বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যত তাজা আম, তত বেশি দাম

  •    
  • ২৩ মে, ২০২১ ০৯:৩৭

মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে থেকে বাজারে হিমসাগর আর গোপালভোগ আম আসা শুরু হয়েছে। হিমসাগরের রাজত্ব আরও কিছুদিন থাকবে। এরপর আসবে রাজশাহীর অন্যান্য জাতের আম।

জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই বাজারে আসতে শুরু করে নানান জাতের আম। জাতভেদে এসব আমের বাজারে আসার সময়ও ভিন্ন।

এরই মধ্যে রাজধানীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে কয়েক জাতের সুমিষ্ট আম। খুচরা বাজারে এসব আম বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। দাম নির্ভর করছে আম কতটা তাজা তার ওপর।

তাজা আম কীভাবে চেনা যায় তা জানালেন ফার্মগেটের বিক্রেতা মো. রমজান। প্রতিবছর তারা আমের মৌসুমে অস্থায়ী ফলের মেলা বসান। তাদের ‘সাতক্ষীরা-রাজশাহীর ফলের মেলা’ দোকানে শুধু আমই থাকে।

গত শুক্রবার রমজানের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, হিমসাগরের পাশাপাশি ল্যাংড়া আমও উঠেছে। জাতভেদে দামে তফাত তো আছেই। এমনকি একই জাতের আমেরও ভিন্ন দাম। হিমসাগর আমের দামের ট্যাগ লাগানো রয়েছে ১১০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ল্যাংড়া ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

রমজান বলেন, ‘আম যত তাজা, দামও তত বেশি। রাজশাহী-সাতক্ষীরায় আমাগো চুক্তি করা বাগান আছে। বাগান থেকেই আম ঢাকায় আনি।

‘মনে করেন, গাছ থেইক্যা পাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কস্টমারের সামনে আম রাখি। আইজকার তাজা আমের দাম বেশি, কাইল বা পরশুর আমের দাম একটু কম। গতকাইলেরটা ১৩০ টাকা, তার আগেরটা ১১০ টাকা।’

তিনি জানান, তাজা আমের বোঁটা তাজা ও সবুজ; আমও সবুজ। গাছ থেকে সবুজ আমই পাড়া হয়। ঢাকায় আসার পরও দুই থেকে তিন দিন সেগুলো সবুজ থাকে। তাজা আমের বোঁটা ছিঁড়লে সাদা কষ বের হয়। আর দুই দিন পর থেকেই বোঁটা শুকাতে শুরু করে বা বোঁটা ঝরে যায়। আমও একটু শুকাতে থাকে।

তিনি বলেন, বাজারে সবার আগে আসে গোপালভোগ আর হিমসাগর। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই আম আসা শুরু হয়েছে। এখন হিমসাগরের পূর্ণ মৌসুম। তাই হিমসাগরের রাজত্ব চলছে বাজারে। এটি আরও কিছুদিন থাকবে। এরপর আসবে রাজশাহীর অন্যান্য জাতের আম।

আমের যত জাত

দেখতে প্রায় একই রকম হলেও আমের নানান জাত রয়েছে। দেশের আমের জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, মোহনভোগ, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, ফজলি, গুটি, রানিপছন্দ, রুপালি বা আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনা, গৌরমতি, মল্লিকা, হাড়িভাঙা ইত্যাদি। এর বাইরে বৌ-ভোলানি, জামাইখুশি, বৃন্দাবন, লখনা, বোম্বাই, দাউদভোগ, সিন্দুরি, ব্যানানা, ক্ষুদি খিরসাপাতি, কালীভোগসহ সব মিলিয়ে শতাধিক জাতের আম রয়েছে।

হিমসাগর ও খিরসাপাতি দেখতে প্রায় একই রকম। তবে খিরসাপাতি বড় ও একটু কালচে সবুজ ধরনের। ফজলি ও আশ্বিনা দেখতে প্রায় একই রকম। তবে মিষ্টতায় পার্থক্য রয়েছে। ফজলি মিষ্টি বেশি। আশ্বিনা পরিপক্ব না হলে একটু টক ধরনের।

পাকা আশ্বিনা একটু বেশি সবুজ। আর পাকা ফজলি আম হলুদ হয়। আবার গোপালভোগ ও রানিপছন্দের চেহারায় মিল আছে। তবে গোপালভোগ আকারে বড়; রানিপছন্দ একটু ছোট।

আমের বিষয়ে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের বিক্রেতা এমারত হোসেন বলেন, ‘বাজারে সব আম এক লগে উঠে না। এক আমের এক সময়। কাস্টমার সময়-অসময় না দেইখা আম খোঁজে। এখন রুপালি (আম্রপালি) চাইলে কী হবে?

‘এখন হিমসাগরের সময়। কোন আম কোন সময় পাকব, একটু মাথায় রাখন লাগব। হিসাব বুঝে কিনা লাগব। তাতে ঠকার সুযোগ কম।’

তিনি জানান, তার দোকানে হিমসাগর আম বিক্রি করছেন ৮০ টাকা কেজিতে। ল্যাংড়া ৭০ টাকায়। বাদামতলী পাইকারি ফলের বাজার থেকে আম আনেন। যেমন দামে কেনা পড়ে, তেমন দামে বিক্রি করেন।

মধ্য বাড্ডার ফল বিক্রেতা শ্যামল দাসও হিমসাগর ৯০ টাকা এবং ল্যাংড়া ৮০ টাকায় এবং লক্ষ্মণভোগ ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, ‘আম বড় হওনের সময় বাগানে বৃষ্টির পানি লাগে। এবার বৃষ্টি কম। তাই আমও ছোট ছোট। পাবলিক খালি বড় আম খোঁজে। তবে ঝড়-তুফান না হওয়ায় আম নষ্টও হইছে কম।’

কোন আম কখন বাজারে আসবে

জাতভেদে বাজারে আম আসার সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার একই জাতের আম এলাকাভেদেও ভিন্ন ভিন্ন সময় পাকে। তাই বাজারে নিরাপদ ও পরিপক্ব আম আসা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জেলায় গাছ থেকে আম নামানোর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী জেলায় গুটি জাতের আম ১৫ মে থেকে এবং গোপালভোগ ২০ মে থেকে নামানো শুরু হয়েছে। লক্ষ্মণভোগ ও রানিপছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাতি ২৮ মে থেকে বাজারে আসবে। এ ছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে।

তবে সেদিক দিয়ে আগেই বাজারে আসে সাতক্ষীরার আম। প্রশাসনের নির্দেশনামতো ১ মে থেকে গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম গাছ থেকে পাড়া শুরু হয়েছে। ২১ মে থেকে পুরোদমে বাজারে আসা শুরু করেছে এ জেলার হিমসাগর আম।

২৭ মে থেকে ল্যাংড়া আম ও ৪ জুন থেকে আম্রপালি আম বাজারে আসবে। তবে কারও বাগানে নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাকলে তা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে বাজারে ছাড়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ হিসাবে নির্দিষ্ট সময়ের এক সপ্তাহ আগেই বাজারে পাওয়া যায় আম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গাছে পাকলেই পাড়া হবে। এ জেলার আম জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসতে শুরু করবে। শুরুতে গাছ থেকে নামবে গুটি আম; পরে অন্যান্য আম।

নাটোর ও নওগাঁয় ১০ মে থেকে গুটি আম এবং ২০ মে থেকে গোপালভোগ পাড়া শুরু হয়েছে। অন্যান্য আমের মধ্যে লক্ষ্মণভোগ ২৫ মে, খিরসাপাতি ২৮ মে, ল্যাংড়া ৫ জুন, ফজলি ২০ জুন, আম্রপালি ২০ জুন, মল্লিকা ৩০ জুন, আশ্বিনা ১৫ জুলাই, রানিপছন্দ ২৫ মে, মোহনভোগ ১৫ জুন, বারি আম-৪ ১০ জুলাই, হাড়িভাঙা ২০ জুন এবং গৌরমতি আম ১৫ আগস্ট থেকে পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, সাধারণত বাজারে যে জাতের আম সবার আগে ওঠে, তা হলো সাতক্ষীরার গোপালভোগ। এটির নিচের দিকটা একটু সরু। পাকলে হলুদ ভাব আসে। বৈশাখের শেষ সপ্তাহ বা মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এটি বাজারে পাওয়া যায়।

রাজশাহীর গোপালভোগ বাজারে আসে মে মাসের মাঝামাঝিতে। মে মাসের শেষদিকে আসে হিমসাগর। তার পরেই খিরসাপাতি জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসে। দুটি খুবই মিষ্টি আম। প্রায় একই সময় আসে ল্যাংড়া আমও। দেখতে কিছুটা গোপালভোগের মতো হলেও ল্যাংড়া তত মিষ্টি হয় না।

জুন মাসজুড়ে বাজারে থাকে নানান জাতের আম। এ সময় আসে লক্ষ্মণভোগও। এ আমের মিষ্টতা অনেক কম। লক্ষ্মণভোগে চেনার উপায় হলো এটির পেটের মাঝামাঝি স্থানে ‘নাক’ আছে।

বাজারে এর একটু পরেই আসে ফজলি। জুনের শেষ দিকে থাকে এ আমের রাজত্ব। বাজারে তখন অন্যান্য আম কমতে থাকে। এ সময় ফজলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকে সবচেয়ে মিষ্টি আম আম্রপালি।

নিচের দিকে একটু সুচাল, ওপরে একটু গোল। এই আম মিষ্টি বেশি, স্বাদে অন্য রকম। জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে আসে আশ্বিনা ও বারি আম-৪। তবে এরপর যেসব আম আসে সেগুলোর পরিমাণ খুবই কম।

বাগান ও পাইকারিতে দাম

মে মাসের শুরুতে সাতক্ষীরায় গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ বাগানে প্রতি মণ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। শুক্রবার গোপালভোগ আমের মণ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং হিমসাগর ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে বাদামতলী ফলের আড়তে শুক্রবার প্রতি কেজি হিমসাগর আম মানভেদে পাাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তবে এ আড়তে এক ক্যারেটের কম আম বিক্রি হয় না।

প্রতি ক্যারেটে ২০ থেকে ২৬ কেজি আম থাকে। এখানে গোপালভোগ ও ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে। গুটি আম বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।

এ বিভাগের আরো খবর