বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ট্যাকা বাড়ায়া নেন, তাও চিড়িয়াখানায় ঢুকতে দেন’

  •    
  • ১৭ মে, ২০২১ ০৯:০০

করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের মতো এই ঈদেও বন্ধ চিড়িয়াখানা। তবে বিষয়টি না জানার কারণে ঈদের দিন থেকে এখনও অনেক মানুষ এসে ভিড় করছেন। গেট বন্ধ পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা।

‘আমরা কুমিল্লা থেকে আইলাম কষ্ট কইরা। ট্যাকা বাড়াইয়া নেন, তাও ঢুকতে দেন। আমাদের না দেন, বাচ্চা দুইটারে একটু ঢুকতে দেন।’

‘গেটটা একটু খুলে দেন, বেশি দূর যাব না, হরিণের খাঁচা পর্যন্ত যাইতে দেন। একটা ছবি তুলে চলে আসুক।’

‘সবই তো খোলা। এইটা খুলে না কেন? আপনাদের বড় স্যার কে আছে? ডাকেন কথা বলি। বন্ধ জানলে কি আইতাম টাকা, সময় খরচ কইরা? আসছি যখন একটু ঢুকতে দেন।’

এভাবেই রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানার সামনে দর্শনার্থীদের ভেতরে ঢোকার জন্য কর্তব্যরত গার্ডদের কাছে আকুতি করতে দেখা গেছে।

প্রতি বছর ঈদের সময়টাতে এখানে মানুষের ঢল নামে। প্রিয়জনদের নিয়ে ঢাকার বাইরে থেকেও ঘুরতে আসেন অনেকে। কিন্তু এবার সেখানে বাধা হয়েছে ‘লকডাউন’।

করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের মতো এই ঈদেও বন্ধ চিড়িয়াখানা। তবে বিষয়টি না জানার কারণে ঈদের দিন থেকে এখনও অনেক মানুষ এসে ভিড় করছেন। গেট বন্ধ পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা।

চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকলেও গেটের সামনে শিশুদের খেলনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনেক দোকানি। ছবি: নিউজবাংলা

রোববার বেলা ১১টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দেখা যায়, চিড়িয়াখানায় এসে ঢুকতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন শত শত মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাইক, রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেট কার ও বাসে করে চিড়িয়াখনায় আসছেন দর্শনার্থীরা। আগতদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি হলেও, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষকেও আসতে দেখা যায়।

গেট বন্ধ পেয়েও ফিরে যেতে চাইছিলেন না অনেকেই। টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

কর্তব্যরত গার্ডদের ভেতরে ঢুকতে দেয়ার জন্য কেউ কেউ অনুরোধ করেন। কেউ আবার তর্কে জড়ান।

একটু পরপর চিড়িয়াখানায় দায়িত্বশীল কর্মচারী, আনসার সদস্যরা বাঁশি ফুঁকিয়ে আগতদের সরানোর চেষ্টা চালিয়ে যান।

গেট খুলবে, এমন অপেক্ষোয় থেকেও অনেক পরিবার সন্তানদের দেখাতে পারেননি চিড়িয়াখানা। ছবি: নিউজবাংলাৃ

আগতরা বলছেন, সরকারের উচিত ছিল, চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকার বিষয়টি ভালোভাবে প্রচার করা। তাহলে ঘুরতে এসে টাকাও অপচয় হতো না। সময়ও নষ্ট হতো না।

এদিকে চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার চিড়িয়াখানা অনেক আগে থেকে বন্ধ রেখেছে। পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। তারপরেও যারা না জেনে চলে আসছেন, তাদেরকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকে কর্তব্যরত গার্ড ইউছুফ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইজ তো তাও কম। ঈদের দিন তো মাইনষের জন্য হাঁটার রাস্তাও আছিল না।’

‘যখন শুনছে ঢোকা যাইবো না, মারামারি লাগাই দিছিল। আমগোর লগে কাইজ্জা শুরু করছে। আমগোর তো কিছু করার নাই। খারাপও লাগে বুঝছেন। ছোড ছোড পোলাপাইন আইয়া আইয়া ফেরত গেছে সব। সুযোগ থাকলে ঢুকবার দিতাম।’

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারের সামনে দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে গার্ডদের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায় আমিন হাসানকে।

নারায়নগঞ্জ থেকে ছেলে মেয়েদের নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরতে আসেন আমিন। এসে গেট বন্ধ দেখায় গার্ডদের অনুরোধ করতে গিয়ে এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে যান তিনি।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি দোকান বন্ধ রাইখা আইছি পোলাপান নিয়া ঘুরতে। এখন ঢুকতে দিব না। মাইয়াডা বড় বইনের থেকে ফোন নিয়া আইছে ভালো ক্যামেরার। বাঘের লগে ছবি তুলব। এইডা ঠিক কইরা জানাইব না? তাইলে এই সময়টা কি নষ্ট হয়? টাকাও নষ্ট।’

আমিনের মতো এমন শত শত মানুষ হতাশা নিয়ে ফেরত গিয়েছেন।

দুপুরের পরপর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরতে আসেন সালাম মিজি।

বন্ধ চিড়িয়াখানায় হরিণদের খেতে দেয়া হয়েছে কচি ঘাস। ছবি: সাইফুল ইসলাম

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়ে বর্ণমালা শেখার সময় বইয়ে হরিণ দেখে একদিন বলেছিল, ছবি তুলবে হরিণের সঙ্গে। সময় পাইনি, আনা হয়নি। ভাবছিলাম, আজকের বিকেল এখানেই কাটাব। বন্ধ তাতো আর জানতাম না। এখন কখন কী খুলছে, কখন কী বন্ধ হচ্ছে তা ঠিক আন্দাজ করা যায় না। জানা থাকলে হয়ত অন্য পরিকল্পনা করা যেত।’

এদিকে শুধু চিড়িয়াখানা নয়, পাশে বোটানিক্যাল গার্ডেনও বন্ধ রয়েছে। সেখানেও পাওয়া গেল দর্শনার্থীর ভিড়।

বিকেল ৩টার দিকে চারটি বাইক নিয়ে ঘুরতে আসেন রাফিদ হাসান ও তার বন্ধুরা। চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায়, গেটের সামনে গ্রুপ সেলফি তুলে ফেরত গেছেন।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও প্রবেশ করতে পারেননি দর্শনার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা

রাফিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভেবে আসলাম চিড়িয়াখানায় একটা ব্লগ করব। তারপরে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে ফটোশ্যুট করার ইচ্ছে ছিল। এসে দেখি বন্ধ। জানলে হয়ত, এদিকে না এসে ১০০ ফিট নতুন রাস্তায় যাওয়ার প্ল্যান করতাম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মো. আব্দুল লতীফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত পাঁচ মাস ধরে চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর আগে সাত মাস বন্ধ ছিল।

‘তবে আমরা প্রস্তুত। যখনই সরকার দর্শনার্থী প্রবেশের অনুমোদন দিবে, তখনি আবার চিড়িয়াখানা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিব।’

এ বিভাগের আরো খবর