রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় গত দুই মাসে ৫৮৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে বিদ্যুৎ-সংযোগকে। ফায়ার সার্ভিসের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অগ্নি-দুর্ঘটনার জন্য বিদ্যুতের ‘নড়বড়ে’ সংযোগ বেশি দায়ী।
এ ছাড়া কারণ হিসেবে ভোল্টেজ ওঠানামা, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার রয়েছে। মূলত বৈদ্যুতিক সংযোগের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ঘরে-বাইরে অগ্নি-দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।
রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ওহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় গত দুই মাসে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তার সবগুলোই বিদ্যুতের ‘শর্টসার্কিট’ থেকে বলে আমরা ধারণা করছি।
‘লোডশেডিং, লো ভোল্টেজ ও হাই ভোল্টেজ বিষয়গুলো নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে সতর্ক হতে হবে। ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে অনেক সময় স্পার্ক বা ফায়ারিং হয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘বাড়ি, অফিস, কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কোনোভাবেই নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা যাবে না। সংযোগগুলো কমপেক্ষ ছয় মাস পর পর চেক করা দরকার। সম্ভব হলে ১০ বছর পুরোনো হতেই তা পরিবর্তন করতে হবে। গুদামঘরগুলোতে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার বিধান নেই। মূলত নিয়ম না মানার কারণেই দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে।’
রংপুর নেসকো লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল-১) আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘লো ভোল্টেজ ও হাই ভোল্টেজের কারণে অগ্নিকাণ্ডের দাবিটি সঠিক নয়। আর ভোল্টেজ নিয়ে অভিযোগ তোলা হলে আমাদের করার কিছুই নেই। ন্যাশনাল গ্রিড থেকে আমরা যেভাবে সাপ্লাই পাই, সেভাবে সরবরাহ করি।’
রংপুর ফায়ার স্টেশন জানায়, মার্চ মাসে রংপুরের আট উপজেলায় ৬৬টি, গাইবান্ধায় ৫৭টি, নীলফামারীতে ৬২টি, লালমনিরহাটে ৩৮ আর কুড়িগ্রামে ৪৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এই অগ্নিকাণ্ডগুলোতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা।
এপ্রিল মাসে রংপুরে ১০২টি, গাইবান্ধায় ৪৫টি, নীলফামারী জেলায় ৮১টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি ও কুড়িগ্রামে ৪১টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ ১৬ হাজার ২০০ টাকা।
সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল মাঝরাতে রংপুরের কেরানীর হাট এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে ১৬টি দোকান পুড়ে যায়। ওই রাতেই নগরীর সেনপাড়ায় একটি মুদি দোকানে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আর ৩০ এপ্রিল রাত পৌনে ১টার দিকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে রংপুর মহানগরীর পশ্চিম খাসবাগ এলাকার একটি সেমাই কারখানায়।
রংপুর সেনপাড়ার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মুদি ব্যবসায়ী সামিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বন্ধ দোকানে আগুনের ঘটনা ঘটে। বিদ্যুতের মিটার থেকে দোকানে যে সংযোগ এসেছে, সেখানে স্পার্ক করেই এই আগুনের সূত্রপাত হয়।’
এতে তার ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। একই কথা বলেছেন আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ারসার্ভিসের কর্মীরাও।
নগরীর পশ্চিম খাসবাগ এলাকায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী রেজাউল হোসেন জানান, সেমাই কারখানায় যে সংযোগ নেয়া হয়েছে, তা বাসার বৈদ্যুতিক মিটার থেকে। এখানে কানেকশন নড়বড়ে থাকায় দুর্ঘটনা হতে পারে বলে ধারণা তার।
তিনি বলেন, ‘আমরা মৌসুমী ব্যবসায়ী। সে কারণে আলাদা লাইন নেয়া হয়নি। বাসার লাইন থেকেই সংযোগটি নেয়া হয়েছিল।’
২৯ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের কেরানীরহাট বাজারে যে আগুনের ঘটনা ঘটে, সেখানে ছোট-বড় ১৬টি দোকান পুড়ে যায়।
স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘হাটের লাবনী স্টোর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ছোট-বড় মাঝারি মিলে অন্তত ১৬টি দোকান পুড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ড।’
সব মিলিয়ে রংপুর অঞ্চলে মার্চ মাসে ২৬৬টি ও এপ্রিলে ৩১৮টি আগুনের ঘটনা ঘটে। সব থেকে বেশি আগুনের ঘটনা রংপুর জেলায়। এর পরের অবস্থান নীলফামারীর। এসব আগুনের ঘটনায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।