বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শত বছর ধরে ছায়া দিচ্ছে ডানা মেলা তমাল

  •    
  • ১৪ মে, ২০২১ ১৩:৫৪

তমালগাছের পাতা লম্বা-আয়তাকার যা দেখতে অনেকটা পানপাতার মতো। ফুল আকারে বেশ ছোট ও সাদা রঙের। এদের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা আলাদা। পুরুষ ফুল ৪ সেন্টিমিটার চওড়া, একসঙ্গে ছোট ছোট থোকায় কয়েকটি থাকে। স্ত্রী ফুল ১ সেন্টিমিটার চওড়া ও এককভাবে বিন্যস্ত থাকে।

তমাল রূপসী বাংলার নান্দনিক ছায়াতরুর অন্যতম। প্রকৃতির গুণমুগ্ধ কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় অসংখ্যবার তমালতরুর কথা বলেছেন। আর রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘কোন তমালের কাননতলে মধ্যদিনের তাপে; বনচ্ছায়ার শিরায় শিরায় তোমার সুর কাঁপে।’

এ ছাড়া বৈষ্ণব কবিতা, লোকগীতি, এমনকি সংস্কৃত কাব্যেও তমালগাছকে বেশ মর্যাদাসীন বৃক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের সাহিত্যের একটি বিশেষ অংশজুড়ে তমালের প্রশস্তি থাকলেও বস্তুত গাছটি দুর্লভ।

মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নের বাজার এলাকায় রয়েছে শতবর্ষের সাক্ষী এক তমালগাছ। নবগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে এর অবস্থান। নদীর হিমেল বাতাসে ছুঁয়ে যাচ্ছে তমালগাছের ছায়া। সেই শীতল ছায়ায় বসে এই গরমে মন জুড়ান পথিকরা।

তবে স্থানীয় অনেকেই জানেন না এই মহিরুহের নাম। যারা জানেন তারা যত্নে আগলে রেখেছেন। পূর্বপুরুষের স্মৃতি হিসেবে অক্ষত রেখেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোকারম বলেন, ‘আমার বয়স আশি হয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকে গাছটি এভাবেই দেখছি। এমনকি আমার বাবাও গাছটি এভাবে দেখেছেন বলে শুনেছি। তারা নেই। কিন্তু গাছের নিচে তাদের বসে বিশ্রাম নেয়ার গল্প শুনেছি। এই গাছ সেই স্মৃতিকে জীবন্ত করে তোলে।’

গাছটির পাশেই কাপড়ের দোকানি হাফিজ। তিনি জানান, গাছটির ছায়া খুব ঠান্ডা। অনেক বছর ধরে এখানেই আছে। পুরান গাছ বলে জানি। কিন্তু নাম তমাল তা জানতাম না।’

তমালগাছটির নিচে রয়েছে প্রণব অধিকারীর চায়ের দোকান। বাবা নির্মল অধিকারীও এখানে ৩৫ বছর চা বিক্রি করে গেছেন। বাবার মৃত্যুর পর ছেলে প্রণব চায়ের দোকানটি ধরে রাখেন। বাবার স্মৃতিবিজড়িত এই তমালগাছের নিচে এলে তার মনে পড়ে যায় বাবার কথা, ঠাকুরদার কথা।

প্রণবের দোকানে চা খেতে খেতে একজন বলেন, ‘গাছটি বাতাসে দোল খায়। শীতল বাতাস গায়ে লাগে। গরম নেই সেই বাতাসে। খুব গরম পড়লি আমরা এই চায়ের দোকানে বসে গাছের ছায়ায় থাকি।’

মাগুরা জেলায় এ রকম বয়স্ক তমালগাছ দেখা যায় না। যা দু-একটি ছিল, তা এখন কাটা পড়ে গেছে পাকা দালান নির্মাণে। একমাত্র শত্রজিৎপুরে দেখা এই বয়স্ক গাছটিই মাগুরাতে পুরোনো তমালগাছ।

সেজন্য এটির যত্ন দরকার বলে মনে করেন শত্রজিৎপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জিত কুমার বিশ্বাস।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক জানান, তমাল ‘Diospyros cordifolia’ মাঝারি আকৃতির গাছ। ঘন কালো গাঁটযুক্ত কাণ্ড। এই কাণ্ড কখনও কখনও কণ্টকিত, আঁকাবাঁকা ও ছড়ানো শাখা-প্রশাখাগুলো ছত্রাকৃতির। এর ছায়া খুব শীতল। শত্রজিৎপুর বাজার এলাকাতেই এ গাছটি দেখা যায়।

তিনি আরও জানান, অনেকে এই দুর্লভ গাছকে চেনেন না। এর পাতা লম্বা-আয়তাকার যা দেখতে অনেকটা পানপাতার মতো। ফুল আকারে বেশ ছোট ও সাদা রঙের। এদের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা আলাদা।

পুরুষ ফুল ৪ সেন্টিমিটার চওড়া, একসঙ্গে ছোট ছোট থোকায় কয়েকটি থাকে। স্ত্রী ফুল ১ সেন্টিমিটার চওড়া ও এককভাবে বিন্যস্ত থাকে।

এই গাছের ফল গোলাকার, হলুদ রঙের এবং গাবের মতোই বৃতিযুক্ত। কাঠের রং লালচে-হলুদ রঙের এবং দৃঢ় ও শক্ত। পাতা ও ফল মাছের বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আদি আবাস মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের উষ্ণ অঞ্চলে। বীজ থেকে খুব সহজেই চারা জন্মে। সুদর্শন ছায়াবৃক্ষ হিসেবে চারপাশে আরও প্রচুর পরিমাণে তমালতরু থাকা প্রয়োজন বলে পরামর্শ দেন কৃষি কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর