করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় বন্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল। এতে অন্তত ২০ হাজার প্রবাসী কর্মীর কর্মস্থলে পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বেশি দামে টিকিট কিনেও তারা কাজে যোগ দিতে পারছেন না। কবে পারবেন, তাও নিশ্চিত নয়।
এমন বাস্তবতায় ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রয়েছে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের। করোনা মহামারির মধ্যেও এর ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ১ হাজার ৮৬০ কোটি ৩৮ লাখ (১৮.৬০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) চেয়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে বিদেশে যাচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসী কর্মী। কঠোর বিধিনিষেধের সময় অর্থাৎ ১৪ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে কর্মস্থলে যাওয়ার কথা ছিল আরও অন্তত ২০ হাজার ব্যক্তির। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় শিগগিরই তাদের যাওয়া হচ্ছে না।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন ২ হাজার করেও যদি বিদেশ যান, সে হিসেবে সপ্তাহে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার ব্যক্তি বিদেশে যান। তারা সবাই কিন্তু এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যেহেতু আমরা বিদেশে কর্মী পাঠাই, সেখানে হুট করে ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমি বলব ঠিক হয়নি।
‘সৌদি আরব, কাতার, ওমান কেউ আমাকে বলেনি যে লোক পাঠাবেন না। আমরা নিজেরাই বন্ধ করলাম। এর ফলে এই যে কর্মীদের, যাদের যাওয়ার কথা, তাদের ভিসা ও টিকিট সব জড়িত। এই যে সেখানে গিয়ে ১৪ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টিন করার টাকাও তাদের দেয়া আছে, এই টাকা কিন্তু আর সে ফেরত পাবে না। তাদের ভিসার মেয়াদ নিয়েও সংকট তৈরি হবে। ঠিক সময়ে কর্মস্থলে সে যোগ দিতে পারবে না। তার খরচও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো দেশের সরকার আমাদের বলেনি আকাশপথে সে দেশে যাওয়া যাবে না। আমরা নিজেরাই নিজেদের শ্রমবাজারের ক্ষতি করলাম। কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে যদি আমাদের লোক বিদেশ যেত, তাহলে কোভিড ঝুঁকিও তৈরি করত না। আমি মনে করি, এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’
ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার মধ্যে প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গতবারও বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে পাঠিয়েছি।
‘এবারও একই পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য কর্মীদের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ কর্মী পাওয়া গেলে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে।’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।
মহামারির প্রভাবে কয়েক লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। ফাইল ছবি
তবে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু থাকায় তা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কাজে আসেনি। এর মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন। প্রাথমিকভাবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে।
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তবে চিকিৎসা, পণ্যবাহী ও বিশেষ ফ্লাইটকে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।