বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অনলাইনে ‘ঋণ’ থেকে সাবধান

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২১ ১৩:৩৩

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক কোনো ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে নেয়। কিন্তু কোনো চক্র যদি অনলাইনে এমন অ্যাপস খুলে ঋণ দিতে চায় সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু করার থাকে না।’

গেল মাসে প্রকট আর্থিক সংকটে পড়েন বেসরকারি চাকরিজীবি এইচ এম নূর। কোথায় মিলবে ১০ হাজার টাকা। কেউ যখন সাড়া দেয় না, তখন এগিয়ে আসে তারই এক বন্ধু। তবে টাকা দিয়ে নয়, সন্ধান দেন একটি অনলাইন প্লাটফর্মের। নাম ‘র‌্যাপিড ক্যাশ’।

অদৃশ্য এই প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যক্তিগত সব তথ্য তুলে দিতে হবে- এই শর্তে রাজি না হয়ে সরে আসেন নূর। বলেন, কে ঋণ দিচ্ছে তা জানি না। লেনদেনের কোনো বৈধতা আছে কি না তাও জানা নেই। বিপদে পড়ার ভয়ে টাকা নেয়া হয়নি।

হ্যাঁ, খুবই সহজ উপায়। মোবাইলে একটি অ্যাপস ডাউনলোড করুন। তথ্য দিন, পেয়ে যাবেন ঋণ। প্রশ্ন আসতে পারে, ঋণ পাওয়া কি এতই সহজ! অনলাইনে ঋণ দেয়ার প্রলোভন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একাধিক অ্যাপস। সেখানে জুড়ে দেয়া হচ্ছে শর্ত; মেনে নিলে পাওয়া যাচ্ছে ঋণ।

তবে, এই অর্থ লেনদেনকে অবৈধ বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

হাতের নাগালে এখন র‌্যাপিড ক্যাশ, স্বাধীনসহ নানান অ্যাপস। ইউটিউবে এসব অ্যাপসের রিভিউও দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার নিয়ম যেমন তুলে ধরা হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতারিত হওয়ার মতো তথ্যও দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু এসব অ্যাপস পরিচালনাকারীদের তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে নাগরিকদের সকল গোপন তথ্য নেয়া হলেও দেখার কেউ নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংক কোনো ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে নেয়। কিন্তু কোনো চক্র যদি অনলাইনে এমন অ্যাপস খুলে ঋণ দিতে চায় সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু করার থাকে না।

‘কারণ, বারবার গ্রাহককে বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হয়েছে এসব ফাঁদে যেন না পড়ে। কিন্তু এরপরও এক শ্রেণি এটার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সাধারণ নিরীহ মানুষ এদের ফাঁদে পা দিচ্ছে।’

অনলাইনে ঋণদাতা আরেক অ্যাপস ’স্বাধীন’। ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন প্লাটফর্মে বেশ আলোচিত অ্যাপস ‘র‌্যাপিড লোন’। মোবাইলে অ্যাপসটি নামালে নিয়মনীতি তুলে ধরা হয়। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেয় এই অ্যাপস, যা ১২০ দিনের মধ্যে পরিশোধের শর্ত যুক্ত করা হচ্ছে। তবে, ঋণের পরিমাণ কম হলে সময় কমিয়ে নির্ধারণ হয়।

অ্যাপসে ঋণ প্রক্রিয়া

মোবাইল নম্বর দিয়ে লগইন করে অ্যাপসে নিবন্ধন করতে হয়। প্রবেশের পর স্পিন কুপনের সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করার শর্ত রয়েছে। নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, এনআইডি কার্ডের নম্বর, ছবি, এনআইডি কার্ডের সঙ্গে সেলফি যুক্ত করে পূরণ করতে হয়। ঠিকানার সঙ্গে এলাকা, সড়ক নম্বর, পাড়া, মহল্লা যুক্ত করতে হয়। পরিবারের সদস্য, আত্নীয় স্বজন সংখ্যা এবং পেশাও তুলে ধরার শর্ত যুক্ত করে দিচ্ছে অ্যাপস র‌্যাপিড লোন।

দেখা যায়, যারা প্রথম গ্রাহক তাদেরকে সচরাচর ২০০০ টাকা ঋণ দেয়া হয়। আর ২০০০ টাকা ঋণ চাহিদা দিলে, অ্যাপসটি গ্রাহককে দেবে ১৬৮৫ টাকা। তবে, পরিশোধ করতে হবে ২০০৫ টাকা। এক্ষেত্রে কেটে রাখা হবে ৩১৫ টাকা। ঋণ পরিশোধের শর্ত দেয়া হয় সাত দিন। তবে, প্রথম গ্রাহককে কম পরিমাণ অর্থাৎ ১০০০ টাকাও সর্বনিম্ন ঋণ দেয়া হয়।

ঋণ দেবার ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জের নামে হচ্ছে ছলচাতুরি। বলা হয়, অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ ১২০ টাকা, ডাটা অ্যানালাইসিস ফি ১৮০ টাকা, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ৫ টাকা কেটে রাখা যুক্তি দেয়া হয়। তবে, পরিমাণ যতো বেশি হবে টাকা কেটে রাখার প্রবণতাও বেশি।

ঋণ দেয়ার সময় এসব শর্ত জুড়ে দেয় ঋণদাতা অ্যাপসগুলো।

ঋণদাতা কারা?

তথাকথিত ঋণের টাকা গ্রাহককে পরিশোধ করা হচ্ছে বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্টে। অর্থাৎ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। ‘র‌্যাপিড ক্যাশ’ অ্যাপসে যোগাযোগের কোনো ফোন নম্বর দেয়া নেই।

অ্যাপসে বলা আছে, ‘আমরা কোনো ব্যাংক নই। কিন্তু আমরা অনলাইন মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঋণ গ্রহণকারীদের সংযুক্ত করি।’

কিন্তু ঋণ দেয়কে বা বিনিয়োগকারী কারা তার কোনো তথ্য দেয়া নেই।

অনলাইন চ্যাটের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়, কোন মানদণ্ডে এসব ঋণ দেয়া হয়? উত্তর আসে, এআই প্রযুক্তি আপনার ঋণ বিভিন্ন যুক্তিবিজ্ঞান এবং গাণিতিক পরিভাষার মাধ্যমে পর্যালোচনা করে থাকবে।

এসব অ্যাপসে ঋণ দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়নি ‘র‌্যাপিড ক্যাশ’।

এই ঋণ দেয়া এবং নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অথবা কোনো সম্মতি আছে কি না? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি র‌্যাপিড ক্যাশ।

প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশ্লেষক লিপন মুস্তাফিজ জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনকৃত প্রতিষ্ঠানই শুধুমাত্র ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। কিন্তু অনলাইনে ব্যাংকের বাইরে এ ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা থাকছে না। সার্ভিস চার্জের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বড় অংকের অর্থ।’

নানা সার্ভিসের নামে অর্থ কেটে থাকে অ্যাপসগুলো।

এ বিষয়ে সিআইডির সাইবার শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) রেজাউল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাপসের মাধ্যমে ঋণ দিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। আবার ওয়েবপেজভিত্তিক ব্যবসা করতে চাইলে ই কমার্স, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এসব অনুমোদন না নিয়ে যদি তারা ঋণ বা লভ্যাংশ দেয়, তবে অবশ্যই সেটা প্রতারণা।’

তিনি জানান, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তারা এখনও পাননি। যদি কেউ অভিযোগ করে যে প্রতারিত হয়েছে, তাহলে অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর