বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মা সেতুর নিচ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন

  •    
  • ২৯ মে, ২০২১ ০৮:৪০

সেতুর ৩৯তম স্প্যানের নিচে খননযন্ত্র বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। স্প্যানের গোড়ায় মেশিন বসিয়ে রাতদিন চলছে বালু তোলার কাজ। একের পর এক বাল্কহেড (বালুবাহী ট্রলার) সেই উত্তোলিত বালু বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন চলছে। তিনটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রতিষ্ঠান। এই বালু দিয়ে করা হচ্ছে একটি সরকারি প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হয়েছে, তাদের বালু উত্তোলন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানটিকে শুধু সেতু এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বালু তোলার নয়।

বালু তোলার কাজটি করছে মেসার্স খোকন কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ৪-এর খ ও গ ধারা অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের পদ্মা নদী ঘুরে দেখা যায়, সেতুর ৩৯তম স্প্যানের নিচে খননযন্ত্র বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। স্প্যানের গোড়ায় মেশিন বসিয়ে রাতদিন চলছে বালু তোলার কাজ। একের পর এক বাল্কহেড (বালুবাহী ট্রলার) সেই উত্তোলিত বালু বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

খননযন্ত্রে দাঁড়িয়ে বাল্কহেডের সিরিয়াল করছিলেন খোকন কনস্ট্রাকশনের সুপারভাইজার মো. জসিম উদ্দিন। সাংবাদিকদের দেখে তিনি ছুটে আসেন। তিনি একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, ‘বালু তোলার আমাদের লিখিত অনুমতিপত্র আছে।’

দুই পৃষ্ঠার সেই অনুমতিপত্র পড়ে দেখা যায়, সেটিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শুধু নৌযান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। বালু তোলার অনুমতির কোনো উল্লেখ নেই।

সুপারভাইজার মো. জসিম উদ্দিনকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তিনি বলেন, ‘এর বাইরে আমার কাছে আর কোনো কাগজ নাই। অফিসে থাকতে পারে।’

অপরিকল্পিত বালু তোলার ফলে পাশেই পাইনপাড়া চরে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। বালু উত্তোলনরোধে চরের ১১০ পরিবার জেলা প্রশাসক বরাবর করেছেন লিখিত আবেদন।

ওই চরের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ‘ডেজার দিয়ে রাইত দিন কাটতাছে। এইয়া লইয়্যা অনেক কিছু অইয়া গ্যাছে। হ্যারা মানতেই আছে না। চুরি করইরা কাটলেও কাইট্যা নেয়। হ্যারা যদি আমাগো এমন ক্ষ্যাতি না করত, তাইলে আমাগো ক্ষ্যাতি অইত না। অহন পোলাহান লইয়া কোনো উপায় নাই। চরের মানুষ আমরা ধানি আলোডি করি। হেইয়া সব বাঙ্গোনে শ্যাষ।’

বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি প্রকল্পের স্বার্থে বালু তোলার প্রয়োজন হতো, সে ক্ষেত্রে সমীক্ষা করে নকশা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে খনন হতো। কিন্তু কোনোভাবেই সমীক্ষা এবং নকশা ছাড়া খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তোলা যাবে না। এতে প্রকল্পের (পদ্মা সেতু) ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।’

এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘সরকারি প্রকল্পের উন্নয়নকাজে পদ্মা সেতু এলাকার চ্যানেল ব্যবহারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনুমতি চাইলে সরকারি ওই প্রকল্পের স্বার্থে নৌযান চলাচলের জন্য অনুমতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটি বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দেয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলন করছে কি না, বিষয়টি আমার জানা নাই।’

শরীয়তপুর ও মাদারীপুর দুই জেলা নিয়ে ১২০ একর জমিতে নির্মাণ হচ্ছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি। শুরু হয়েছে সেটির ভূমি উন্নয়নকাজ। প্রকল্প এলাকায় ফেলা হবে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ ঘনমিটার বালু। নির্মাণ করা হবে সীমানাপ্রাচীর। পদ্মা নদী থেকে উত্তোলিত বালু ফেলা হচ্ছে এ প্রকল্প এলাকায়।

এটির কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খোকন কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রকল্পে বালু ক্রয়ের মূল্য প্রায় ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধরা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সেই বালু দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নকাজ।

এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করছেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আবুল বাশার। তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই অঞ্চলে কোনো বালুমহাল না থাকায় কোনো রয়্যালিটি ছাড়া আমরা বালু উত্তোলন করে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। শরীয়তপুর এবং মাদারীপুরেও বালুমহাল না থাকায় সরকারকে রয়্যালিটি দেয়ার সুযোগ নেই। দেয়ার সুযোগ থাকলে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতাম এবং তার বরাবর আবেদন করতাম।’

জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান জানান, নদী থেকে কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘শরীয়তপুরে বালুমহাল নেই, তাই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নদী থেকে বালু তুলে প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। কেউ এ ধরনের কাজ করে থাকলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। ওই সব আইন ভঙ্গকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর