বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খরস্রোতা মধুমতী পার পায়ে হেঁটে

  •    
  • ১১ এপ্রিল, ২০২১ ১০:৪৬

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মধুমতী পারের অনেক মানুষের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জেলেরা মাছ ধরে ও মাঝিরা নৌকা বেয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু মধুমতীর এই দুরবস্থায় পূর্বপুরুষের পেশা পরিবর্তন করে অনেকে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন।

‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার সঙ্গে মিলে গেছে একসময়ের খরস্রোতা মধুমতী নদীর বর্তমান চিত্র।

এই নদীর বুক দিয়ে এখন পায়ে হেঁটে পারাপার করা যাচ্ছে। অথচ একসময় নদীর এ পার থেকে ও পারে নৌকা দিয়ে পারাপার করতে হতো। সব সময় খেয়াঘাটের নৌকায় ভিড় লেগে থাকত।

নদী তো সংকীর্ণ হয়েছেই। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নদীতে এখন হাঁটুপানি। দীর্ঘ চর পড়েছে নদীর মাঝবরাবর। মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা ৪০ ফুটের সামান্য খালের মতো সৃষ্টি হয়েছে। এই সামান্য হাঁটুপানি পার হলেই এ পার থেকে ও পারে যাওয়া যায়।

মানুষ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য পায়ে হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছে। উপজেলার শিরগ্রাম এলাকা থেকে পাচুড়িয়া পর্যন্ত কিছু কিছু জায়গায় পানি থাকলেও নদীতে জেগে উঠেছে বিশাল আকৃতির চর। প্রতিবছর এমন ছোটবড় কিছু চর জাগতে দেখা যায় মধুমতী নদীতে। এবার চরের আকৃতি অন্য সময়ের থেকে বড়।

মাগুরার পাচুরিয়া গ্রাম হয়ে মধুমতী পার হলেই ফরিদপুর জেলার কামারখালীর শিরগ্রাম পৌঁছানো যাচ্ছে পায়ে হেঁটেই।

মোহাম্মদপুর উপজেলার পূর্ব দিক ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মধুমতী নদীর তীরবর্তী এলাকা বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত না হলেও তীব্র ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রমত্তা মধুমতীর করাল গ্রাস বহু বছর ধরে নিঃস্ব করেছে নদীপারের শত শত মানুষকে। ফলে নদীপারের মানুষকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয় প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমে।

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ঘরবাড়ি আর না ভাঙার বিষয়টিকে কিছু মানুষ ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। মোহাম্মদপুরের মধুমতীপারের মানুষ নদীর বুকে কোথাও কোথাও ধান ও অন্যান্য ফসলেরও আবাদ করেছে। কোথাও বা ধু-ধু বালুচর।

উপজেলার কাশিপুর চর অংশে গিয়ে দেখা যায়, নদীপারের কৃষকরা ছাগল-গরু নিয়ে এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করছে। বালু ও পলিমাটি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে পানিপ্রবাহ। মধুমতীর বুকে চর জাগছে একের পর এক ।

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মধুমতীপারের অনেক মানুষের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জেলেরা মাছ ধরে ও মাঝিরা নৌকা বেয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু মধুমতীর এই দুরবস্থায় পূর্বপুরুষের পেশা পরিবর্তন করে অনেকে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন।

জেলেদের একজন মো. হারুন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চলছে এখন। প্রতি শুকনো মৌসুমে তাদের অন্তত চার মাস মাছ ধরা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত থাকতে হয়।’

একই কথা বললেন জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বর্ষায় মধুমতী অনেকটা পদ্মা নদীর মতো বিশাল আকৃতির হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে যা চেনাই যায় না। যেহেতু পানি থাকে না। তাই মাছ ধরা বাদ দিয়ে চায়ের দোকান করি। অপেক্ষায় আছি কবে নদীতে পানি আসবে। মাছ ধরব রাত জেগে।’

বাবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আসাদ বলেন, ‘নদীতে চর পড়ায় আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়েছি। নদীর বুকে বাদাম, ধান, মসুরিসহ বিভিন্ন চাষাবাদ শুরু করেছি।’

নদীপারের বাসিন্দা শিপন বলেন, ‘নিয়মিত আত্মীয়র বাড়িতে যাতায়াত করি। কিছুদিন আগেও নৌকায় চড়ে যাতায়াত করতে হতো। এখন নদীতে সামান্য পানি, তাই হেঁটেই এলাম। তেমন সমস্যা হয়নি।’

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানোয়ার জাহান সুজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মধুমতী নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় এই সময় এলে পানি শুকিয়ে যায়। পক্ষান্তরে বর্ষাকালে নদীভাঙনে শ শ পরিবার ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়। তাই খননের কোনো পরিকল্পনা নেই।

‘বর্ষাকালে ভাঙন রোধে বাঁধ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। পানি আসার আগেই সেই বাঁধ দেয়া যায় কি না, সেটা প্রক্রিয়াধীন।’

এ বিভাগের আরো খবর