বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নেপাল দুর্ঘটনার পর কতটা সুরক্ষিত আকাশভ্রমণ

  •    
  • ১২ মার্চ, ২০২১ ১০:৪৭

কোনো পাইলটের লাইসেন্স নবায়নের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই পাইলটকে পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

তিন বছর আগে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ‘বিএন টু ওয়ান ওয়ান’ দুর্ঘটনায় ৫১ আরোহী নিহত হন। এ ঘটনার পর আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৩টি সুপারিশ করেছিল দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি।

দুর্ঘটনার যেসব কারণ শনাক্ত করা হয়েছিল, তার মধ্যে প্রধান ছিল পাইলটের মানসিক অস্থিরতা।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন হাতে এসেছে নিউজবাংলার। এতে দেখা যায়, কমিটির বেশির ভাগ সুপারিশই ছিল মূলত পাইলট বা ককপিট ক্রুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত।

কমিটির প্রথম সুপারিশ ছিল স্বাস্থ্যগত কারণে কোনো পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করা হলে পরবর্তীতে ফ্লাইটে ফেরার আগে যেন তার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা হয়।

সুপারিশ বাস্তবায়নসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো পাইলটের লাইসেন্স নবায়নের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই পাইলটকে পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি চাকরিতে প্রবেশ ও প্রশিক্ষণের সময় প্রত্যেক পাইলটের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে বেবিচক। দুর্ঘটনার পর নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে নীতি তৈরি করেছে ইউএস বাংলা এয়ারও।

কমিটির আরেকটি সুপারিশে ইউএস বাংলাকে বলেছিল, এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে, যাতে ক্রুদের পেশাগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক বিষয়গুলোকেও প্রাধান্য দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউএস বাংলা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনকাঠামো উন্নত করেছে। পাশাপাশি ককপিট ক্রুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট কি না তা নিশ্চিত করতে লাইসেন্স নবায়নের আগে বেবিচকের সহযোগিতায় পরীক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার বিমান। ছবি: এএফপি

কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দৈনিক রোস্টার করার ক্ষেত্রে ক্রুরা অবসাদ বা ক্লান্তিতে ভুগছেন কি না তাও নিশ্চিত করেছে ইউএস বাংলা।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ফ্লাইট চলাকালীন ক্রুদের ধূমপান থেকে বিরত রাখা এবং ধূমপানমুক্ত ফ্লাইট নিশ্চিত করা। এ প্রেক্ষিতে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ তাদের সব ক্রুকে ধূমপানে বিরত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল কাঠমান্ডুতে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সিমুলেটরে পাইলটদের রানওয়ে টু জিরো দিয়ে অবতরণ ও উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া এবং এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে নবীন পাইলটদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

তবে ইউএস বাংলা এয়ার যেহেতু এখন এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে না, তাই এ সুপারিশ দুটি বাস্তবায়ন হয়নি।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশনের প্রধান সালাউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন বছরে কমিটির সুপারিশের প্রায় সবগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে। এগুলো অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

‘প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যে দুটি সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, কাঠমান্ডু রুটে পুনরায় ফ্লাইট শুরু করলে সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে ইউএস বাংলা।’

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বিমান দুর্ঘটনার পর বেবিচক কড়া হলেও এখনও কিছু গলদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সুপারিশ কাগজে-কলমে বাস্তবায়ন হলেও বাস্তব চিত্র এতটা সহজ নয়।

অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন করেছে। আর নিরাপত্তা নজরদারিও বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে।

‘তারা ফ্লাইট সেফটির বিষয়ে আরও সতর্ক হয়েছে, এটি ঠিক। এই কারণে এওসি ও লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এগুলো ইতিবাচক দিক।’

ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্তে যেসব কারণ শনাক্ত করা হয় তার মধ্যে প্রধান ছিল পাইলট আবিদ সুলতানের মানসিক অস্থিরতা।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, হিউম্যান অ্যাওয়ারনেস যেটা বা হিউম্যান পারফরমেন্সের দিকগুলোতে আরও খবরদারি করা উচিত। ফ্লাইট সেফটিতে হিউম্যান অ্যাওয়ারনেস খুব বেশি প্রয়োজন। এ জায়গায় আরও কাজ করা উচিত।

‘সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যেটা রয়েছে, সেটা গ্রাউন্ড লেবেল পর্যন্ত কথা বলা উচিত। প্রত্যেক এয়ারলাইনস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এটা করতে পারে। এটা আসলে যতটা হওয়া উচিত, ততটা হচ্ছে না। আমরা কাগজে-কলমে অনেক কিছুই করছি, কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে কতটা কী হচ্ছে এটা বেবিচকের আরও কঠোরভাবে দেখা উচিত।’

এ টি এম নজরুল বলেন, ‘অপারেটর এবং রেগুলেটর প্রত্যেকেরই সেফটি ম্যানেজমেন্ট যেটা ডকুমেন্টেড আছে, সেটাকে এক্সিকিউট করা উচিত। আবার এটা আসলেই হচ্ছে কি না সেটা মনিটরিংও করা উচিত।

‘এমপ্লয়িদের মধ্যে যখন অসন্তোষ তৈরি হয়, এটা কিন্তু ফ্লাইট সেফটির জন্য মারাত্মক হুমকি। এটা মনে হয়, প্র্যাকটিক্যালি হওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা পাইলট এবং ক্রু, প্রত্যেকেরই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়া উচিত এবং রিকমেন্ডেশনগুলো প্রয়োগ করা উচিত। এতে করে কঠিন সময়ে তারা কীভাবে কাজ করবেন, সেটা বোঝা যাবে।’

২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিএস টু ওয়ান ওয়ান। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ড্যাশ এইট উড়োজাহাজটির চার ক্রুসহ ৫১ আরোহী। এদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, ২৪ জন নেপালি ও একজন চীনের নাগরিক। দুর্ঘটনায় যে ২০ জন প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন তাদের অনেকেরই আঘাত ছিল গুরুতর।

এ দুর্ঘটনার পর যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়, তাতে বলা হয়, উড়োজাহাজটি অবতরণের শেষ মুহূর্তে গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করছিল। ফলে রানওয়ে থেকে একটু দূরে মাটিতে আছড়ে পড়ে। আর এর ছয় সেকেন্ডের মধ্যে এটিতে আগুন ধরে যায়। আর এতেই মারা যান ফ্লাইটের বেশির ভাগ আরোহী।

তদন্ত কমিটির বেশির ভাগ সুপারিশই ছিল পাইলট বা ককপিট ক্রুদের মানসিক ও শারিরিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত। ছবি: সংগৃহীত

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে পাইলটের মানসিক অস্থিরতাবশত দিগ্‌ভ্রান্ত হওয়া ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবকে দায়ী করে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ফ্লাইট অবতরণের সময় কন্ট্রোল টাওয়ার ও ককপিট ক্রুদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তিকেও সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

কাঠমান্ডুর এ দুর্ঘটনা ছিল ১৯৯২ সালের পর নেপালের সবচেয়ে বড় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) বিমান বিধ্বস্তে নিহত হন ১৬৭ জন।

নেপালের এই বিমানবন্দরটিকে বিবেচনা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোর একটি হিসেবে।

এ বিভাগের আরো খবর