বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টোলারবাগে সেই বিভীষিকার কোনো চিহ্ন নেই

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২১ ২০:২৫

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে মিরপুরের টোলারবাগে। সঙ্গে সঙ্গে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় আতঙ্ক। লকডাউন করা হয় ওই এলাকা।

করোনার বিভীষিকার সাক্ষরবাহী একটি নাম যদি আলাদা করতে হয়, তবে সেটি টোলারবাগ। রাজধানীর মিরপুরের এই ক্ষুদ্র মহল্লাটি এক বছর আগে সারা দেশের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে এসেছিল।

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে এখানে। সঙ্গে সঙ্গে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় আতঙ্ক। লকডাউন করা হয় ওই এলাকা।

এখন করোনা মহামারি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। লকডাউন উঠে গেছে আট মাস আগে। আতঙ্ক নেই কোথাও।

টোলারবাগে পা রাখলে, সংকীর্ণ মহল্লার রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বহুতল বাড়িগুলোর দিকে তাকালে এখন আর বোঝার উপায় নেই এক বছর আগে কী এক দম বন্ধ করা আতঙ্কের ছায়া পড়েছিল এখানে।

যেভাবে লকডাউন শুরু

গত বছরের ২১ মার্চ রাজধানীর টোলারবাগ এলাকার বাসিন্দা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসলাম গণি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন সারা দেশের মানুষের আলোচনা ও আতঙ্কের কেন্দ্রে পরিণত হয় এ মহল্লা। তার দুদিনের মাথায় ২৩ মার্চ এখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় আরেকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী দাবি করেন, দুই ব্যক্তি একই মসজিদে নামাজ পড়তেন। মসজিদটা ছিল তাদের বাসার পাশেই।

দুদিনের ব্যবধানে পরপর দুই ব্যক্তির মৃত্যুতে টোলারবাগে বাসিন্দাদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। তাদের বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়। ওই এলাকায় বসবাসরত প্রতিটি পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়।

দিনের বেলাতেও এক সুনসান নীরবতা নেমে আসে টোলারবাগে।

করোনা সংক্রমণ বাড়ার পর আতঙ্ক নেমে আসে টোলারবাগে

লকডাউনের ওই দিনগুলো কেমন ছিল, জানতে নিউজবাংলার এ প্রতিবেদক শুক্রবার এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন।

মিরপুরের পাইকপাড়া আনসার ক্যাম্পের বিপরীতে প্রধান সড়কের পাশে উত্তর টোলারবাগে ঢোকার একটি লোহার ফটক। শুক্রবার দুপুরে সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন দুজন নিরাপত্তাকর্মী। কথা হয় তাদের সঙ্গে।

নিরাপত্তাকর্মী ঝন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলাকায় প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যুর খবর জানাজানি হইলে পর পুলিশ আসে। যে বাড়িতে প্রথম মারা যায়, সেখানে তালা দেয় পুলিশ। এই বাসা থেকে কাউরে বের হইতে দেওয়া হয় নাই। মহল্লায় ওষুধ আর খাবারের দোকান ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ কইরা দেওয়া হইছিল।’

ঝন্টু বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এলাকার কেউ বাইরে যায় নাই, বাইর থাইকাও কেউ ঢুকে নাই। বহু লোক রাতের আন্ধারে মহল্লা ছাইড়া পালায় গেছিল। এক রাইতে ফাঁকা হইয়া গেল গোটা এলাকা। কিছু বাড়ির বাজারসদায় আমরা কইরা দিতাম।’

টোলারবাগ মহল্লাটি দুই ভাগে বিভক্ত। একটিকে বলা হয় উত্তর টোলারবাগ, সেটি মূলত দারুস সালাম আবাসিক এলাকার অংশ। যে দুজন প্রথম করোনায় মারা যান, তারা ওই উত্তর টোলারবাগের অধিবাসী। তার উল্টোদিকের এলাকাটি শুধু টোলারবাগ নামে পরিচিতি। তবে করোনা নিয়ে দুই টোলারবাগেই ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে মিরপুরের টোলারবাগে এই বাড়িতে। ছবি: নিউজ বাংলা

এলাকার ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি শুভাশিস বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে কাজ করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির কাছাকাছি যারা ছিলেন, তাদের সবাইকে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। প্রতিটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও এলাকার মসজিদে যারা নামাজ আদায় করেছেন, তাদের পরীক্ষা করা হয়। এলাকায় অবস্থিত সুপারশপ ‘‘স্বপ্ন’' ও স্থানীয় মুদি দোকানগুলোর ফোন নম্বর সব বাসায় জানিয়ে দেয়া হয়।’

কারও কিছু প্রয়োজন পড়লে তারা যেন একটি ফোনকলের মাধ্যমে দরকারি পণ্য নিজের দরজায় পেয়ে যান, সেটা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয় বলে জানান তিনি। এর ফলে এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার বিষয়টি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তির বসবাস ছিল উত্তর টোলারবাগের ‘দারুল আমান’ নামক ভবনে। ওই বাড়িতে দীর্ঘ পাঁচ বছর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খলিল।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গেছিলাম তাবলিগ জামাতে। ৪০ দিন জামাতে থাইকা আবার চাকরিতে ফিরছিলাম। ডিউটিতে আসার দুই দিন পর শুনি দেশে করোনা আসছে। যে লোক করোনায় মারা গেছেন, মৃত্যুর আগে কয়দিন দেখতাম, কিছুদিন পর পর হাসপাতালে নিয়া যাইতো।

‘একদিন শুনলাম জ্বর উঠছে। কিছুদিন এই হাসপাতালে, ওই হাসপাতালে নিছে। অনেক টাকা খরচ হইছে তাদের। মারা যাওয়ার পর শুনছি, করোনা ছিল। মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশ আইসা বাসায় তালা দেয়। কেউ ঘর থেকে বের হয় না। হঠাৎ কইরা পুরা এলাকা ফাঁকা হইয়া যায়। বাজার করার লোকও নাই কোনো। যে স্যারেরা ছিলেন, তারা এক দিনে অনেক বাজার করে আনতেন। টিভির লোকেরা (টিভি সাংবাদিক) আমারে অনেক বিরক্ত করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর পর বাড়ি থেকে ফোন করে (আমাকে) টিভিতে দেখা যায় বলে। পরে দুই দিন পর আমি রাতে বাড়িতে চলে গেছি। বাড়িতে গিয়ে দেখি আমারে টিভিতে দেখাইতেছে।’

তিনি আরও জানান, ‘বাসার মালিকেরা ভয়ে কেউই বাড়িতে ছিল না। প্রায় দুই মাস পর এইখানে লকডাউন তুইলা নেওয়া হয়। আমিও ছিলাম না। এক মাস ২০ দিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম।’

ওই সময় বহিরাগতদের কাউকে এলাকায় আসতে দেয়া হতো না বলেও জানান এলাকাবাসী।

নিরাপত্তাকর্মীদের একজন কালু মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সইরা গেলেও দিনরাত পাহারা চলছিল। বাইরের লোক কাউরে ঢুকতে দেওয়া হইতো না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, গত বছর পরপর দুটি মৃত্যুতে এলাকার বাসিন্দারা ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এরপর ২৩ মার্চ এলাকাটিকে সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা দেয় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

এটিই হচ্ছে ঢাকার প্রথম লকডাউন ঘোষিত এলাকা। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে ৪৮ দিনের মাথায় উত্তর টোলারবাগ থেকে পুলিশের পাহারা তুলে নেওয়া হয়।

দারুসসালাম থানার পুলিশ এ আবাসিক এলাকার প্রধান ফটকে সার্বক্ষণিক পাহারা বসায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উত্তর টোলারবাগে ৪০টি ৯ তলা ও ১০ তলা ভবনে ৬৭২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে ৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। এর পেছনের বস্তিতে ১৬৩টি পরিবারে হাজার খানেক মানুষের বসবাস। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ গতকাল বলেন, করোনায় আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে ওঠায় আইইডিসিআরের সঙ্গে পরামর্শে পুলিশের পাহারা তুলে নেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর