খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হকের দখল করা মাদ্রাসাকে ঘাঁটি বানিয়ে রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিলেন তার ছেলে মামুনুল হক। অস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসাটি দখলের নেতৃত্বও দেন মামুনুল ও তার ভাই মাহফুজুল।
আজিজুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর অধ্যক্ষ হয়েই জড়িয়ে পড়েন অনিয়মে, যে কারণে ১৯৯৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত হন।
তবে এর দুই বছরের মধ্যে চারদলীয় জোট সরকারের আমলের শুরুতে পুলিশের উপস্থিতিতে মাদ্রাসায় হামলা করে বৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করে আজিজুল হকের পরিবার।
অভিযোগ রয়েছে, আজিজুল হকের পরিবার এই মাদ্রাসার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সেটি ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়। নতুন পরিচালনা কমিটিতে আজিজুল হকের পরিবারের সদস্য ছাড়াও যুক্ত হন বিএনপির কয়েক নেতা, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় সরাসরি মদত দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এই মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আজিজুল হকের পরিবার কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকার এরপর ক্ষমতায় এলেও তারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তৈরি হয় সুসম্পর্ক।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হক জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময়ে দুজনেই বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। মামুনুলকে উগ্রবাদী তৎপরতা এবং মাহফুজুলকে পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে বহিষ্কার করা হয়। তবে আজিজুল হক প্রভাব খাটিয়ে দুই ছেলেকে আবার মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনেন। এখন এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন মাহফুজুল হক।
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকেই ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজত নেতা মামুনুল হককে। ছবি: নিউজবাংলা
মাদ্রাসাটি যেভাবে গড়ে ওঠে
মোহাম্মদপুরে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা নিয়ে অনুসন্ধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছে নিউজবাংলা। মাদ্রাসাটির বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও কথা বলেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৯৮৬ সালে স্থানীয় আবাসন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও তার ভাই মোহাম্মদ নূর হোসেন মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদের পশ্চিম পাশে ১৬ কাঠা জমির ওপর মাদ্রাসাটি গড়ে তোলেন। এরপর ১৯৮৮ সালের ৯ নভেম্বর ও ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর তারা দুটি নিবন্ধিত দলিলে মাদ্রাসাটি ওয়াকফ করেন।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি থেকে নিবন্ধন হয় মাদ্রাসার নামে। জমির মালিক ও সাধারণ মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় পাঁচতলা ভবনে রূপ নেয় মাদ্রাসাটি। গঠন করা হয় ২১ সদস্যের পরিচালনা কমিটি, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি কমিটির মেয়াদ তিন বছর।
শায়খুল হাদিস আজিজুল হক: শিক্ষক থেকে দখলদার
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শুরুতেই সেখানে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আজিজুল হক। এরপর ১৯৯২ সালে মাওলানা আলী আজগরের জায়গায় নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
মূল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অধ্যক্ষ হওয়ার পর আজিজুল হক সেই নিয়ম ভাঙতে শুরু করেন। রাজনৈতিক সংগঠন খেলাফত মজলিসের আমির হওয়ার সুবাদে বিএনপি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। এরপর নানান অভিযোগে ১৯৯৯ সালে মাদ্রাসা থেকে তাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়।
তবে ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি ও পুলিশের সহায়তায় আজিজুল হকের পরিবারের সদস্যরা মাদ্রাসাটি দখল করেন। হামলায় নেতৃত্ব দেন মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হক। চারদলীয় জোটের এমপি ও আজিজুল হকের এক মেয়ের ভাশুর মুফতি শহীদুল ইসলামও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
মাদ্রাসা দখলের পর এর প্রতিষ্ঠাতা ও সরকার অনুমোদিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিতাড়িত করা হয়। অনুমোদনহীন পারিবারিক কমিটির মাধ্যমে শুরু হয় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। অন্যদিকে, প্রকৃত পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিতাড়িত হওয়ার পর মূল মাদ্রাসার কয়েক শ গজ দূরে একই নামে আরেকটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন মূল জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত অধ্যক্ষ মাওলানা হিফজুর রহমান। নতুন ওই মাদ্রাসার কার্যক্রম এখনও চলমান।
বিষয়টি নিয়ে মাওলানা হিফজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি অসুস্থ উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে মাদ্রাসা দখলের দিন সেখানে উপস্থিত থাকা সাবেক এক শিক্ষক কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন বাৎসরিক ছুটি চলছিল বলে মাদ্রাসা ছিল একেবারে ফাঁকা। শুধু আমি আর সিনিয়র শিক্ষক ও তৎকালীন কমিটির সদস্য মুফতি মনসুরুল হক এবং কিছু ছাত্র ছিলাম।
‘হঠাৎ করেই বিকেলে মামুনুল হক ও মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে কয়েক শ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলা করে। তারা মাদ্রাসাজুড়ে তাণ্ডব চালায়, মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে বোমা বিস্ফোরণ করে। আমি মাদ্রাসার তৃতীয় তলার বাথরুমে ও মনসুর হুজুর একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। তারা মাদ্রাসা দখল নেবার পর পুলিশ এসে নিরাপত্তার কথা বলে আমাদের বের করে নিয়ে যায়। বের হবার পথে লক্ষ করি মাদ্রাসার চারপাশে পুলিশ আর দুটি মাইক্রোবাস ভর্তি নানা ধরনের অস্ত্র। এরপর থেকে আমরা আর মাদ্রাসায় ঢুকতে পারিনি।’
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় একচ্ছত্র আধিপত্য মামুনুল হক পরিবারের। ছবি: নিউজবাংলা
মাদ্রাসায় পারিবারিক পুনর্বাসন
আজিজুল হক জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের কর্তৃত্ব বাড়াতে বিভিন্ন অনিয়ম শুরু করেন। তখনকার সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রভাব খাটাতে শুরু করেন মাদ্রাসায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার সাবেক তিন শিক্ষক নিউজবাংলাকে জানান, আজিজুল হক অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তার ছেলে মাহফুজুল হক পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে আবার আজিজুলের চাপেই তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পর মাহফুজুলের বিরুদ্ধে চারিত্রিক স্খলনের অভিযোগও ওঠে। মাদ্রাসারই আরেক শিক্ষক মাওলানা মোস্তাক আহমদ শরিয়তপুরী তার বিরুদ্ধে সমকামিতার লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তবে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেই শিক্ষককেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন আজিজুল হক।
আজিজুল হকের আরেক ছেলে মামুনুল হক উগ্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ছাত্র থাকার সময় মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন। সে সময় মামুনুল খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। মাদ্রাসায় রাজনীতি তখনও নিষিদ্ধ থাকায় পরিচালনা কমিটির চাপে আজিজুল হক নিজেই মামুনুলসহ পাঁচ ছাত্রকে বহিষ্কারে বাধ্য হন। তবে কিছুদিন পর অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু নিজের ছেলেকে তিনি মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনেন।
মাদ্রাসার সাবেক কয়েক শিক্ষক নিউজবাংলাকে জানান, আজিজুল হক কোনো নিয়ম না মেনে নিজের ছেলে ও নাতিদের নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া, মাদ্রাসার পাঠ্যবই কেনায় অনিয়মসহ বেশ কিছু গুরুতর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
আদালতের নির্দেশনাও উপেক্ষিত
২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে আজিজুল হক মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসা দখলের পর মাওলানা আবদুল মালেককে প্রধান করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করেন।
সেই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে বিতাড়িত পরিচালনা কমিটি। ঢাকা জেলা জজ আদালতের সেই মামলার (নম্বর ৪১০/২০০১) রায় বিতাড়িত কমিটির বিপক্ষে যায়। আজিজুল হকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে ২০১২ সালে হাইকোর্টও বিতাড়িত কমিটির পক্ষে রায় দেয়। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ২০১৪ সালে আপিল বিভাগেও খারিজ হয়।
এর মধ্যে ২০১২ সালের আগস্টে আজিজুল হক মারা যান। তবে তার মৃত্যুর পর ছেলেদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসাটি।
আদালতে মামলার মধ্যেই ২০০৩ সালে ওয়াকফ প্রশাসন থেকে নিবন্ধন পেয়ে ২০০৬ সালে ২১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করে মাদ্রাসার বিতাড়িত কমিটি। নতুন কমিটির সভাপতি আহমদ ফজলুর রহমান জমির বৈধ কাগজের ভিত্তিতে আজিজুল হকের অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করে তাদের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ওয়াকফ প্রশাসনে আবেদন করেন।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে মাদ্রাসার অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয় ওয়াকফ প্রশাসন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুইবার জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হলেও তারা উচ্ছেদের কোনো পদক্ষেপ নেননি। ওয়াকফ কমিশনের এই আদেশের বিরুদ্ধেও উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন আজিজুল হক, তবে সেটিও খারিজ হয়।
আইনি এসব লড়াইয়ের বেশ কিছু নথি পেয়েছে নিউজবাংলা। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে মাদ্রাসাটি দখলমুক্ত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মকবুল হোসেন ও মো. কামরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের বর্তমান অবস্থান চিহ্নিত করতে পারেনি নিউজবাংলা, ফলে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে মাদ্রাসার কয়েকজন সাবেক শিক্ষকের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে তখন আজিজুল হক পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সে জন্য মাদ্রাসা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট আলেম সমাজ নয়, সকল আলেমদের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আর জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসার দুই পক্ষকেই আমি সম্মান করতাম। তাদের দুই পক্ষই নানা সময়ে আমার কাছে মাদ্রাসার বিষয়টা নিয়ে এসেছিল, কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকায় তখন আমার এ নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমার কারণে মাদ্রাসার অবৈধ কমিটির উচ্ছেদ হয়নি এ অভিযোগ ঠিক নয়। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল ঠিকই, কিন্তু কোনো পক্ষই আমার কাছ থেকে বাড়তি সুযোগ নিতে পারেনি।’
উচ্চ আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পরেও কেন বিষয়টির সুরাহা করা হয়নি, জানতে চাইলে নানক বলেন, ‘মামলার রায় হয়েছে সেটাই আমি জানতাম না, আজকেই জানলাম।’
আজিজুল হক মাদ্রাসাটি দখল করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ করেছিলেন।’
আজিজুলের কমিটিতে বিএনপি নেতারাও
মাদ্রাসার দখল বৈধ করতে ওয়াকফ প্রশাসন থেকে নিবন্ধন নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন আজিজুল হক। এ জন্য মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য ১৯ সদস্যের একটি কমিটি করে ওয়াকফ প্রশাসনে জমা দেয়া হয়। তবে উচ্চ আদালতে রিট করে সেই কমিটিতে স্থগিতাদেশ পায় মাদ্রাসার বৈধ কমিটি।
আজিজুল হকের করা ১৯ সদস্যের কমিটির প্রথমেই ছিল তার নিজের নাম। এ ছাড়া, আজিজুল হকের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তার মেয়ের জামাই মাওলানা গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, দুই ছেলে মাহফুজুল হক ও মামুনুল হক, নাতি দেলোয়ার হোসেন ও আরও তিন আত্মীয়।
নড়াইল-২ আসন থেকে ২০০২ সালের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী খেলাফত মজলিসের এমপি মুফতি শহীদুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠিত মারকাজুল ইসলামের প্রধান কর্মকর্তা মাওলানা সাঈদ নূর ছিলেন এই কমিটির সদস্য।
এই শহীদুল ইসলাম আল্লামা আজিজুল হকের এক মেয়ের ভাশুর। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুবাই থেকে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদকে সংগঠিত করার অভিযোগ রয়েছে।
আজিজুল হকের করা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন কিশোরগঞ্জের বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী হাজি সিদ্দিক মিয়া। এ ছাড়া, টুঙ্গিপাড়া থেকে ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি নেতা মাওলানা মো. ওমরসহ মাওলানা মো. মহিউদ্দিন মোল্লা নামে আরও একজন নেতা ছিলেন সেই কমিটিতে।
মাদ্রাসার আড়ালে উগ্রবাদী কার্যক্রম
মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় আজিজুল হকের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর সেটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সংগঠিত হওয়ার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয় বলে প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ ডিসি হারুন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি মুফতি নিয়ামতউল্লাহ ১৫-২০ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। সেখান থেকে এসে জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরুর পর তার সঙ্গে মামুনুলের বোনের বিয়ে হয়। এই নিয়ামতউল্লার সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনের বন্ধুত্ব ছিল।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর নিয়ামতউল্লাহকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আজিজুল হক তখন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান আসমি হুজি নেতা মুফতি হান্নানেরও যাতায়াত ছিল ওই মাদ্রাসায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০০৫ সালের দিকে নিয়ামতউল্লার সঙ্গে মামুনুলও ৪০ দিন পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানকার একটি ধর্মীয় সংগঠনকে তারা মডেল হিসেবে গ্রহণ করে তা বাংলাদেশের ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেন। আর এসব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল মোহাম্মদপুরের দখল করা মাদ্রাসাটি।
মাদ্রাসাটি দখলের পরই যে মাওলানা আবদুল মালেককে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বানানো হয়েছিল, তার ছেলে হাফেজ মাওলানা আবু তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি।
মাদ্রাসা দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাহফুজুল হকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি, ক্ষুদেবার্তারও সাড়া দেননি।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের রায় পাওয়ার পরও আজিজুল হকের পরিবার মাদ্রাসাটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। আমরা মূল কমিটির কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তাদের উচ্ছেদে অবশ্যই সাহায্য করব।’