বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মামুনুলের কথিত তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে যা জানা গেল

  •    
  • ১২ এপ্রিল, ২০২১ ২২:৫৯

আমার বড় ভাই ও ভাবি দুজনেই মারা গেছেন। তারা দুই ভাই, দুই বোন। বড় ভাতিজা প্রবাসে আছেন ১৬ বছর। ছোট ভাতিজা শাহজাহান বাড়ি দেখাশোনা করেন। বড় বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। সে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। ছোট ভাতিজি জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে লিপি রাজধানীর উত্তরার এশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স পাস করে এখন বাসায় আছে: লিপির চাচা।

রিসোর্টে নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রী আর আরও এক নারীর সঙ্গে কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর তাকে তৃতীয় স্ত্রী দাবি করা হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের কোনো কিছুই স্পষ্ট না।

কথিত তৃতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস লিপির বাড়ি গাজীপুরর কাপাসিয়ার বানার হাওলা গ্রামে গিয়ে স্বজন আর প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও পাওয়া গেল না বিস্তারিত কোনো তথ্য।

মামুনুলের সঙ্গে কথিত বিয়ের বিষয়ে কিছু জানেন না লিপির চাচা হিরন মিয়া।

মামুনুলের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা ভাই মো. শাহজাহান ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। ঘরে ঝুলছে তালা। স্বজনরাও জানেন না তিনি কোথায়।

৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে সঙ্গীনি জান্নাত আরা ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন মামুনুল হক। দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন বললেও নাম হিসেবে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন আমিনা তাইয়্যেবা হিসেবে। তবে তাইয়্যেবা আসলে তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম।

মামুনুলের এই দাবি সেই রাতেই প্রশ্নের মুখে পড়ে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন টেলিফোনালাপে। আমিনা তাইয়্যেবাকে কল তরে মামুনুল সেদিন বলেন, সঙ্গীনি শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ওই কথা (দ্বিতীয় বিয়ে) বলতে বাধ্য হয়েছেন।

ওই রাতেই আরও কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে মামুনুলের ফোনালাপ ফাঁস হয়। আর শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় তার নতুন এই সঙ্গীনির নাম।

শনিবার মো. শাহজাহান মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করে জানান, সেদিন সকালে মামুনুল তাকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে বলেছেন, তার বোনকে বিয়ে করেছেন।

শাহজাহান জানিয়েছেন ৭ এপ্রিল শেষবারের মতো কথা হয়েছে তার বোনের সঙ্গে। মামুনুল জানিয়েছেন, এখন তিনি তার বোনের বাসায় আছেন।

বোন লিপিকে উদ্ধার করে অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন শাহজাহান।

লিপির বিষয়টি নিয়ে জানতে কাপাসিয়ার বানার হাওলা গ্রামে গিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি।

গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তালা ঝুলছে। সেখানে কেউ নেই।

গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। আলাপ হয় শাহজাহানের বাড়ির ভাড়াটে নিলুফা আক্তারের সঙ্গেও। গত মাসেই তিনি সেখানে উঠেছেন।

নিলুফা বলেন, ‘গত কয়েক দিন জান্নাত আপাকে বাড়িতে দেখতে পাচ্ছি না। তিনি প্রায় সময় বাড়ির বাইরে গেলে পর্দা করে যেতেন। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না। তারা ভাই-বোন সবাই অনেক মিলে চলাফেরা করে।’

কথা হয় শাহজাহানের ছোট চাচা হিরন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাই ও ভাবি দুজনেই মারা গেছেন। তারা (লিপি) দুই ভাই, দুই বোন। বড় ভাতিজা প্রবাসে আছেন ১৬ বছর। ছোট বাতিজা শাহজাহান বাড়ি দেখাশোনা করেন।

‘বড় বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। সে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। ছোট ভাতিজি জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে লিপি রাজধানীর উত্তরার এশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স পাস করে এখন বাসায় আছে।’

মামুনুল হকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে-এটা জানতেন কি?

এমন প্রশ্নে লিপির চাচা বলেন, ‘তা জানি না। পত্রিকায় ও টিভিতে যা দেখেছি এতটুকুই। তবে, গত কয়েক দিন জান্নাতকে পাওয়া যাচ্ছে না। এর জন্যই, তারা সবাই বাড়িতে নাই। সবাই ঢাকায় আছে।’

জান্নাতের ছোট ভাই শাহজাহানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর থেকেই তিনি ফোন বন্ধ করে রেখেছেন।

জিডির তদন্ত নিয়ে ‘তথ্য নয়’

মামুনুলের বিরুদ্ধে লিপির ভাই যে জিডি করেছেন, তার ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত কী তথ্য পাওয়া গেল- জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ‘সেনসিটিভ ইস্যু হওয়ায় আমরা এই বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে পারব না। থানার একজন অফিসারকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার তদন্ত পরবর্তী ফলাফলেই কী করা উচিত, সেই দিকনির্দেশনা দেবে।’

শাহজাহানের জিডির পর বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন উপপরিদর্শক (এসআই) মইনুল ইসলাম। তিনি সোমবার সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিডির পর তদন্তের জন্য আদালত থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয়। আমরা এখনও অনুমতি পাইনি।’

মামুনুল চুপ

কথিত দ্বিতীয় বিয়ের দাবি নিয়ে চাপের মুখে পড়ার পর মামুনুল হক বারবার ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। রিসোর্ট থেকে এসেই তিনি চার ভাইকে নিয়ে ফেসবুকে লাইভে এসেছেন।

পরদিন একটি ‘মানবিক বিয়ে’র কথা বলে বড় আকারের পোস্ট দিয়েছেন।

এ ছাড়া ফেসবুকে লাইভে এসে ‘আল্লাহর গজবের’ চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন।

তার সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতারাও জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় বসে কথিত বিয়ের ‘বৈধতা’ দিয়েছেন।

তবে কথিত তৃতীয় বিয়ের বিষয়ে মামুনুল হক চুপ, তার সংগঠন হেফাজত কিছুই বলছে না।

বিষয়টি জানতে মামুনুল হকের মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সোনারগাঁর রিসোর্ট-কাণ্ডের পর থেকে তিনি নিজে ফেসবুক লাইভে আসা বা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া ছাড়া কোনো কথা বলছেন না সাংবাদিকদের সঙ্গে।

গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একাধিক বিয়ে করেছি। শরিয়তে একজন মুসলিম পুরুষকে চার চারটি বিয়ে করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। দেশি আইনেও চার বিয়ে করায় কোনো নিষেধাজ্ঞা বা কোনো অনুৎসাহ নেই। কাজেই আমি যদি চারটি বিবাহ করি, তাতে কার কী?’

মামুনুল বিয়ের দাবি করলেও তার স্ত্রী যে এগুলো জানতেন না, সেটি এখন স্পষ্ট। আর স্ত্রীর কাছে লুকানোর বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘ইসলামি শরিয়তের মধ্যেও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে যে, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য, স্ত্রীকে খুশি করবার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত ক্ষেত্রে সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর