বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সব মনোযোগ এডিসে, তাই কিউলেক্স বেড়েছে

  •    
  • ৫ মার্চ, ২০২১ ০৮:৫৫

ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসার পর থেকে মশক নিধন কার্যক্রমের গতি মন্থর হয়েছে দুই সিটিতেই। ডিসেম্বর থেকে কিউলেক্স মশার লার্ভা ধ্বংসের কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও মেয়ররা ব্যস্ত ছিলেন ওয়াসা থেকে খালের দায়িত্ব বুঝে নিতে। সে সময় নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেনি দুই সিটির মশক নিধন ডিপার্টমেন্ট।

ডেঙ্গু রোগবাহী এডিস মশা মারার দিকেই দুই সিটি করপোরেশনের সব মনোযোগ নিবদ্ধ থাকায় কিউলেক্স মশা নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মৌসুমে কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে যে অভিযান চলার কথা, তা চলেনি।

ঢাকা দক্ষিণে মশা মারার ওষুধ বদলের কারণে এটির ডোজ নির্ধারণ নিয়েও অনিশ্চয়তায় কেটে গেছে সময়। এ ছাড়া মশার লার্ভা মারার চেয়ে ফগার মেশিনে উড়ন্ত মশা মারার দিকে থাকে দুই সিটি করপোরেশনের ঝোঁক। এসব কারণে রাজধানীতে ফেব্রুয়ারি থেকে কিউলেক্স মশার উপদ্রব অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

২০১৯ সালের জুলাই-আগস্টে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপের পর ২০২০ সালে এ রোগের বাহক এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছিল দুই সিটি করপোরেশন। তখন আগের ওষুধ বদল করে ম্যালাথিয়ন নামে নতুন ওষুধ আনা হয়। এডিস মশার বিরুদ্ধে এই ওষুধ কাজ করেছে বলে মনে করা হয়।

কিন্তু এখন কিউলেক্স মশার উপদ্রবে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম। দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সম্প্রতি অভিযোগ করেন, কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে ম্যালাথিয়ন কাজ করছে না। কিন্তু তার এ দাবির পক্ষে বিশেষজ্ঞদের সমর্থন পাওয়া যায়নি।

জলাবদ্ধ পানিতে মশার বিস্তার। ছবি: নিউজবাংলা

দুই ধরনের মশা নিধনের দুই পদ্ধতি

এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এডিস মশার প্রজননকাল। এ কারণে এপ্রিল মাস থেকে লার্ভা নষ্ট করার মধ্য দিয়ে এডিস মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করতে হয়। অন্যদিকে কিউলেক্স মশার জন্ম হয় শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এর প্রকোপ থাকে। এ জন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এই মশার লার্ভা ধ্বংস করতে হয়। দুটোর ক্ষেত্রেই একই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

বুধবার রাজধানীর পান্থকুঞ্জ এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের জানান, ‘কিউলেক্স নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মতামতের ঘাটতি ছিল। আমাদের বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তারা ঘটনা ঘটে গেলে অনেক বড় বড় পরামর্শ দিতে পারেন, আগে কী করণীয়, সে পরামর্শ আমরা তাদের কাছ থেকে পাই না। আমাদের বলা হয়েছিল, ডেঙ্গু রোধের কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালিয়ে যেতে। সেটা ভুল ছিল। আমাদের শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই কিউলেক্সের বিরুদ্ধে কার্যক্রম নেয়া উচিত ছিল। খালগুলো আরও দুই মাস আগে পেলে তখন কিউলেক্সের ব্যবস্থা আরও আগে নেয়া যেত।’

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ২ জানুয়ারি খালগুলোর দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে পায় দুই সিটি করপোরেশন। এরপর থেকে খালগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খালের পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করে দু্‌ই সিটির মেয়ররা।

কিউলেক্স মশা। ছবি: নিউজবাংলা

বিশেষজ্ঞ কারা

কিউলেক্স মশা নিধনের দায় বিশেষজ্ঞদের ঘাড়ে চাপালেও বিশেষজ্ঞ বলতে ঠিক কাদের বুঝিয়েছেন বক্তব্যে তা পরিষ্কার করেননি দক্ষিণের মেয়র।

কোন বিশেষজ্ঞের মতামত ও পরামর্শের কারণে কিউলেক্স মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হলো, জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘মেয়র মহোদয় কোন বিশেষজ্ঞের কথা বলেছেন, তা আমি ঠিক বলতে পারব না, তবে আমরা ডেঙ্গু মহামারির পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছিল, সেটা ফলো করছিলাম।’

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মশক নিধনের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ কমিটি নেই। তবে একটি কমিটি আছে, মশক কার্যক্রমে ব্যবহৃত কীটনাশক বাছাই কমিটি।

ছয় সদস্যের এ কমিটিতে আছেন দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ, কীটতত্ত্ববিদ ডা. কবিরুল বাশার, কীটনাশক বিশেষজ্ঞ এ কে এম আজাদ, আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রোমানা আখতার পারভীন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডিপিএম ডা. আফসানা আলমগীর খান ও দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী।

দক্ষিণ সিটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ৪ জানুয়ারি কমিটির একটি বৈঠক হয়, সেখানে মশা নিধনে আনা নতুন ওষুধ ডেল্টামেথ্রিনের কার্যক্ষমতা যাচাইয়ে ডোজ নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত ও পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করতে ১১ ফেব্রুয়ারি মেয়রের উপস্থিতিতে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় নেয়া সিদ্ধান্তের একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা।

সেখানে তিনটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়: মশা নিধনের জন্য নতুন ওষুধ ডেল্টামেথ্রিনের কার্যকর ডোজ হবে প্রতি লিটার ডিজেলের সঙ্গে ৮ মি. লি.। প্রতিবছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ক্র্যাশ কর্মসূচি গ্রহণ করা এবং অঞ্চলভিত্তিক কচুরিপানাপূর্ণ জলাশয় নিয়মিত পরিষ্কার করা।

অনুলিপিতে দেখা যায়, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের ক্র্যাশ কর্মসূচির পরামর্শ দিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ডা. কবিরুল বাশার।

আরও আগে না দিয়ে কিউলেক্স মশার জন্য করণীয় নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সভায় কেন পরামর্শ দিলেন জানতে চাইলে করিরুল বাশার বলেন, ‘আমি তো মশক নিধন কীটনাশক বাছাই কমিটির সদস্য, সেখানে আমার কাজ শুধু কীটনাশক নিয়ে পরামর্শ দেয়া। সেই সভায় মেয়র মহোদয়কে সামনে পেয়ে নিজ থেকেই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের কথা বলেছিলাম। তবে মেয়র মহোদয় আমার কাছে পরামর্শ চাইলে আমি সব সময় প্রস্তুত আছি।’

বুধবার দক্ষিণের মেয়র আরও বলেন, ‘এডিস মশার জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার হয়ে থাকে, কিউলেক্সের ওপর তার প্রভাব দেখা যায় না। তাই আমরা নতুন কৌশল হিসেবে কীটনাশকটা পরিবর্তন করেছি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই এর ফলাফল লক্ষ্য করা যাবে।’

নতুন ওষুধ আনার কারণ কী জানতে চাইলে ডা. কবিরুল বাশার বলেন, সভার সিদ্ধান্ত একেবারেই গোপন বিষয় এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গু মহামারি সামাল দিতে দুই সিটি করপোরেশনই ম্যালাথিয়ন নামক ওষুধের ব্যবহার শুরু করে। তবে প্রকৃতিতে এটির নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি বিবেচনায় দক্ষিণ সিটি এবার ডেল্টামেথ্রিন নামে নতুন কীটনাশক এনেছে।

ডিএনসিসির মশা নিধন অভিযান। ফাইল ছবি

মশা নিধনে উত্তর সিটির অবস্থান

কিউলেক্স মশা নিধনের ব্যর্থতার দায় নিতে নারাজ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

উত্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মশক নিধন কর্মসূচি চলমান। আমরা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই কর্মসূচি নিয়েছি, আবার দেশের বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ নিয়ে মার্চের ৮ তারিখ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম সাজানো আছে। এর পরই আপনারা ফল দেখতে পাবেন।’

কর্মসূচি চলমান থাকলে মশা কেন কমে না প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, ঢাকনা খোলার ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের বেশ কিছু রাস্তার পাশের ড্রেনে ওষুধ ছিটানো সম্ভব হয়নি। সেই সাথে আফতাবনগর, বসুন্ধরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ও প্রাতিষ্ঠানিক জোনের মশক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের নিজেদের ওপর বর্তায়। সেসব এলাকায় মশার প্রাদুর্ভাব বেশি। আমরা সেইসব কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছি।’

নানা সময়ে উত্তর সিটি করপোরেশনকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর চৌধুরী। উত্তর সিটির মশক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নামেমাত্র তাদের পরামর্শক। যা বলে আসি কিছুই করে না। আমি ঠিক করেছি ওদের ডাকে আর সাড়া দেব না। প্রতিবার গিয়ে করণীয় ঠিক করে দিয়ে আসি, একটা কাজও ঠিকমতো করে না। মেয়রের আন্তরিকতা আছে, কিন্তু মশক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ কোনো কাজ ঠিকমতো করে না। কিউলেক্স মশা নিয়ে কতবার করে বললাম, যেন খালগুলো কচুরিপানামুক্ত করে। কে শোনে কার কথা? তাদের অবহেলার কারণে নগরবাসীর সাথে আমি ও আমার পরিবারও মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ।’

মশার নাচন। ছবি: নিউজবাংলা

দুই সিটিই কিউলেক্স মশা নিধনে ব্যর্থ কেন

কিউলেক্স মশা নিধনে দুই সিটি ব্যর্থ কেন সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসার পর থেকে মশক নিধন কার্যক্রমের গতি মন্থর হয়েছে দুই সিটিতেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে কিউলেক্স মশার লার্ভা ধ্বংসের কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও মেয়ররা ব্যস্ত ছিলেন ওয়াসা থেকে খালের দায়িত্ব বুঝে নিতে। সে সময় নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেনি দুই সিটির মশক নিধন ডিপার্টমেন্ট।

