বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে’

  •    
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২২:৩৯

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনায় মুখর লেখক, কবি, শিল্পী সাংবাদিকেরা। তারা বলছেন, একটা মানুষ কবিতার জন্য, লেখার জন্য, কার্টুন আঁকার জন্য গ্রেপ্তার হতে পারেন না, এমন কোনো আইন থাকতে পারে না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে ঘিরে আলোচিত এই আইনটি আবার চলে এসেছে মনোযোগের কেন্দ্রে। লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও আইনজীবীসহ নানা শ্রেণির মানুষ বলছেন, এই আইনের কিছু ধারা নিবর্তনমূলক। তারা এটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানুষের কণ্ঠরোধ করছে, মতপ্রকাশের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সংবিধান স্বীকৃত যে অধিকার, সেই অধিকার চর্চা করার মতো কোনো পথ থাকছে না।’

লেখক মুশতাকের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এটা খুব হতাশাজনক যে স্রেফ লেখালেখির কারণে মুশতাক দশ মাস ধরে জেলে আটক থাকলেন এবং সেখানেই মারা গেলেন।’

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক মনে করেন, এই আইন তৈরি করা হয়েছে সরকারে দুর্নীতি ঢাকতে ও মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই আইন কমপ্লিটলি তৈরি করা হয়েছে নিবর্তনমূলক ব্যবহারের কু-উদ্দেশ্য নিয়ে এবং সরকার সেই কু-উদ্দেশ্যটাই এখানে চরিতার্থ করছে। এই আইনটা মূলত যে কারণে প্রয়োজন ছিল, সেই প্রয়োজনে এটার ব্যবহার কম হয়।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি সরকার করছে, অপশাসনের যে ঘটনাগুলো আছে, এই অপশাসন যাতে সোশ্যাল মিডিয়াতে না আসতে পারে, মানুষ যাতে সংগঠিত হয়ে এটার প্রতিবাদ করতে না পারে, এই উদ্দেশ্যে এটা ব্যবহার করা হচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরির করা হয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করার এবং দুর্নীতি ও লুটপাটকারীদের নিরাপত্তার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘এই আইন শুধু আমার বলার যে স্বাধীনতা রোধ সেটা না, এটা মূলত যারা এদেশে দুর্নীতি করবে, লুটপাট করবে, হত্যা করবে, গুম করবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। এর সঙ্গে আমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নাই।’

লেখক মুশতাকের মৃত্যুতে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘একটা মানুষের, একটা নাগরিকের স্বাভাবিক অধিকার, মৌলিক অধিকার তার ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন। সেটা রোধ করতে গিয়ে হত্যা করে ফেলা, এটা তো একরকম হত্যাকাণ্ডই।’

তিনি বলেন, ‘শুধু এই আইন বাতিল করলে হবে না, আমাদের যে সরকার ব্যবস্থা আমাদের যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা, এটার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ এর আগে যে সরকার ছিল, তারা র‍্যাব তৈরি করে ক্রসফায়ারে মেরেছে। সেই ধারাবাহিকতাই তো আছে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান স্যাটায়ার পোর্টাল ‘ইয়ারকি’-এর কর্ণধার সিমু নাসের।

তিনি বলেন, ‘কোনো স্বাধীন দেশে একটা মানুষ কবিতার জন্য, লেখার জন্য, কার্টুন আঁকার জন্য গ্রেপ্তার হতে পারে না, এমন কোনো আইন থাকতে পারে না। একটা বিষয় আমরা দেখেছি, সরকারের সমালোচনা করলেই, দুর্নীতির সমালোচনা করলেই রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে দেখা হচ্ছে। একটা স্বাধীন দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা, সরকারের সমালোচনা করার অধিকার থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এই আইন আমরা বাতিল চাই। এইরকম একটা বাজে আইনে আমরা কেন আটকে থাকব। সেই সঙ্গে বলব, একটা মানুষ আটক হলে তারা কেন জামিন পাবে না, চিকিৎসা পাবে না, অন্যায়ভাবে কেন তাদের নির্যাতন করা হবে? আমরা জানি কার্টুনিস্ট কিশোর অসুস্থ, তার কোনো চিকিৎসা হয় না। অন্যায়ভাবে তাকে অত্যাচার করা হচ্ছে।’

এই আইন প্রবর্তনের শুরু থেকেই তা বাতিলে দাবি জানিয়ে আসছেন বলে জানান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলেই আসছি এই ডিজিটাল আইন বাতিলের কথা। কোনোভাবে লেখালেখির কারণে কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায় না। এই আইন বাতিলের জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। সাংবাদিক ইউনিয়ন যেহেতু সাংবাদিকদের জন্য কাজ করে, সেটাকে মাথায় রেখে আমরা এও বলেছি, যদি লেখালেখির স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে তারা লিখবে কীভাবে।’

ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাকের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও বলছি, যে আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে, তা বাতিল করতে হবে।’

এই আইন সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিরাপত্তা দেয় আর প্রগতিশীল লোকদের মুখ বন্ধ করার জন্যই তৈরি বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে পরিস্থিতি এত জটিল হয়ে উঠেছে, একদিকে যদি পুরোপুরি ছেড়ে দেন, তাহলে একরকম দাঁড়ায়, আবার যদি পুরোপুরি আটকান তাহলেও মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে একজন অভিযোগ করলো আপনি যদি সাম্প্রদায়িক লোকের বিরুদ্ধে কিছু বলেন আপনাকে পুলিশ ধরছে, আইন ধরছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক লোকেরা যখন প্রগতিশীল লোকদের বিরুদ্ধে বলছে, যা খুশি তাই বলছে, তখন তাদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উদাসীন। মনে হয় যেন ওরা তাদের দলেরই লোক। এটা হচ্ছে আসলে সমস্যাটা। আমাদের প্রগতিশীলদের মুখ বন্ধ করে প্রতিক্রিয়াশীলদের মুখ খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

এই আইন নিয়ে অনেক লেখকই মনে মনে শঙ্কিত বলে মনে জানান কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সুমন রহমান।

তিনি বলেন, ‘লেখক হিসেবে এই ধরনের একটা আইন নিয়ে আমি খুবই শঙ্কিত। এই ধরনের একটা আইন থাকলে লেখার যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা তো খর্ব হয়। তখন আমি নিজে থেকেই সেন্সরশিপের মধ্যে থেকে যাব। তাতে যেটা হবে বা হচ্ছে আমি অনেক বিষয়ে প্রতিবাদ করতে চাইব না, অনেক বিষয় আমি তুলে আনতে চাইব না। এটা লেখালেখির জন্য ভালো পরিবেশ না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দরকার একটা সুস্থ পরিবেশ, যেখানে আমার চিন্তার স্বাধীনতা আমি প্রয়োগ করতে পারি। আমি মনে করি, এই সরকার এই ধরনের একটা নিবর্তনমূলক আইন পুনর্বিবেচনা করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর