না। তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেয়। এতে করে আমরা জানতে পারি না যে, আমাদের সন্তানরা কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হলো কি না।’

অপরদিকে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোর নিউজবাংলাকে জানায়, সারা দিন বাড়িতে থাকতে তার ভালো লাগে না। স্কুল যখন খোলা ছিল, তখন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতো। কিন্তু এখন সব বন্ধ। তাই এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয় সে।

কিশোরটি বলে, ‘কিছুদিন আগে দেখলাম আমার কিছু বন্ধু নেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে ইভটিজিংও করে। কাউকে ভয় পায় না।’

গত পাঁচ মাসের আগে কি চিত্র জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোমিনুল আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত লকডাউনের কারণে যুবক কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বেশি ঘটছে। এর আগে গত বছরের শেষ পাঁচ মাসে চুরি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে সেগুলোতে যুবক কিশোরদের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘কিশোর ও যুবকরা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ হতাশা। দীর্ঘসময় লকডাউনে তারা নানা রকম হতাশায় ভুগছে। তবে লকডাউনের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে হবে।

‘করোনার প্রথম ধাপে সরকার জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে বর্তমানে তা আর দৃশ্যমান নেই। দীর্ঘ সময় পর সার্বিক দিক বিবেচনায় সরকার যানবাহন, লঞ্চ ও ট্রেন খুলে দিয়েছে। এবার স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে আমাদের শিক্ষার্থীদের মনোবল একেবারে ভেঙে যাবে।’

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, ‘গত পাঁচ মাসে ঘোড়াঘাট থানায় বিভিন্ন অপরাধের বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। আমাদের হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের অনেকেই যুবক।

‘এমনও আসামি আমরা পেয়েছি, যারা আগে কোনো অপরাধ করেনি। এই প্রথম তারা বিভিন্ন অপরাধী ব্যক্তির সংস্পর্শে অপরাধে জড়িয়েছে।’

ওসি আরও বলেন, ‘লকডাউনে সন্তানের ওপর বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন অভিভাবকদের। তাদের সন্তানরা কার সাথে মিশছে, কী কাজ করছে, তার ওপর নজর দিতে হবে। সচেতনতাই পারে সন্তানকে অপরাধ থেকে রক্ষা করতে।’

এ বিভাগের আরো খবর