‘মশা আপনার ভোট যেন খেয়ে না ফেলে, সেটা নিশ্চয় আপনাকে দেখতে হবে। ক্ষুদ্র মশা হলেও অনেক শক্তিশালী এটা মাথায় রাখতে হবে।’
ঢাকার দুই সিটির মেয়রের শপথ শেষে এভাবেই তাদের সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিনটি ছিল ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মেয়র হিসেবে শপথ নিতে আসেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস।
বছর না পেরোতেই উল্টো চিত্র রাজধানীজুড়ে। মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সাধারণ বা ইলেকট্রিক কয়েল, জীবাণুনাশক স্প্রে- সবকিছুই হার মেনেছে এই মশার কাছে। মশা নিধনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না দেখে, নগরবাসী নিজেদের বিরক্তি, অসহায়ত্ব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফেসবুককে।
ফেসবুকে নিজের ওয়ালে গণমাধ্যমকর্মী সামদানী নাজুম লিখেছেন, ‘ঢাকার দুই মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- মশা তো আপনাদের ভোট খেয়ে ফেলছে, খবর রাখছেন কি?”
‘কপাল চাপড়াইলে মশা মরে!’- বলে নিজের ফেসবুকে এভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা ফারহা।
ফেসবুক ঘাঁটতে গিয়ে চোখে আটকে যায় এক ছবিতে। সেখানে দেখা যায়, ফুটপাতের ধারে নিজের পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন এক বিক্রেতা। কিন্তু মশার অসহ্য উৎপাত। তাই মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পা জোড়া মুড়িয়ে রেখেছেন পলিথিন দিয়ে।
সেই ছবি পোস্ট করেছেন গণমাধ্যমকর্মী নূর সিদ্দিকী। ছন্দে লিখেছেন, ‘তার পায়ে পলিথিনের মোজা/ মশা কামড়ায় ব্যাপারটা সোজা।’
সেই ছবিতে কমেন্ট করেছেন অনেকে। তাদের একজন লিখেছেন, ‘মশাদের দিন শেষ, পলিথিনের বাংলাদেশ।’
বিদ্রূপের সুরে রম্য লেখক খায়রুল বাবুই লিখেছেন, ‘মশা টিকে থাক, হেসে-খেলে/ লেখক মরে যাক, রুদ্ধ জেলে!’
আধো ডায়েরি নামের একটি পেজ থেকে, মশা থেকে বাঁচার নিঞ্জা টেকনিক শিরোনামে একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সেই ছবিতে দেখা যায়, বাড়ির প্রতিটি দরজা-জানালায় মশারি টানানো।
বেঙ্গল বিটস পেজে নগরীতে মশার উৎপাত নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, মশারা আমার রুমে!’
জনপ্রিয় সংবাদ পাঠক ফারাবী হাফিজ লিখেছেন, ‘গত কুড়ি বছরে এমন নির্লজ্জ, নির্মম, নির্ভয় মশা দেখি নাই! স্ট্যাটাস দেবার পর আরও দৌড়ের উপরে আছি। বাথরুম থেকে বেডরুম- কোথাও ১ মিনিট বসা যাচ্ছে না! এমন কোনো জায়গা বাদ দিচ্ছে না বেহায়ারা! ঘরের মধ্যে কেবলই মরদেহ!
বিরক্ত হয়ে গাড়িতে বসে দেখি সেখানেও লাখ খানেক! এই সুযোগে খিচ্চা একটা টান মেরে ঢাকা উত্তর থেকে দক্ষিণে ছেড়ে দিয়ে আসলাম! তারপর থেকে মনে হচ্ছে ওদের টার্গেটে পড়ে গেছি!
মাননীয় মেয়র,
সত্যিই অসহায় লাগছে!’
ফারাবির মতো অসহায়ত্ব আর ক্ষুব্ধ আরও অনেক নগরবাসী। ফারাবির লেখা পড়েই কাজী সোহান নামের একজন বলেই ফেললেন, ‘টেনশন করবেন না ব্রাদার, আজকে একটা নিউজ দেখলাম! মশা তাড়াতে ড্রোন ব্যবহার করবে ডিএনসিসি, তাহলে তো বাজেট আরও বাড়বে মশা তাড়াতে! আমার মতে এত কিছুর দরকার নেই, একটা কামান ব্যবহার করলেই ভালো হয়।’
রুবাইয়্যাত বিনতে ঐশী নামে ফারাবির আরেক ফলোয়ার লিখেছেন, ‘শুধু আপনি কেন ভাইয়া, আমরা পুরো দেশবাসী মনে হয় মশার কাছে বড় একটা উইকেটের ব্যবধানে লুজার হব, তাদের এত ক্ষমতা…’
আর তারেক মুনশী লিখেছেন, ‘বিমানবন্দরে একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। সেখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মশার যাতায়াত থাকে। তারা সব সময় খুব ব্যস্ত থাকে। কামড়ানোর অত সময় নাই তাদের কাছে।’
জাফরি জাহান জেরি নামে ফেসবুকার লিখেছেন, ‘তাদের (মশা) ঘরবাড়িতে আমাদের বসবাস হলে যা হয় আর কী… রক্ত দিয়ে থাকি।’
আর অ্যাঞ্জেল জান্নাত মনে করছেন, ‘আমার শহরটা আর আমার নেই, মশা তার ১৪ গোষ্ঠী এনে বিস্তার শুরু করেছে।’
মশার উৎপাতে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশঙ্কিত। পেশায় ব্যাংকার আতিয়া আমজাদ নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আচ্ছা এই মশার বাম্পার ফলনে এখন তো দেখছি দিনের বেলায়ও রাতের চাইতেও বেশি মশা, বাচ্চারা স্থিরভাবে ক্লাসও করতে পারছে না, মশার দল একদম জেঁকে ধরতেসে। মিরপুর এই এ রকম নাকি সমগ্র ঢাকায়!! এর থেকে কি কোনোভাবেই নিস্তার নাই? কোনো টোটকা বা হোম রেমেডি??? এমন কিছু যেটা অব্যর্থ! জীবনটা শেষ করে দিল ভাই! বাঁচান!’
মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য একটা টোটকাও দিয়েছেন তিনি। টোটকা হিসেবে একটা ছবি পোস্ট করেন আতিয়া। দেখা গেছে, এক ফালি লেবুর মধ্যে বেশ কিছু লবঙ্গ গুঁজে রাখা। ফেসবুকে ঘুরে এই টোটকা আরও পাওয়া গেল। অনেকেই দাবি করেছেন, কাটা লেবুর মধ্যে লবঙ্গ গুঁজে ঘরের কোণে রেখে দিলে মশার গান আর শোনা লাগবে না। তবে এই টোটকা কতটা কার্যকর সে বিষয়ে ফেসবুকে কোনো সদুত্তর মেলেনি।
আতিয়া টোটকা দিয়ে বলেছেন, ‘করলাম আপাতত। দেখি কোনো লাভ হয় কি না।’
তবে এই টোটকা কতটা উপকারে আসে সেই বিষয়ে অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছেন। লিখেছেন কাজে দিলে জানাতে।