বাংলাবাজার ব্রিজ থেকে রামচন্দ্রপুর স্লুইস গেট হয়ে পাবনা শহরের মধ্য দিয়ে শ্মশানঘাট পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদী খনন করতে হবে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
নদীর তলদেশের এক মিটার পচা মাটি অপসারণ করে নদী থেকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে এবং আরও এক মিটার নদীর মাটি খনন করে নদীর উভয় পাড়ে ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা) তৈরি করার কাজ করতে হবে।
এ বছরের মধ্যে (৩১ ডিসেম্বর, ২০২১) এটি শেষ করার চুক্তিতে কাজ পান ঢাকার ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাক।
গত ৩০ মার্চ খননকাজের উদ্বোধন করেন পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। সাতটি এক্সকাভেটর দিয়ে কাজ শুরু হয় খননকাজ।
কিন্তু কয়েক দিন পর দুটি এক্সকাভেটর নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে পাঁচটি এক্সকাভেটর দিয়ে খননকাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে একবারও খননকাজ তদারকি করতে দেখা যায়নি। এ কারণেই কাজের গুণগত মান নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাংলাবাজার ব্রিজ থেকে রামচন্দ্রপুর স্লুইস গেট হয়ে লাইব্রেরি বাজার ব্রিজ পর্যন্ত ২ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার খননকাজের মাত্র ২৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অনেক জায়গায় দুই মিটার খনন তো দূরের কথা, নদীর মধ্যে থাকা কচুরিপানাও শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়া লাইব্রেরি বাজার থেকে শ্মশানঘাট মোট পাঁচ কিলোমিটার নদী খননের কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। এই গতিতে খননকাজ চললে চার থেকে পাঁচ বছর লাগবে বলে এলাকাবাসীর মন্তব্য।
কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, কাজটি যথাসময়ে করতে হলে ২০ থেকে ২৫টি এক্সকাভেটর লাগাতে হবে। এর মধ্যে আগামী জুন-জুলাই বৃষ্টির মৌসুমে নদী খননকাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
শহরের শান্তিনগরের বাসিন্দা সুশীল তরফদার বলেন, ‘চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা। আমার মতে, এটি শেষ হতে কয়েক বছর পেরিয়ে যাবে। খননকাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সবারই উদাসীনতা আছে।’
গোবিন্দার বাসিন্দা জাহিদ হাসান বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী ইছামতী নদী পুনঃখনন আমাদের পাবনার জনগণের প্রাণের দাবি। এই নদী খননকাজ শুরু হওয়ায় আমরা অনেক আনন্দিত হই। তবে কাজের গুণ ও গতি দেখে আশাহত।’
ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলের সভাপতি এস এস মাহবুব বলেন, ‘পাবনাবাসীর প্রাণের দাবি এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে করার জোর দাবি জানাচ্ছি। হাইকোর্টের নির্দেশে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী এই নদী পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। না হলে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
পাউবোর নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, চুক্তি অনুযায়ী কাজ না হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হবে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশ, কাজ বুঝে নেওয়ার পর বিল পরিশোধ করতে হবে।
জেলা নদীরক্ষা কমিটির সভাপতি পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, নদী খননে কোনো রকম অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে সাব-কন্ট্রাক্টর রুহুল আমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘আমার কাজ হচ্ছে মোট ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে অফিস আমাকে ৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে। এই কাজের মধ্যে ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আর বাকি কাজও ৫০ শতাংশ হয়ে গেছে। আশা করি জুনের মধ্যে এই ৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার কাজ শেষ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোট ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার তো উচ্ছেদ করা হয়নি। এখনও ৪ দশমিক ২৯ কিলোমিটার উচ্ছেদ বাদ আছে। এগুলো উচ্ছেদ হলে আমরা বাকি ৪ দশমিক ২৯ কিলোমিটার খননের কাজ পুনরায় শুরু করব। এখানে শুধু আমরা খননের কাজ করছি, উচ্ছেদের কাজ আমাদের না। উচ্ছেদ না হলে আমরা কীভাবে খনন করব?’