সড়ক ভালো করার কাজ যখন শুরু হয়নি, তখন জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ শহরে যেতে সময় লাগত ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। এখন সময় লাগে আড়াই ঘণ্টার বেশি। আর এই আড়াইটা ঘণ্টা যাত্রীদের দফারফা অবস্থা।
সিএনজিচালক ফারুক বললেন, ‘এই রোডে নতুন গাড়ি ছয় মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়গা। এডে রোড না জাহান্নামের রাস্তা?’
একই প্রশ্ন সিএনজি যাত্রী আল্পনা বেগমের। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহ থাইকে জামালপুর আসতে জীবনটা শেষ হয়ে যায়গা। রাস্তা এতো ভাঙ্গা, মাজার কাম শ্যাষ। ঝাঁকি খাইতে খাইতে অসুস্থ হয়ে যায়গে। কতোদিন হয়ছে, মড়ার রাস্তা ঠিকও করে না।’
রাস্তা ঠিক করার কাজের কারণেই এই দশা। জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করার প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। তখন প্রকল্পটির সময় ধরা হয়েছি ১৮ মাস। কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই মহাসড়কের ৫০ ভাগ উন্নয়নকাজ শেষ করতে পারেনি জামালপুর সড়ক বিভাগ। কাজের ধীরগতির কারণে এই সড়কপথে যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার দুই জেলার মানুষ।
নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়।
প্রকল্পের প্রথম অংশে ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি। এক বছর পর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও সেখানে কাজ হয়েছে ৮০ ভাগ।
প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে ৩৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ২০২১ সালের মার্চ মাসের ২৩ তারিখে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ।
প্রকল্পের তৃতীয় অংশে ৪৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। এটিও শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের ২৩ মার্চ। এর কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ।
দুই বছর ধরে কাজ চলতে থাকায় নানান জায়গায় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মহাসড়ক।
এ সড়কের অ্যাম্বুলেন্স চালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, একজন মুমূর্ষু রোগী জামালপুর থেকে ময়মনসিংহে নিয়ে যেতে অনেক সময় লাগে। মাঝে মাঝে রোগী রাস্তায় মারা যায়। রাস্তা এত ভাঙা যে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যায়।
ট্রাকচালক মোজাম্মেল হক বলেন, রাস্তায় খানাখন্দের কারণে মাঝেমধ্যেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। প্রায়ই দুর্ঘটনা হয়। ভাঙা রাস্তায় গাড়ি চালাতে চালাতে তার বুকে ব্যথা হয়।
নান্দিনা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব নিউজবাংলাকে বলেন, নির্মাণাধীন রাস্তার ধুলোবালির কারণে তার স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জামালপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জামালপুর-চেচুয়া-মুক্তাগাছা মহাসড়ক মজবুতের কাজটি তিনটি প্যাকেজে চলছে। এর মধ্যে আমাদের একটি প্যাকেজের কাজের গতি বেশ সন্তোষজনক। বাকি প্যাকেজগুলোতে আমাদের কিছু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা আছে। এটার জন্যেই কাজের গতি কিছুটা ধীর। তারপরেও যতটা সম্ভব দ্রুত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। করোনা মহামারির কারণে কাজ শুরু করতেও কিছুটা দেরি হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, আগামী বর্ষার আগে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো দ্রুত মেরামত করার জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জামালপুর সড়ক বিভাগ এ বিষয়ে কাজ করছে।
৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত এই সড়ক মজবুত ও প্রশস্তকরণকাজে ভূমি অধিগ্রহণের ২৭৪ কোটি টাকাসহ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৪৯৯ কোটি টাকা ।