বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’র কবির বাড়ির অমর্যাদা

  •    
  • ১৯ মে, ২০২১ ১২:১০

সংস্কার না হওয়ায় কবি কাদের নেওয়াজের বাড়ির ইট-সুরকি খসে পড়েছে। ছাদের ফাটল বেশ পুরোনো। নিচতলার ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে দুই বছর আগে। নজরদারি না থাকায় খোয়া গেছে ভবনের দরজা-জানালা, প্রতিটি ঘরই প্রায় ফাঁকা।

‘আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির, সত্যিই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।’

শৈশবে পড়া এ কবিতা এখনও গেঁথে আছে অনেকের মনে। ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ নামের এই কবিতা দিয়ে কবি কাজী কাদের নেওয়াজ পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছিলেন পাঠকদের মনেও।

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান এ কবি ১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ভারতের মুর্শিদাবাদে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদার বাড়ি ভারতের বর্ধমানে।

পরে তিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাছে কুমার নদের তীরবর্তী মুজদিয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তার স্মৃতি নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে কবির বাসভবনটি। অযত্নে, সংরক্ষণের অভাবে সেটি এখন বেহাল।

ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করা এ কবি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অবসরের পর মুজদিয়ায় এসে তিনি বসবাস শুরু করেন। সেখানেও কিছুদিন শ্রীপুর মহেশচন্দ্র স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সংস্কার না হওয়ায় কবি কাদের নেওয়াজের বাড়ির ইট-সুরকি খসে পড়েছে। ছাদের ফাটল বেশ কয়েক বছরের। নিচতলার ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে দুই বছর আগে।

নজরদারি না থাকায় খোয়া গেছে ভবনের দরজা-জানালা, প্রতিটি ঘরই প্রায় ফাঁকা।

বাড়িটি কোনো সময়ই সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানান এর পাশের ভবনে থাকা বাসিন্দারা।

সালাম হোসেন নামের স্থানীয় একজন বলেন, ‘প্রতিবছর এখানে কবির জন্মদিনের অনুষ্ঠান হয়। ওইটুকুই দেখা মেলে। সেখানে অনেকে আসেন, তারা ভবনটি সংরক্ষণের কথা বলেন। পরে আর কেউ উদ্যোগ নেয় না।’

স্থানীয় শিক্ষক নাসির মোল্লা বলেন, ‘প্রতিদিন আশপাশের জেলা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন কবির বাড়িটি দেখতে। তারা এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আমাদের বলেন বাড়িটি মেরামত করতে।

‘আমরা উপজেলা প্রশাসনকে জানাই। কিন্তু কাজ হয় না। কয়েক বছর ধরে ভবনের ইটগুলো খুলে পড়ছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।’

তবে ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি শ্রীপুর উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হাসান বাসভবনটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেন। কিন্তু কাজ হয়েছে নামমাত্র। কোনো রকম একটা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা, একটা ঘরে সাইনবোর্ড ঝোলানো, এ পর্যন্তই।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মাগুরা জেলার কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও কবির ভাতিজা কাজী ফারুক নেওয়াজ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমসাময়িক কবি ছিলেন চাচা। তার সাহিত্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অনস্বীকার্য। কবির স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ জরুরিভাবেই নেয়া উচিত।’

কবির আরেক ভাতিজা কাজী মাহবুব নেওয়াজ অভিযোগ করেন, ‘আমাদের পৈতৃক নিবাস মুজদিয়া হলেও আমরা সেখানে বসবাস করি না। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে কবির বাসভবনের সংস্কার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

‘আমরা কবির বংশধর হলেও অনেক কার্যক্রমেই আমাদের জানানো হয় না, যা আসলেই দুঃখজনক। যোগাযোগটা ঠিক রাখা হলে আমরা আমাদের আদিবাড়িতে যেতাম। দেখভাল করতাম। কিন্তু স্থানীয়রা এটা হয়তো চান না।’

মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুমার বলেন, ‘আমরা একবার কিছু অনুদান দিয়েছিলাম ভবনটির সীমানা ও একটি গেট করার জন্য। এরপর বাজেট আর আসেনি। বাজেট এলে চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না।’

বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষায় অসামান্য পাণ্ডিত্যের কবি কাদের নেওয়াজ পেয়েছেন বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার। ভারত ও বাংলাদেশের পত্রপত্রিকাগুলোতে তার অসংখ্য কবিতা ও বিভিন্ন রচনা প্রকাশিত হয়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- মরাল, নীল কুমুদী।

ছোটদের জন্য তিনি লিখেছেন- দাদুর বৈঠক ও দস্যু লাল মোহন। তার প্রকাশিত দুটি জনপ্রিয় উপন্যাস, ‘উতলা সন্ধ্যা’ ও ‘দুটি পাখি দুটি তীরে’।

১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি মারা যান। তার সমাধিও মুজদিয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে।

এ বিভাগের আরো খবর