দুই সিটির একাধিক এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে মশার ওষুধ ছিটানোর কোনো কর্মসূচি তাদের চোখে পড়েনি। মশার উপদ্রব শুরু হলে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা সিটি করপোরেশনে অভিযোগ করার পর মশার ওষুধ ছিটানো ও ফগিংয়ের কাজ শুরু হয়।

মশক নিধন কার্যক্রম এত দেরিতে শুরু হবার কারণ জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘নতুন ওষুধ কেনা ও পরীক্ষায় সময় লেগেছে।’

আর উত্তরের কার্যক্রমকে পুরোটাই গাফিলতি হিসেবে দেখছেন উত্তর সিটির পরামর্শক কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একে তো তারা ঠিকমতো কাজ করে না, তার ওপর ওষুধের ডোজ কম দেয়। ম্যালাথিয়ন বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও কার্যকর মশা মারার ওষুধ। এতে মশা না মরলে কোন ওষুধে মরবে? প্রতি লিটার ডিজেলের ৫ মি.লি. ওষুধ মিশানোর কথা থাকলেও আমি শুনেছি মাঠকর্মীরা ডোজ কম দেয়। তাছাড়া তারা ডিজেল চুরি করে বাজারে বিক্রি করে দেয় বলেও অভিযোগ কানে এসেছে। সিটি করপোরেশনের মনিটরিংয়ের অভাব আছে।’

একই ধরনের অভিযোগ আছে দক্ষিণ সিটির মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধেও। সেই সঙ্গে মাঠকর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে না দুই সিটি করপোরেশন।

কীটতত্ত্ববিদদের মতে, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা ও মশার লার্ভা ধ্বংস করাই হলো যেকোনো মশার বিস্তার রোধে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। কিউলেক্স মশার সবচেয়ে বড় আবাসস্থল হলো খাল-ডোবা-নালার পানি ও ঝোপঝাড়। খালের পানিপ্রবাহ বজায় রাখতে হবে ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখতে হবে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসজুড়ে লার্ভা ধ্বংস করলে সহজেই ফল পাওয়া যায়।

মশা নিধনে ডিএনসিসির ফগিং।

ফগিং নাকি আইওয়াশ?

একাধিক কীটতত্ত্ববিদের মতে, মশা মারতে ফগিং খুবই দুর্বল ও অকার্যকর একটি প্রক্রিয়া। কেননা এটি কেবল উড়ন্ত মশা মারতে ব্যবহার হয়। পরীক্ষার সময় ফগিংয়ের কার্যকারিতা শতকরা ৯০ ভাগের ওপর পাওয়া গেলেও খোলা জায়গায় ফগিংয়ের কার্যকারিতা সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ।

কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা বলেন, পরীক্ষার সময় ছোট বাক্স বা একটি নির্দিষ্ট স্থানে মশা আবদ্ধ করে ফগিং করা হয়। এত মশা পালাতে পারে না, তাই তাদের গায়ে সরাসরি ওষুধ লেগে মারা যায়। কিন্তু খোলা জায়গায় ফগিং করতে গেলে প্রথমেই শব্দ শুনে মশা উড়ে যায়। সেই সঙ্গে খোলা বাতাসে ওষুধ দ্রবীভূত হয়ে ওষুধের ঘনত্ব কমে কার্যকারিতা হারায়।

সব জেনেও দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন বিভাগের কর্মর্তাদের পছন্দের শীর্ষে ফগিং। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কথা হয় মশক নিধনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই সিটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে। তারা বলেন, ফগিং না করলে মানুষ বিশ্বাস করে না মশার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সাধারণদের দেখাতেই এই ফগিং করা হয়।

রাজধানীতে ক্রমেই বাড়ছে মশার বিস্তার। ছবি: নিউজবাংলা

সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে নেই কীটতত্ত্ববিদ

মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিধন কার্যক্রম বছরব্যাপী চালাতে হবে বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদেরা। আর সে জন্য দরকার মশার জাত ও প্রকার জেনে পরিকল্পনা করা। এমন পরিকল্পনা করার কথা কীটতত্ত্ববিদদের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ হয় না বছরের পর বছর।

মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর)। কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার ও মঞ্জুর চৌধুরী আস্থা পান না আইইডিসিআরের মশক সংশিষ্ট গবেষণার উপর। কারণ তাদের জানা মতে, সেখানে কোনো কীটতত্ত্ববিদ নেই। তারা বলেন, মশা নিয়ে গবেষণা করতে হলে আগে মশা চিনতে হবে, আর সেই কাজ কীটতত্ত্ববিদদের।

তবে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ দিয়েই মশাসংক্রান্ত সকল গবেষণা করানো হয়। তবে আইইডিসিআরে কতজন কীটতত্ত্ববিদ কর্মরত আছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তর সিটি করপোরেশনে চারজন কীটতত্ত্ববিদ থাকলেও পদটি একেবারেই শূন্য দক্ষিণে। জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেখেছি।

এ বিভাগের আরো খবর