বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে এলএসডি কবে থেকে, আসে কীভাবে

  •    
  • ২৮ মে, ২০২১ ১২:১০

এই মাদক নেয়ার পর কেউ যদি গান শোনেন তার সামনে গানের মিউজিকগুলো বিভিন্ন রঙের মতো ঘুরতে থাকে। বিভিন্ন মাত্রায় এটি সেবন করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ এলএসডি সেবনের পর অত্যন্ত হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করছে, দেশে প্রথমবারের মতো উদ্ধার হয়েছে ভয়ংকর মাদক এলএসডি, যার পুরো নাম লাইসারজিক অ্যাসিড ডাইথেলামাইড। তবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, এটি দেশে এই প্রথম নয়। ২০১৯ সালেও কানাডাপ্রবাসী এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এলএসডি উদ্ধার হয়েছিল।

এ ছাড়া মাদক সেবন করেন এমন ব্যক্তিরা দাবি করছেন, অন্তত চার বছর ধরে বাংলাদেশে এলএসডি পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি চক্র এই নিষিদ্ধ মাদক আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসে।

‘ডার্ক ওয়েব’ ও ‘টেলিগ্রাম’-এর মতো সিকিউরড সোশ্যাল অ্যাপ ব্যবহার করে বিদেশি বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন বাংলাদেশি ক্রেতা ও ডিলাররা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তিনজনকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২০০টি ব্লট এলএসডি। ব্লট হলো, এলএসডি মেশানো ছোট কাগজের টুকরো। যা জিহ্বার নিচে রেখে সেবন করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, এলএসডি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮-এর ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত মাদক, যা নিষিদ্ধ। ২০১৯ সালে মহাখালী ডিওএইচএস থেকে কানাডা প্রবাসী এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এলএসডি উদ্ধার হয়েছিল। ওই মামলায় চার্জশিট হয়েছে, এখন বিচারাধীন আছে। এরপর আর উদ্ধার হয়নি। সর্বশেষ ডিবি পুলিশ উদ্ধার করেছে।

এলএসডি কী

এলএসডি হলো লাইসারজিক অ্যাসিড , যা রাই এবং অন্যান্য খাদ্যশস্যের ফাঙ্গাস থেকে তৈরি করা হয়। ১৯৩৮ সালে সুইডিস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান প্রথম এই এলএসডির সংশ্লেষণ করেন। এই মাদক এতটাই শক্তিশালী যে ডোজগুলো মাইক্রোগ্রাম পরিমাণে নিতে হয়। এটি গন্ধহীন, বর্ণহীন এবং কিছুটা তেতো স্বাদের হয়।

আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ এবিউজ (এনআইডিএ)-এর তথ্যানুযায়ী, এলএসডি আমেরিকায় নিষিদ্ধ। এর কোনো মেডিক্যাল ব্যবহার নেই। অর্থাৎ নেশাদ্রব্য হিসেবেই এটি তৈরি হয়।

এলএসডি নেয়ার পর এর প্রভাব ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়, যা ট্রিপ নামে পরিচিত। অতিমাত্রায় হয়ে গেলে তা ‘ব্যাড ট্রিপ’ বলা হয়ে থাকে।

এলএসডি ব্লটার পেপার নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত, যা ছোট কাগজের সঙ্গে মেশানো থাকে। এ ছাড়া পাতলা আঠা, ট্যাবলেট আকারে, সুগার কিউব ও পুরো তরল আকারেও পাওয়া যায়। জিহ্বার নিচে রেখে সেবনের পাশাপাশি নাকে টেনে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় পুশ করা হয়।

এলএসডির প্রভাব

এলএসডি সেবনকারীরা বলছেন, এলএসডি মাদক মানুষের মধ্যে বিভ্রম (হেলুসিনেশন) তৈরি করে। এটা সেবন করার পর মস্তিষ্কে হেলুসিনোজেনিক এফেক্ট তৈরি হয়, যা ব্যক্তির ব্যবহার ও চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিশেষ করে এটা গ্রহণের পর সাধারণভাবে যে ধরনের রং প্রকৃতিতে দেখা যায়, তার থেকেও বেশি রং দেখতে পাওয়া যায়।

মুখে নিয়ে এলএসডি গ্রহণ করলে ৩০-৪৫ মিনিট পর এর কার্যকারিতা শুরু হয়। মাদকের পিক হয় দুই থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত সময়ে। আর এটি ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় মানুষের মধ্যে কার্যকর থাকে। তবে এলএসডির কার্যকারিতা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি নিউজবাংলাকে জানান, তিনি অন্তত চার বছর আগে এই মাদক প্রথমবারের মতো গ্রহণ করেন। এক বন্ধুর মাধ্যমে তিনি এটি নিয়েছিলেন। এরপর আরও কয়েকবার তিনি এলএসডি গ্রহণ করেন।

এদিকে ২০০ ব্লট পেপারে থাকা এলএসডি উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, এই মাদক নেয়ার পর কেউ যদি গান শোনে তার সামনে গানের মিউজিকগুলো বিভিন্ন রঙে ঘুরতে থাকে। বিভিন্ন মাত্রায় এটি সেবন করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ এলএসডি সেবনের পর অত্যন্ত হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘এটি সেবন করে সেবনকারী নিজেকে অনেক শক্তিশালী ভাবে। সে ভাবে, সে উড়তে পারে। তার অতীত স্মৃতি চলে আসে। অনেকে বলেছেন, এটি সেবনের পর তারা মনে করেন যে তারা ট্রেন ধাক্কা দিতে পারবেন।’

এলএসডি মাদক মানুষের মধ্যে বিভ্রম (হেলুসিনেশন) তৈরি করে। ছবি: প্রতীকী

এলএসডি আসে কুরিয়ারে

ডিবি পুলিশ বলছে, সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া এলএসডি নেদারল্যান্ডস থেকে আনা হয়েছে। কুরিয়ারের মাধ্যমে এই মাদক আসায় এবং আকৃতি কাগজের মতো হওয়ায় দেশে প্রবেশ ঠেকানো অনেকটা অসম্ভব। তবে যারা দেশে এনে বিক্রি ও সেবন করছে, তাদেরকে অনুসরণ করে এই মাদক ঠেকাতে তৎপর হচ্ছে পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থা।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা যে চক্রটিকে গ্রেপ্তার করেছি, তারা নেদারল্যান্ডস থেকে কুরিয়ারে দেশে নিয়ে আসত। আরও কিছু চক্র কাজ করছে বলে জানতে পেরেছি।

তিনি বলেন, যারা নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদকটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, তাদের শনাক্তের জন্য পুলিশ সদরদপ্তরের এনসিবি বিভাগে চিঠি দিয়ে খোঁজ নিতে বলা হবে।

এ ছাড়া এলএসডির চাহিদা ধরে তা ঠেকানোর কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ডিবি এলএসডি উদ্ধারের পর আমরা আমাদের প্রত্যেকটি অফিসকে আবারও জানিয়েছি। তাদের এই মাদক বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর