সীমান্তবর্তী জনপদ আগ্রাদ্বিগুন। নওগাঁ শহর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরের ইউনিয়নটিতে রয়েছে ৪২টি গ্রাম। ধামইরহাট উপজেলার এই প্রত্যন্ত জনপদেই গড়ে উঠেছে এক আধুনিক পাঠাগার।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগারটিতে টেবিল, শেলফ ও আলমারিতে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন বই। প্রায় চার হাজার বইয়ের পাশাপাশি পাঠাগারটিতে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা।
প্রত্যন্ত গ্রামে ব্যতিক্রমী পাঠাগার তৈরির উদ্যোক্তা আলমগীর কবির নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি নিজ বাড়ির দ্বিতীয় তলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গার ওপর গড়ে তুলেছেন এই পাঠাগার। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান টানা ১৭ বছর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। বাবার নামেই পাঠাগারের নামকরণ করেছেন তিনি। ‘মুজিবুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার’ এখন স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রে।
একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলমগীর কবির জানান, পাঠাগারটি উন্মুক্ত রয়েছে সবার জন্য। বই, ডেকোরেশনসহ এটি তৈরিতে প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠাগারটি খোলা থাকে।
পাঠাগারে একসঙ্গে ৪০-৫০ জন বসে বই পড়তে পারেন। বাবার মৃত্যুর পর চার ভাই মিলে মুজিবুর রহমান নামে একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। সেই ফাউন্ডেশনের পক্ষে থেকে ২০১৫ সাল থেকে অসহায় শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক কাজ করছেন তারা। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেই তৈরি করা হয়েছে ‘মুজিবুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার’।
আলমগীর কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্ঞান চর্চার অভাবে আমাদের সমাজে প্রগতিশীল মানুষের বড়ই অভাব। প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের পাঠাগারে প্রায় চার হাজারের মতো বই আছে।
‘আমাদের ইউনিয়নে মোট ৪২টি গ্রাম আছে। প্রতিটি গ্রাম থেকে ২-৩ জন নিয়ে টিম করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তারা পড়ার জন্য পাঠাগারে আসবে। কবি, সাহিত্যিকদের জীবনী, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘উপজেলায় ১৩৯টি প্রাথমিক, ২৬টি মাধ্যমিক ও ১৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ২২-২৫ জন ছাত্রছাত্রী বাছাই করে দেবেন। যাদের সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে নিজস্ব পরিবহন দিয়ে লাইব্রেরিতে নিয়ে আসা হবে। তারা পছন্দমতো বই পড়বে।’
আগ্রাদ্বিগুন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ফারুক হোসেন বলেন, ‘একটা ইউনিয়ন পর্যায়ে এত সুন্দর পাঠাগার পাব তা কল্পনা করিনি। করোনাকালীন সকল শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অবসর সময়ে আমরা এখানে এসে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করছি।’
রাফিয়া খাতুন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সত্যিই মুগ্ধ এমন একটি পাঠাগার স্থাপন করায়। আমরা প্রতিদিনই কয়েকজন এখানে বই পড়তে আসি।’
আগ্রাদ্বিগুন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘এটি অনেক মহৎ উদ্যোগ। একটি পাঠাগারে যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার তার সবগুলোই সেখানে আছে। পাঠাগারটি সময় উপযোগী। আমি নিজেও অবসর সময়ে পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ি। আমার শিক্ষার্থীদের পাঠাগারে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি।’
ধামইরহাট উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) গনপতি রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকায় এমন একটি পাঠাগার সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এমন একটি উদ্যোগ এলাকায় ব্যপক সাড়া ফেলেছে। আমি আশা করি পাঠাগারে শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ আসবে, বই পড়বে।’