বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তালগাছে বাবুইয়ের সংসার

  •    
  • ১৪ মে, ২০২১ ০৮:১৬

কুমিল্লার সদর উপজেলার গোমতী নদী বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকায় তাল ও খেঁজুর গাছে শত শত বাবুই পাখির বাসা। বর্ষার আগে আগে পাখিগুলো নতুন বাসা বানাতে ব্যস্ত।

বিস্তীর্ণ ধানি জমির প্রান্তর। তার পাশে রয়েছে ছোট ছোট নালা-খাল। এসব খালের পাড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। গাছে বাসা তৈরিতে ব্যস্ত বাবুই পাখির দল।

আগামী আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের আগেই এসব পাখির বাসায় আসবে নতুন অতিথি। তাই সুন্দর মজবুত বাসা বানাতে ব্যস্ত বাবুই দম্পতি। বাবুই পাখির সংসার পাতার এমন দৃশ্য এখন কুমিল্লার গ্রামে গ্রামে।

জেলার আদর্শ সদর উপজেলার রামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খালপাড়ের তালগাছে বাসা তৈরিতে ব্যস্ত সহস্রাধিক বাবুই পাখি। দিনভর ধানিজমি থেকে বাসা তৈরির খড়কুটো সংগ্রহ করে পাখিগুলো। ঠোঁটে করে নিয়ে আসা সেসব খড় দিয়ে জটিল বুননে বাসা তৈরি করে তারা।

রামপুর গ্রামের যুবক মো. রুবেল জানান, তিনি ছোটবেলা থেকে তার গ্রামে বাবুই পাখির বাসা তৈরি ও ডিম ফুটে ছানা বের হতে দেখেছেন।

রুবেল বলেন, ‘আমরা যহন ছুডু আছিলাম, হেই সময় থাইক্কা দেখতাছি বাইল্লা (বাবুই) পইক আমরার গেরামের তালগাছডির বাসা বান্ধে। আমরা এডিরে বিরক্ত করি না।’

রামপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান বলেন, একসময় রামপুরসহ আশপাশের গ্রামে প্রচুর তালগাছ ছিল। সেইসব গাছে আশ্রয় নিত চিল-শকুন। বর্ষার আগে তালগাছে বাসা বাঁধত বাবুই পাখি। বাবুই পাখিরা দিনরাত কিচিরমিচির করত। এখন তালগাছ কমে গেছে। বাবুই পাখিও নেই।

কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অমিতাভ কুমার বাড়ৈ বলেন, ‘বাবুই দলবদ্ধ প্রাণী। কলোনি করে থাকতে অভ্যস্ত। বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই।’

বাবুই পাখি সাধারণত তাল, নারিকেল, খেজুর, রেইনট্রি ও কড়ইগাছে বাসা বাঁধে। বাসা উল্টানো কলসের মতো। এরা খুবই পরিশ্রমী পাখি। দুই রকম বাসা তৈরি করে বাবুই। স্ত্রী পাখির জন্য তৈরি বাসা একমুখওয়ালা হয়। যেখানে ঝড়বৃষ্টিতে স্ত্রী পাখি নিরাপদে ডিম পাড়া, ডিমে তা দেয়া থেকে শুরু করে ছানার যত্ন করতে পারে।

কুমিল্লা গোমতীর নদীর দুই পাড়ে ও চরে দেখা যায় প্রচুর তালগাছ। খাবারের পর্যাপ্ততার কারণে বাবুই পাখি আশ্রয় নিয়েছে সেসব তালগাছে। সদর উপজেলার শাহপুর, গোলাবাড়ী, বুড়িচংয়ের বালিখাড়া, বুড়বুড়িয়াতে প্রচুর বাবুই পাখির বাসা দেখা যায়। ওইসব এলাকার তাল ও খেজুরগাছে শত শত বাবুই পাখির বাসা দেখা গেছে।

গোমতীপাড়ের কৃষক মোজাহিদ মিয়া বলেন, ১০-১২ বছর আগে হাজার হাজার তালগাছ আছিল। আমরা ক্ষেতে কাম করতাম। বহুত বাইল্লা তালগাছে জাগা না পাইয়া অইন্য গাছেও বাসা বানাত। কত বাইল্লা যে আছিল, আল্লায় কইতে পারব। অহন তালগাছ, খেজুরগাছ কমতে কমতে আগের মতো বাইল্লাও দেহি না।’

পাখি বিশেষজ্ঞ রইস উদ্দিন বলেন, ‘বাবুই পাখি উঁচু গাছে বাসা বাঁধে। বিশেষ করে তালগাছ, খেজুরগাছে ও কড়ুইগাছে, যেন মানুষসহ অন্য প্রাণী সহজে নাগাল না পায়। তবে মানুষের আগ্রাসী আচরণের কারণে দিন দিন বাবুই পাখির সংখ্যা কমে আসছে। কিছুদিন আগেও ধান খাওয়ার অভিযোগে শত শত বাবুই পাখি ও ছানা পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এটা অত্যন্ত অমানবিক। কারণ বাবুই পাখি পরিবেশের জন্য খুব গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’

এ বিভাগের আরো খবর