বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা শিবিরে তিন বছরে ২০ অগ্নিকাণ্ড

  •    
  • ৯ এপ্রিল, ২০২১ ১০:১৭

সবশেষ ২২ মার্চ উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে অন্তত ১১ জন রোহিঙ্গার প্রাণ যায়, আহত হন অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা। প্রায় ছয় ঘণ্টায় আগুন ৯, ১০, ১১ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। ঘর পুড়েছে অন্তত ১০ হাজার। নিঃস্ব হয়েছেন ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ড খুব পরিচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত তিন বছরে শিবিরগুলোতে ছোট-বড় ২০টির বেশি আগুন লাগার ঘটনা দেখেছে রোহিঙ্গারা।

এসব ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি প্রশাসন। ফলে অগ্নিকাণ্ডগুলোর সূত্রপাত অজানাই থেকে যাচ্ছে।

সবশেষ ২২ মার্চ উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে অন্তত ১১ জন রোহিঙ্গার প্রাণ যায়, আহত হন অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা। প্রায় ছয় ঘণ্টায় আগুন ৯, ১০, ১১ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। ঘর পুড়েছে অন্তত ১০ হাজার। নিঃস্ব হয়েছেন ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় চলে গেলেও অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা-ও বলা যাচ্ছে না। যদিও বলা হচ্ছে, এ ঘটনায় গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এতে প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ড রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, উখিয়া টেকনাফে প্রায় তিন বছরে অন্তত ২০ অগ্নিকাণ্ড দেখেছে সেখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা।

এর মধ্যে ২০১৮ সালের ১১ জুলাই উখিয়া কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট এলাকায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। ওই দিনের আগুনে স্ত্রী ও তিন সন্তান হারান রোহিঙ্গা শরণার্থী আব্দুর রহমান।

চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বুধবার টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে ৫৫২টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে তিন হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়ে।

এর কয়েক দিন পর ১৭ জানুয়ারি উখিয়া সফি উল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা শরণার্থী ১৭ নম্বর শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে চারটি লার্নিং সেন্টার পুড়ে যায়।

গত ১৯ মার্চ শুক্রবার উখিয়া কুতুপালং ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আগুনে এনজিওর কয়েকটি হাসপাতাল পুড়ে যায়।

১৭ মার্চ বুধবার টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে বেশ কয়েকটি বসতঘর পুড়ে যায়। সেখানে আরও অন্তত পাঁচবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

২০২০ সালে আগুনে রোহিঙ্গাদের প্রায় এক হাজার বসতঘর ছাই হয়ে যায়। এছাড়া হাসপাতাল, দোকানপাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা পুড়ে যায়।

২০২০ সালের ১২ মে উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬০০ বসতঘর পুড়ে যায়। এর কয়েক দিন পর ১৭ মে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে ৩৫০টি বসতঘর ও ৩০ টি দোকান পুড়ে যায়।

৮ অক্টোবর উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে ৫০টির বেশি বসতঘর পুড়ে যায়। একই বছরের ২৬ এপ্রিল উখিয়া কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে ১৪ দোকান পুড়ে যায়। ১ এপ্রিল টেকনাফের হোইয়ক্যং চাকয়ারকুল রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে স্কুলসহ ১৫টি বসতঘর ছাই হয়। ২০১৯ সালের আরও বেশ কয়েকটি আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো বারবার অগ্নিকাণ্ডের জন্য রোহিঙ্গারাই দায়ী। তারা নিজ দেশে ফেরত যেতে চায় না বলে বারবার এ ধরনের কর্মকাণ্ড লিপ্ত হয়।

তারা বলছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে রোহিঙ্গারা জড়িত এমনকি অনেক রোহিঙ্গাকে আগুন লাগিয়ে দেয়ার সময় হাতেনাতে ধরার পরও তা তদন্তে ওঠে আসে না অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবারই অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে দায় সেরেছে প্রশাসন। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে স্থানীয়দের বাসা বাড়িতে থাকতে দেয়া না বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ২২ মার্চের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে উখিয়া বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝি ছৈয়দ জানান, কীভাবে আগুন লেগেছে জানি না। তবে এ ঘটনায় তার ব্লকের শতাধিক বসতঘর ও দোকান পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

আগুন লাগার কারণ জানিয়ে একই শরণার্থী ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা নারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অইনলাইগ্গেদে হিন লই একেক জনে একেক ডইল্লাহ হতা হর কেচ্ছুয়ে হয়দে অইনধরাই দিয়ে আর কেচ্ছুয়ে হয়দে গ্যাসর চুলাতো অইন লাইগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অইনর দাউ দাউ গরি জ্বইলে দে এক্কান জিনিসও গররতো বাইর গরি নপারি। চোখর সামনে বেগ্গিন পু্রি গেইয়। এহন পযন্ত অল্প কিছু সাহায্য সহযোগিতা পাইয়ি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উখিয়ার স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে বারবার অগ্নিকাণ্ডের জন্য মূল কারণ যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার। রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে প্রতিটি ঘরে দুই থেকে তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও এগুলো ব্যবহার সম্পর্কে তারা সচেতন নয়। যার কারণে ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটেছে।

উখিয়া পাংলখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা পরিকল্পিত। এখনও পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

২২ মার্চের আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থার কথা জানিয়ে উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৯ এর ক্যাম্প ইনচার্জ তানজিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘরবাড়ি পুড়ে যায় রোহিঙ্গারা ফের ক্যাম্পে আসতে শুরু করেছে। তারা তাবু দিয়ে ঘর তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।’

তদন্ত কমিটির প্রধান ও কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২২ মার্চ অগ্নিকাণ্ডে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ড রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।’

বালুখালীতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনে কারও যদি দোষত্রুটি পাওয়া যায়, কেউ যদি কর্তব্যে অবহেলা থাকে বা কারও দুরভিসন্ধি থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর