মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরে আশ্রয় দেয়া বৃদ্ধ নুরুল ইসলামের পাশে এবার দাঁড়িয়েছেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবীনেওয়াজ।
গত ২৯ এপ্রিল ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দাতার দিন কাটে আটা-চিড়া খেয়ে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। পরে প্রতিবেদনটি জেলাজুড়েই আলোচনার জন্ম দেয়।
প্রতিবেদনটি দেখে পরদিন একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের সম্পাদক বৃদ্ধ নুরুল ইসলামের বাড়িতে আর্থিক সহায়তা ও বাজার-সদাই পাঠিয়ে দেন।
একই দিন সস্ত্রীক নুরুলের ভাঙা ঘরে হাজির হন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের গাইবান্ধা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শেখ রোহিত হাসান রিন্টু। তার বাবাও ছিলেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরপর তিনি নিজ উদ্যোগে নুরুল ইসলামকে একটি নতুন ঘর তৈরি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে ভাঙা খাট পাল্টে দুটি নতুন খাট দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন।
পরের দিন তিনি নুরুল ইসলামের বাড়িতে ঘর নির্মাণের যাবতীয় মালামাল পাঠিয়ে নির্মাণকাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ঘরটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা উদ্বোধনের।
এরই মধ্যে নুরুল ইসলামের বাড়িতে প্রতিনিধি পাঠিয়ে তার ভাঙা ঘর পরিদর্শন করেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের ইউএনও মো. নবী নেওয়াজ। এরপর তার নামে সরকারি বাড়ি বরাদ্দের ঘোষণা আসে ইউএনওর দপ্তর থেকে।
টিনশেড ঘরের পর এবার পাকা বাড়ি পাচ্ছেন নুরুল; হঠাৎ এমন খবরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন এই বৃদ্ধ। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে হঠাৎ বলে ওঠেন, ‘কী কন! ফির ঘর পামো। একটা না পানো। এটা ফির কেটা দিবি; তাই কোটে। এনা দেখনো হয় তাক।’
এ সময় নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তোমরা যাই যা কন কও, সামবাদিক বাবা এটা কী খেলা দেখাল। কয়দিন আগত ঘরত সুত্তের পাই নাই। ঝড়ি পড়ে, কুত্তে-শিয়েল সানদায়। হঠাৎ আসি ঘরের ছবি তুলি নিয়া গেল।
‘অপ্পিএনা পর আসি হামাক কয়- চল বাজার করি দেম। হামি তো টাসকি নাগনো। বাজারও করি দিল এক বস্তা। তাক মাসখানেক ভালোই খানো।’
‘পরের দিন ফির চার চাকার গাড়ি নিয়ে এক বাবা আলো। হুট করি কয়; চাচা তোমাক ঘর করি দেমো। এটা কেমন কথা। ভিনদেশি একটা চেংরা হামাক ঘর দিল। হামি খুব খুশি। তাই এখন সোতার চকিও (খাট) দিবি।'
তিনি আরও বলেন, ‘আজ ফির ঘুম থাকি উঠি দেখি সামবাদিক বাবা আগনেত (উঠান) বসি আছে। তাই কাছত ডাকি নিল। পরে কয়, চাচা জমির দলিলপাতি কোনটে। তোমার তো ফির পাকা বাড়ি হবি। টিএনও (ইউএনও) বলে ঘরটা করি দিবি।
‘টিএনও সাহেবের ভালো হোক। আল্লাহ তার ভালো করুক। এদেন একটা কাম করি দিলি তাই। আলহামদুলিল্লাহ।’
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শেখ রোহিত হাসান রিন্টু তার দেয়া উপহারের ঘরটির নির্মাণকাজের দেখভাল করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘চাচার প্রতি একটা আত্মার টান তৈরি হয়েছে। এখন তার বাসযোগ্য ঘর হয়েছে। দেখে ভালো লাগছে। এরই মধ্যে চাচার ঘরটি গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে উদ্বোধন করব।’
এ বিষয়ে সাদুল্যাপুরের ইউএনও মো. নবীনেওয়াজ বলেন, ‘নুরুল ইসলাম একজন সম্মানিত মানুষ। তিনি একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তার ঘরে আশ্রয় দিয়েছিলেন; যা গণমাধ্যমে জানতে পারি।
‘তাকে নিয়ে যে প্রতিবেদনটি পড়েছি, সেটা খুবই দুঃখজনক। সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিনিধি পাঠিয়ে তার খোঁজ নিয়েছি। এরপর তাকে ঘর বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নুরুল ইসলামকে খ-শ্রেণির ঘর করে দেয়া হবে। আগামী রোববার থেকে ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’