হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নিয়ে এক যুবকের ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলার ঘটনায় পুলিশ কাউকে চিহ্নিত করতে না পারলেও গ্রামবাসী কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শাল্লার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তারা তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শহিদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মিয়া ও তার আত্মীয় ফখরুল ইসলাম পক্কনের নাম জোর গলায় বলেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামলার আগেই আমি আমার পরিবারকে আলাইয়া দেলাইছি পরে তারা ঘরও ডুকিয়া সব জিনিসপত্র নিসে ভাঙছে সকল কাপড়ছোপড় নিয়া গেছে। যখন তারা আমার বাড়িত আগুন লাগানির চেষ্টা করছে তখন আমি ঘর থকি বরোই গেছি তারা আমার কাছ থাকি ২৫ হাজার টাকা আর মোবাইল নিয়া গেছে।
‘আমি মুক্তিযোদ্ধা কওয়ায় আমারে বেশি মারছে। আমি দুই জনরে ছিনছি একজন স্বাধীন মিয়া ও একজন পক্কন। আমি তো মুক্তিযোদ্ধা এর লাগি আমার ঘরটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে আর তার সাথে আমার একটা পুরান লাইগও আছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও পল্লি চিকিৎসক পরিতোষ সরকার বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে পারি, তারা যাদের চিনতে পেরেছেন তারা হলো নাচনী গ্রামের স্বাধীন মিয়া, পক্কন, ইয়ামত আলী, ইনাত আলী, মির্জা হোসেন, কেরামত, নেহার আলী, ফখর আলী, আলম উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন এবং কাশিপুর গ্রামের নবাব মিয়া, লিপন, আখলাক।’
এই হামলার ভিডিও ও বেশকিছু স্থিরচিত্রও পাওয়া গেছে।
ঘটনার সকালের বর্ণনা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি হামলার সময় ঘরেই ছিলাম, ঘর ছাড়ছি না। তবে যখন দেখি প্রাণে বাঁচতে পারি না, তখন সব খুলিয়া দিয়া দেলাইছি। কইছি, টাকাপয়সা লইয়া যা তবুও আমারে বাঁচাইয়া দে।’
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা জন্টু দাস নিজেদের নিরাপত্তা নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘যখন হামলা হয় আমি বাড়িত আছলাম না। বউরে কইছিলাম, তুমি টাকাউকা নিয়া যাইয়ো। কিন্তু তারা টাকা নিতো পারছে না। আমার ঘর দোয়ার কুবাইছে আর ড্রয়ার ভাঙিয়া ৮০ হাজার টাকা নিছে। আর আমরার কোনো নিরাপত্তা নাই।’
তবে পুলিশ বলছে, এখনও পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় কাউকে আটক করা যায়নি।
এই ঘটনায় পুলিশ যে মামলা করেছে তাতে দেড় হাজার জনকে আসামি করলেও তাতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল শহিদুল ইসলাম স্বাধীনকে প্রধান আসামি করে ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০০ জনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘটনায় মামলা হয়েছে আমরাও আসামিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছি। তবে পুলিশের চিহ্নিতদের খুঁজে বের করতেই কিছুটা সময় লাগছে।’
গত সোমবার হেফাজত নেতা মামুনুল হক দিরাইয়ে ধর্মীয় জলসা করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে উগ্র বক্তব্য রাখেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় এক যুবক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মামুনুলের সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এসব সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর জেরে বুধবার সকালে পাশের উপজেলা দিরাই থেকে মিছিল করে এসে হামলা করা হয় শাল্লার গ্রামটিতে। হামলার জন্য হেফাজত কর্মীদেরকে জড়ো করা হয় দুটি মসজিদে মাইকিং করে।
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এই জমায়েতের কথা জানত। তবে হেফাজত নেতারা তাদের আশ্বস্ত করেন যে তাদের কর্মীরা কেবল মিছিল করে চলে আসবে। পুলিশ সে বক্তব্যে ভরসা রেখে নিরাপত্তার কোনো আয়োজনই রাখেনি।