বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আছড়ে পড়া বিমান ঘিরে ‘মেলা’

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২১ ২৩:১১

ষাটোর্ধ্ব নাসের আলী তানোরের লালপুর এসেছেন নাটোর থেকে। ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে আসার উদ্দেশ্য, আলুক্ষেতে আছড়ে পড়া বিমানটি নিজ চোখে দেখা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন আবু বকর। মঙ্গলবার তার ছেলে সায়েম টিভিতে দেখেছিল ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটি। তারপর থেকেই আবদার। ছেলের সেই বায়না পূরণে আবু বকর এসেছিলেন আলুর মাঠে।

আলুক্ষেতে উল্টে পড়ে আছে বিমান। দেখতে দলে দলে ছুটে আসছে মানুষ। এই সময়টা আবার ব্যবসার সুযোগ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। খুলে বসেছেন দোকান।

খোলা জমিতে যে যেভাবে পেরেছেন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। চড়া রোদের হাত থেকে বাঁচতে টানিয়েছেন সামিয়ানাও। টানানো রঙিন কাপড়ের নিচে ক্রেতার আয়েশের জন্য ছিল চেয়ার-টেবিলও। দিনভর এসব দোকানে বিক্রি হয়েছে হরেক রকম খাবার।

যাদের পুঁজি আরও কম, তারা বসেছেন মাটিতে। ক্ষেতের মধ্যে ছিল, হাল আমলের ওজন মাপার যন্ত্রও। মাথার ওপর ছাতা তুলে এক কিশোরকে বসতে দেখা গেছে উল্টে থাকা বিমানের পাশে।

দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষের পদচারণায় দুর্ঘটনাস্থলে তৈরি হয় গ্রামীণ মেলার আবহ। বিমানের পাশে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলতে দেখা গেছে অনেক তরুণ-তরুণীকে।

লালপুরের আলুর ক্ষেতে মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে আছড়ে পড়ে বিমানটি। বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের বিমানটি রাজশাহীর হজরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর থেকে ওড়ে।

দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। উল্টে থাকা বিমান ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয় মানুষের। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়।

দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিনে বুধবার মানুষের সমাগম বাড়ে আরও। ভিড় লেগে থাকায় বসে যায় ঝাল মুড়ি, জিলাপি, বাদাম, আইসক্রিমের অস্থায়ী দোকান। তবে কৌতূহলীদের আসা-যাওয়ায় চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থা আলু চাষিদের।

দুর্ঘটনাস্থলে দূরদূরান্ত থেকে আসেন উৎসুক মানুষ

ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, উল্টানো বিমানের পাশে ব্যবসা পেতে বসেছেন ভাজাওয়ালা মুজাহিদুল ইসলাম। তার বাড়ি ঘটনাস্থলের পাশেই দেবীপুর গ্রামে।

তিনি জানান, আগের দিনই অনেকে তাকে এখানে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার দিন ব্যবসা করলে ভালো দেখায় না। তাই তিনি পরদিন এসেছেন। লোকসমাগমের কারণে তার বেচা-বিক্রি খুব ভালো হয়েছে।

ষাটোর্ধ্ব নাসের আলী তানোরের লালপুর এসেছেন নাটোর থেকে। ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে আসার উদ্দেশ্য, আলুক্ষেতে আছড়ে পড়া বিমানটি নিজ চোখে দেখা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন আবু বকর। মঙ্গলবার তার ছেলে সায়েম টিভিতে দেখেছিল ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটি। তারপর থেকেই আবদার। ছেলের সেই বায়না পূরণে আবু বকর এসেছিলেন আলুর মাঠে।

তবে মানুষের এই সমাগমে আলুচাষিরা বেশ চটেছেন। কয়েকজন চাষি বলেন, যে স্থানটিতে বিমান আছড়ে পড়েছে সেই জমিটির ইজারা নিয়েছেন নুরুল ইসলাম। মোহনপুর থানার মৌগাছি গ্রামের নুরুল ইসলাম বিমানের আশেপাশের ১৮০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আলু চাষ করছেন।

উল্টে যাওয়া বিমানের পাশে বসে নানা পণ্যের দোকান

নুরুল ইসলামের আলু চাষ প্রকল্প দেখভাল করেন সাইফুল ইসলাম। সকাল থেকেই তার তোড়জোড় মানুষ নিয়ন্ত্রণে। সাইফুল জানান, মানুষের পায়ের চাপে আলুর উপরিভাগে কালশিটে দাগ পড়েছে। এসব কোল্ডস্টোরে সংরক্ষণের জন্য নেয়া হলে পচন ধরবে। এই আলু বিক্রি বা সংরক্ষণ কোনোটাই হবে না। পুরোটাই ক্ষতি।

তার দাবি, অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হলো তাদের। নুরুল ইসলামের প্রজেক্টে আলু তুলতে শ্রমিকরা কাজ করছেন। বিমান আছড়ে পড়ার পর তারাও ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি।

এসব নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেয় সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, বিমান আছড়ে পড়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু আলুর যে ক্ষতি হলো তার কী হবে? যে ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতিপূরণ কে দেবে?

বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে মঙ্গলবারই অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এম এম আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে এয়ারক্রাফট এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ (বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত শাখা)।

অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এম এম আসাদুজ্জামান ও অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন হারুনর রশীদ বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ শেষে তারা দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটি সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এম এম আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, দুর্ঘটনার শিকার বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান এবং তার সঙ্গে থাকা প্রশিক্ষনার্থী ক্যাডেট নাহিদ এরশাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। এ ছাড়া বিমানের যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করে দেখেছেন। তবে আরও কিছু বিষয় তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবেন।

দুর্ঘটনা কবলিত বিমানের ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি। ক্যাডেট নাহিদও ভালো আছেন।’

দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল। তাই আলুর ক্ষেতেই ল্যান্ড করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ফোর্স ল্যান্ডিংয়ের সময় জমির আইলে নোজ গিয়ার আটকে গিয়ে বিমানটি উল্টে যায়।’

বুধবার সন্ধ্যা থেকে বিমানটির বিভিন্ন অংশ খুলতে শুরু করেন বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের কর্মীরা। আঁধার নেমে আসায় ব্যাটারি ব্যবহার করে আলো জ্বালিয়ে কাজ করেন কর্মীরা। বিমানটি খোলা সম্পন্ন হলে রাত নয়টার দিকে বিমানের অংশগুলো ট্রাকে নেয়া হয় রাজশাহীর হজরত শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরে।

এ বিভাগের আরো খবর