পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে বেড়াতে আসা মানুষের বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ঘোড়া। কেউ কেউ ঘোড়ায় চড়ে সৈকত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার ও রাজকুমারী বেশে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। ছবি তোলার বিনিময়ে পর্যটকদের গুনতে হয় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রুখতে সরকারের আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ রয়েছে সমুদ্রসৈকত। কক্সবাজারে আসছেন না কোনো পর্যটক। বন্ধ রয়েছে পর্যটন স্পট, হোটেল-মোটেলসহ সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
এর ফলে অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে সৈকতে পর্যটকদের বিনোদনে ব্যবহার হওয়া ঘোড়াগুলোও। ঘোড়ার মাধ্যমে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মালিকদের অবহেলার শিকার হচ্ছে নিরীহ প্রাণীগুলো। সুসময়ে ঘোড়াগুলোকে নিজেদের উপার্জনে ব্যবহার করলেও ঘোড়াগুলোর এমন দুঃসময়ে পাশে নেই তাদের মালিকরা।
ঘোড়াগুলোর প্রতি এমন অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে।
ঘোড়ার মালিকরা জানান, করোনায় আর্থিক সংকটে রয়েছেন তারা। নিজেদের খাবার জোগাতে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে ঘোড়ার খাবার জোগানো তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই ঘোড়াগুলোকে একপ্রকার বেওয়ারিশের মতো রাস্তায় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এখন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঘোড়াগুলো খাবার খেয়ে নিচ্ছে আর ফুটপাত হয়েছে তাদের নতুন ঠিকানা। ঘোড়াগুলো ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, সমিতিপাড়া, বাহারছড়া, কলাতলী, লাইট হাউস, আদর্শগ্রাম, বড় ছড়া ও ইনানী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে পর্যটকদের বিনোদন কাজে ব্যবহার হতো এমন প্রায় শতাধিক ঘোড়া রয়েছে সেখানে।
সৈকতে বেড়াতে আসা স্থানীয় ও পর্যটকদের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ওই সব ঘোড়া ব্যবহার হতো। এ ছাড়া বিবাহসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও ভাড়ায় খাটত ঘোড়াগুলো। ঘোড়াগুলোকে এ কাজে ব্যবহার করে ভালোই আয় হতো মালিক-শ্রমিকদের। কিন্তু চলমান মহামারির কারণে পর্যটনশিল্প থমকে পড়েছে।
পর্যটন স্পটগুলোও কখন খুলে দেয়া হবে, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফলে পর্যটন খাতের অন্য ব্যবসায়ীদের মতো ঘোড়ার ব্যবসায়ীরাও সংকটময় সময় পার করছেন।
অনেকে পেশা বদলে পান বিক্রি, অটোরিকশা ও টমটম চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
এ অবস্থায় ঘোড়ার খাবার জোগাতে পারছেন না মালিকেরা। নজর দিতে পারছেন না পশুগুলোর স্বাস্থ্যের প্রতিও। অযত্ন-অবহেলায় রোগা হয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে অনেক ঘোড়া।
মালিকের কাছ থেকে ঘোড়া নিয়ে সৈকতে যাওয়া কর্মচারী মোহাম্মদ সিফাত, লুকমান, নুরুল ইসলাম, মো. তারেক, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আকতার হোসেনসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার এই প্রতিনিধির। এদের মধ্যে অনেকে জানান কঠোর বিধিনিষেধের আগে সৈকতে এক একটি ঘোড়া নিয়ে প্রতিদিন এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতো তাদের। মালিককে ভাড়ার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় থাকত তাদের একেকজনের।
কিন্তু এখন সবকিছু বন্ধ থাকায় ঘোড়ার মাধ্যমে আয়ও বন্ধ। তাই অন্য পেশার মাধ্যমে সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন তারা। ঘোড়ার মালিক রায়হান সিদ্দিকী বলেন, ‘করোনা সব শেষ করে দিয়েছে। পর্যটন ব্যবসা বন্ধ থাকায় এখন টমটম চালিয়ে সংসার চলছে।’
তিনি আরও জানান আর্থিক সংকটের কারণে ঘোড়াগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে যতটুকু পারা যায় ঘোড়ার খবর রাখছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যখন আবার পুনরায় সমুদ্রসৈকত খুলবে, পযটক আসবে তখন ফের ঘোড়াগুলো নিয়ে সমুদ্রসৈকতে নেমে পড়বেন।
তবে ঘোড়ার প্রতি মালিকদের এমন আচরণকে অমানবিক বলেছেন স্থানীয়রা। তাই করোনার এই সংকটময় মুহূর্তে মালিকদের প্রতি তাদের আহ্বান ঘোড়াগুলোর পাশে থাকার।