মাঠজুড়ে সবুজ গাছে মাথা উঁচু করে হাসছে অসংখ্য সূর্যমুখী। মধু আহরণে ফুলে ফুলে বসছে মৌমাছি। এক ফুল থেকে উড়ে যাচ্ছে অন্যটিতে।
এমন দৃশ্য দেখা যায় কুমিল্লার তিতাস উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে।
সেখানে কৃষক ওয়ালিদ সরকার তার প্রায় ৭৭ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো।
তার বড় ছেলে ওমর ফারুক টুটুল সম্প্রতি কৃষিতে ডিপ্লোমা শেষ করেছেন। ছেলের আগ্রহেই প্রথমবারের মতো তিনি চাষ করছেন সূর্যমুখী।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার পোলায় কৃষি ডিপ্লোমা করছে। হে কৃষি ভালো বোঝে। কিন্তু সূর্যমুখী কেমনে লাগাতে হয় আমি জানতাম না। এইডা (সূর্যমুখী) আগে কেউ আমডার এলাকায় লাগাইছেও না।
‘পরথম ডরাইছি। যদি মাইর খাই। এহন ভালো ফলন হইছে। মনে সাহস পাইছি। আইয়ে বছর আরও বেশি কইরা সূর্যমুখী লাগাম।’
ওমর ফারুক টুটুল তার বাবার কাছে সূর্যমুখী চাষ করার কথা বললে তিনি প্রথমে রাজি হননি। পরে ছেলের অতি আগ্রহে মনে সংশয় নিয়ে গত ডিসেম্বরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেন। এখন বাবা-ছেলে আশা করছেন, মার্চের শেষ সপ্তাহে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
টুটুল জানান, তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে গিয়ে জেনেছেন বাংলাদেশের আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত। ৯০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায়। আর স্থানীয়ভাবে সূর্যমুখীর তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সূর্যমুখী চাষ করতে কী কী বাধা পেয়েছেন, এমন প্রশ্নে টুটুল বলেন, এটা চাষ করা খুব সহজ। এটা উঁচু জমিতে হয় বলে পানি জমে না। তবে গাছগুলোতে ছোট অবস্থায় পোকার আক্রমণ ঘটে। তখন কীটনাশক ব্যবহার করলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
ওয়ালিদ সরকার আরও জানান, তিনি সব মিলিয়ে বিনিয়োগ করেছেন ২১ হাজার টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে সূর্যমুখীর তেল বিক্রি করে লাখ টাকার বেশি লাভ হবে।
ফুল দেখতে মানুষ ভিড় করছে তার জমিতে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘পরথম পরথম সূর্যমুখী লাগাইছি। ফুল আওনের পরে ক্ষেতে সকাল-বিহাল মানুষ আইয়ে। ফুল দেহে। ছবি তোলে। এইডা ভালো লাগে।
‘তবে গত বৃহস্পতিবার রাইতে কেডা জানি দাও দিয়া সূর্যমুখীর গাছ কাইট্টলাইছে। এইডা মনে কষ্ট দিছে। তাই এহন নিয়ম কইরা পাহারা দিই।’
শুক্রবার বিকেলে তার বাগানে দর্শনার্থীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে। কেউ কেউ ফুলের সঙ্গে সেলফি তোলেন।
সূর্যমুখী খেতে দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি: নিউজবাংলামাছিমপুর এলাকার তরুণী তনিমা দত্ত তার ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে সূর্যমুখী বাগান দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এই সূর্যমুখীর কারণে মাছিমপুরে এখন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। আমরাও এসেছি। চমৎকার সময় কাটিয়েছি।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপপরিচালক শহিদুল হক বলেন, ‘প্রথমবারের মতো কুমিল্লা জেলায় ১২৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সে লক্ষ্য কৃষকদের সার, বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষকদের চাষাবাদে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’